ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে

প্রকাশ | ১৬ জুন ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাকালে দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ সময়ে ঝরে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। নতুন বছরে সন্তানদের ভর্তি করাতে গিয়ে একদিকে গত বছরের মার্চ থেকে বকেয়া টিউশন ফি, অন্যদিকে নতুন শ্রেণিতে ভর্তিসহ বড় অঙ্কের আর্থিক চাপে পড়তে হয়েছে অভিভাবকদের। অন্যদিকে কারোনায় অনেক অভিভাবকের আয় কমে যাওয়া, আর্থিক ক্ষতির মধ্যে থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এতে টিউশন ও ভর্তি ফি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন অভিভাবকরা। ফলে ভর্তি বাতিল হওয়ায় ঝরে পড়ছে অনেক শিক্ষার্থীই। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানবিক হওয়ার আহ্বান জানালেও সে কথা শুনছে না কেউ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, অর্থ না নিলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। এদিকে আর্থিক সংকটের কারণে অনেক অভিভাবকই তাদের সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারেননি। পুরনো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইলে ফোন করে ভর্তির জন্য অনুরোধ জানালেও তাতে তেমন একটা সাড়া মিলেনি। এটা সত্য করোনার কারণে অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন। পুঁজি হারিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী অভিভাবক। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি থাকলেও অনেকের বেতন কমেছে। অনেকে চাকরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন। ফলে অভিভাবকরা আর্থিক কষ্টে আছেন। এ কারণে বকেয়া পরিশোধ করে স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে পারেননি। গত বছরের ৯ মাসের টিউশন ফি মওকুফ বা অর্ধেক করে দিলেও অভিভাবকরা তার সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে আগ্রহী হতেন। কিন্তু সে উদ্যোগ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেননি। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতির মতে, করোনার কারণে অভিভাবকরা ৯ মাস টিউশন ফি দিতে পারেনি। এ কারণে অভিভাবকরা ভর্তি করাতে আসেনি। কোনো কোনো অভিভাবক গত বছরের পুরো টিউশন ফি মওকুফের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন-ভাতার বিষয়টি বিবেচনায় এনে এটা সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনা পরিস্থিতি আরও অবনতি হওয়ায় এবং দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে আংশিকভাবে কঠোর লকডাউন কার্যকর থাকায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে পরামর্শক্রমে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটির মেয়াদ আরেক দফায় ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। সরকার কয়েক দফা পরিকল্পনা করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দফায় দফায় ছুটি বাড়ছে। ফলে করোনাকালে দেশের শিক্ষা পরিস্থিতি সুখকর নয়। করোনার কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশে শিক্ষা সংকট চলছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় দারুণভাবে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে সেশনজট, পরীক্ষা, ল্যাব ক্লাস, চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া, অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ ব্যাপক হারে বেড়েছে। এতে শিক্ষার্থীরা ভুগছেন পরিচয় সংকটে। ঘটেছে কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনাও। আর ঝরে পড়ার বিষয়টি তো রয়েছেই। বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করতে না পারলে, তা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত। সঙ্গত কারণেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।