কার্যকর পদক্ষেপ নিন

করোনায় কর্মহীন মানুষ

প্রকাশ | ১৯ জুন ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার কারণে কর্মহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু দেশ থেকে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। কোটি কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বাড়বে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে ৬২ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই কাজ হারিয়েছেন গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে। কাজ হারানোর বেশির ভাগ মানুষই নতুন করে কর্মসংস্থানে ফিরে এসেছেন। কিন্তু এরপরও আয় কমে গেছে। সেই সঙ্গে কমেছে কর্মঘণ্টা। আয় কমে যাওয়ায় ৫২ শতাংশ মানুষ খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। আবার অনেকের ঋণ বেড়েছে। কেউ কেউ সম্পদ বিক্রি করে দিয়েছেন। ৬২ শতাংশ মানুষ কখনো না কখনো কর্ম হারিয়েছেন। তবে সবাই একই সময়ে হারাননি। বেশির ভাগ মানুষ গত বছরের এপ্রিল-মে মাসে কাজ হারিয়েছেন, যখন সাধারণ ছুটি বা লকডাউন চলছিল। যারা চাকরি হারিয়েছেন, তাদের প্রায় ৮৫ শতাংশ এক মাসের বেশি সময় কর্মহীন ছিলেন। এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। এমন পরিস্থিতি কোনোভাবেই সুখকর নয়। কোভিড-১৯ এর প্রভাব কাটাতে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন অর্থনৈতিকভাবে টেকসই নয়। এতে যেমন দারিদ্র্যের হার বেড়েছে, অন্যদিকে কোভিডের আগেই যারা দরিদ্র ছিলেন, তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে বলে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে এই ক্ষতি পূরণ করা যাবে না। বরাদ্দ বাড়িয়েও লাভ হবে না, কারণ এই ভাতা ও সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল মানুষ বাছাই করার প্রবণতা আছে দেশে। ফলে যাদের দরকার, তাদের অনেকেই তালিকায় ঢুকতেই পারেন না। অভিযোগ রয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ভাতা বিতরণে অদরিদ্র ও সচ্ছল মানুষের সংখ্যা ৩০ শতাংশ, খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে সেটা ৩২ শতাংশ, মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে ৪৪ শতাংশ, বৃত্তির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ। কোভিডের অভিঘাতে দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের হার কমে যাবে। এর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা অর্জন করা কঠিন হয়ে যাবে। পাশাপাশি সরকারকে আরও সমতাভিত্তিক মডেল অনুসরণ করতে হবে। আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। সাময়িকভাবে প্রণোদনা দিয়ে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না। অবাক ব্যাপার, করোনায় যেমন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, পাশাপাশি বেড়েছে কোটিপতির সংখ্যা। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, নানা সংকটের মধ্যেও দেশে বাড়ছে কোটিপতি আমানতকারীর হিসাব। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন একাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩ হাজার ৮৩৯টি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ তথ্য উঠে এসেছে। এর ফলে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, দেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য অনেক বেড়েছে। এই বৈষম্য যত তীব্র হবে তত দরিদ্রের সংখ্যা বাড়বে। সরকারের পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগই কেবল পারে বিদ্যমান সংকটের যৌক্তিক সমাধান দিতে।