শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চায় আজহার মাহমুদ

প্রশাসনের সমন্বয় এবং জনসাধারণের সচেতনতা দুটোই জরুরি। তবে জনসাধারণকে সচেতন করাটাও প্রশাসনের দায়িত্বে পড়ে। তাই প্রশাসনকে এসব বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। জলাবদ্ধতা বিষয়টাকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চায়।
নতুনধারা
  ১৬ জুন ২০২১, ০০:০০

ক্যালেন্ডারের হিসাবে এখনো বর্ষা আসেনি। প্রকৃতি এখন তার নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করে। প্রকৃতি এখন আর কাগজ-কলমে সীমাবদ্ধ নয়। তবে বর্ষা আসে প্রতি বছর। আর যখন আসে তখন সব কিছুই বর্ষার পানিতে ভাসে। এতে সাধারণ মানুষ যতটা স্বস্তি পায় তার চেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে। প্রতি বছরই বর্ষার পানিতে সড়ক, গলি, ঘরবাড়ি ডুবে যায়। কিন্তু এর সমাধান কোনো বছরই হয় না। জলাবদ্ধতার এই সমস্যা থেকে চট্টগ্রামবাসী কবে মুক্তি পাবে সেটা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন!

কয়েকদিন আগেও টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামের বেশির ভাগ এলাকা পস্নাবিত হয়ে যায়। প্রতি বছরই এই একই সমস্যায় পড়তে হয় চট্টগ্রামবাসীর। এই সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশন, সিডিএসহ বিভিন্ন দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীনতার কারণে চট্টগ্রামবাসী প্রতি বছরই এই সমস্যায় পড়েন।

এটা তো শুধু সিটির ভেতরে সমস্যা। সিটির বাইরের সমস্যাগুলো কে দেখবে? সিটির ভেতরের দায় না হয় সিটি করপোরেশন, সিডিএসহ বিভিন্ন প্রশাসনের ওপর চাপিয়ে দিলাম। কিন্তু সিটির বাইরের অংশ নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। অথচ সিটির বাইরে আরও নাজুক অবস্থা। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডু উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড়ের বেহাল অবস্থা দেখার কেউ নেই। একদিনের বৃষ্টিতে ওই ওয়ার্ড়ের জন-সাধারণের ভোগান্তি ছিল চোখে পড়ার মতো। পানিতে শুধু রাস্তা-ঘাট তলিয়ে যায়নি, সেই সঙ্গে রাস্তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। যা পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ কারও কোনো তদারকি নেই। এ নিয়ে জনমনে ক্ষোভও রয়েছে প্রচুর।

এভাবে পুরো চট্টগ্রামের বেশির ভাগ জায়গায় বর্ষায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে পড়তে হয়। নগরবাসী জলাবদ্ধতার এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে চায়। জলাবদ্ধতা এবং বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হলো, অথচ সেটার কোনো সুফল চট্টগ্রামের নাগরিকরা পেল না। সেই আগের অবস্থায় আছে চট্টগ্রাম। অল্প বৃষ্টিতেই চট্টগ্রামের রাস্তা সাগরে পরিণত হয়ে যায়।

এটা এখন জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এই সমস্যার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের রয়েছে বেশ কিছু দায়বদ্ধতা। যা আমরা সব সময় এড়িয়ে যাই। আমরা দেখেছি এই বৃষ্টিতেও আমাদের ড্রেন, খাল, নালা এসব ময়লায় জ্যাম হয়ে যায়। নালায় দেখা যায় কাগজ, পলথিন, পস্নাস্টিকের বোতল, ডিমের খোসা, ফলমূলের উচ্ছিষ্টসহ বিভিন্ন ধরনের ময়লা। এসব আবর্জনা নিশ্চয়ই প্রশাসনের মানুষ কিংবা সিটি করপোরেশনের কেউ এসে ফেলে যায়নি? এই যে আমরা নিজেদের ক্ষতি নিজেরা করছি এর দায় আবার অন্যের ওপর কেন চাপিয়ে দিতে চাই? এই স্বভাব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের শহরকে পস্নাস্টিক মুক্ত করতে আমাদেরই সোচ্চার হতে হবে। আমাদের ড্রেন-নালা কিংবা খাল আমাদেরই পরিষ্কার রাখতে হবে। মানলাম আপনি পরিষ্কার করতে পারবেন না, কিন্তু আপনি ময়লা কেন করবেন? কেন নালায় আপনি পস্নাস্টিকের বোতল, ঘরের আবর্জনা ফেলবেন? দেখা যায় বৃষ্টিতে রাস্তায় যেসব আবর্জনা আছে সেগুলোও নালায় গিয়ে পড়ে। তাই সড়ক ও নালা এসব পরিষ্কার রাখতে হবে আমাদেরই। আমাদের রাস্তা আসলে ইউরোপের রাস্তার মতো হলেও জলাবদ্ধতা হবে। কারণ আমাদের মানসিকতা এখনো ইউরোপ আমেরিকার মতো হয়নি। এর জন্য যেটা সবচেয়ে বেশি দায়ী সেটা হচ্ছে সচেতনতার অভাব।

সাধারণ মানুষের এই সচেতনতার অভাব থাকাটার দায় কিছুটা প্রশাসনের উপরেও পড়ে। প্রশাসনের দায়িত্ব জনগণকে সচেতন করা। আমাদের ভেতর যদি সচেতনা তৈরি হয়, আমরা ৩০ শতাংশ মানুষও যদি সু-নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারি তাহলে যারা অসচেতন তারাদেরও আমাদের দলে নিয়ে আসতে পারব। আমরা যদি পরিবেশ নোংরা করলেই প্রতিবাদ করি, সঙ্গে সঙ্গে সেটার বিরুদ্ধে অবস্থান করি তাহলে অবশ্যই অবশ্যই এর মাত্রা কমে আসবে।

বাস্তবতা হচ্ছে আমরা পরিবেশকে যে পরিমাণ আবর্জনা দিই, এই বর্ষাকালে পরিবেশ সেটা আমাদের ফিরিয়ে দেয় জলাবদ্ধতার রূপ দিয়ে এবং এই ফিরিয়ে দেওয়ার ধরনটা বেশ মারাত্মক। তাই এই জলাবদ্ধতার দায় শুধু প্রশাসনের ওপর দেওয়া যায় না। এই দায় আমাদেরও আছে।

সর্বোপরি বলতে চাই,

প্রশাসনের সমন্বয় এবং জনসাধারণের সচেতনতা দুটোই জরুরি। তবে জনসাধারণকে সচেতন করাটাও প্রশাসনের দায়িত্বে পড়ে। তাই প্রশাসনকে এসব বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। জলাবদ্ধতা বিষয়টাকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই ভোগান্তি থেকে সাধারণ মানুষ মুক্তি চায়।

আজহার মাহমুদ : প্রাবন্ধিক এবং কলাম লেখক

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে