খাদ্যশস্য উৎপাদন

এগিয়ে যাচ্ছে দেশ

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। মূলত মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে এ দেশে চাষাবাদ হয়ে আসলেও সেই পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে কৃষিতে আধুনিকায়নের ছেঁায়া লেগেছে। এ ছাড়া উন্নতমানের বীজ, সার এবং সেচ বাংলাদেশের কৃষির অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। ১৭ বছর আগেও যেখানে বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে ঘাটতি ছিল এবং ঘাটতি মেটাতে আমদানির ওপর নিভর্র করতে হতোÑ সেখান থেকে ২০০৮-০৯ অথর্বছর থেকে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন হতে থাকে। আর ২০১৫-১৬-তে সবাির্ধক ৩ কোটি ৮৪ লাখ টন উৎপাদন হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, কৃষিসচিব বলেছেন যে, সরকারের নানামুখী বিনিয়োগের কারণে কৃষক শুধু তার খাওয়ার জন্যই এখন খাদ্যশস্য উৎপাদন করছে না, বাণিজ্যিকভাবেও তারা খাদ্যশস্য উৎপাদনে গেছে। আর এভাবে খাদ্যের উৎপাদন বেড়েছে। এ ছাড়া এমন বিষয়ও সামনে এসেছে যে, সরকার কৃষিতে বিভিন্নভাবে বিনিয়োগ করেছে। সারে ভতুির্ক, প্রণোদনা- নানাভাবে কৃষিতে বিনিয়োগ হচ্ছে। এর পাশাপাশি নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণের কারণেই উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে উৎপাদনকে অগ্রগতির ধারায় এগিয়ে নিতে সবার্ত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখতে হবে। উল্লেখ্য, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০১-০২ অথর্বছরে মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন হয় দুই কোটি ৫৯ লাখ ৭০ হাজার টন। ওই বছর খাদ্যশস্যের মোট চাহিদা ছিল দুই কোটি ৭০ লাখ ৪৫ হাজার টন। ঘাটতি ছিল ১০ লাখ ৭৫ হাজার টন। এর পরের অথর্বছরে খাদ্য ঘাটতি কিছুটা কম হয়। ২০০৩-০৪ অথর্বছরে খাদ্যশস্যের ঘাটতি আরও কমে আসে। এর পরের বছর খাদ্য উৎপাদন কমে যায়। এতে খাদ্যশস্যের ঘাটতির পরিমাণ ঊধ্বর্মুখী হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৫-০৬ অথর্বছরে বধির্ত চাহিদার কারণে ঘাটতির পরিমাণ এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়। পরের বছর মোট খাদ্যশস্যের উৎপাদন ছিল দুই কোটি ৮৯ লাখ ৫৪ হাজার টন। সারাদেশে চাহিদা ছিল তিন কোটি তিন লাখ ৫৯ হাজার। খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ কমে হয় ১৪ লাখ পঁাচ হাজার টনে। ২০০৭-০৮ অথর্বছরে খাদ্যশস্যের উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদার পরিমাণও বাড়ে। এর পরের বছর থেকে উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন হয় দেশে। তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯-১০ অথর্বছরে খাদ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ বেড়ে দঁাড়ায় ছয় লাখ ৩৯ হাজার টন। ২০১০-১১ অথর্বছর অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ২০ লাখ ৪৫ হাজার টনে উন্নীত হয়। ২০১১-১২ অথর্বছরে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৩৯ হাজার টন চাল, গম ও ভুট্টা উৎপাদিত হয়। ২০১২-১৩ অথর্বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ তিন কোটি ৭২ লাখ ৬৬ হাজার টন এবং ২০১৩-১৪ অথর্বছরে খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ৭৭ লাখ ৮২ হাজার টন। ওই দুই বছরে খাদ্যশস্যের চাহিদার পরিমাণ দেখানো হয় সাড়ে তিন কোটি টনের মতো। ২০১৪-১৫ অথর্বছরে দেশে মোট উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৬০ লাখ ৫৮ হাজার টন। ওই অথর্বছরে দেশে খাদ্যশস্যের চাহিদা ছিল তিন কোটি ৫৮ লাখ ২০ হাজার টন। এরপর ২০১৫-১৬ অথর্বছরে দেশে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় তিন কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার টন। ২০১৬-১৭ অথর্বছরে তিন কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার টন চাল, গম ও ভুট্টা উৎপাদিত হয়েছে। এই দুই অথর্বছরেও চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত উৎপাদন হয়েছিল দেশে। আমরা বলতে চাই যে, খাদ্যশস্য উৎপাদনের যে চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে তা ইতিবাচক। এখন অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে কাযর্কর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া আমলে নেয়া দরকার গম উৎপাদনে এখনো পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। যদিও কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকৃতিগতভাবে বাংলাদেশের আবহাওয়া গম উৎপাদনের অনুক‚লে নয়। তবু এই বিষয়টি আমলে নিতে হবে। আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, কৃষককে কৃষি পেশায় ধরে রাখা যাচ্ছে না এমন বিষয়ও সামনে এসেছে। সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে, কৃষি থেকে দুই শতাংশ হারে কৃষক কমছে। যদিও কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ ৬৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। মনে রাখতে হবে যে, কৃষিতে কৃষককে ধরে রাখতে না পারলে বিপদ। ফলে এ খাতে কৃষককে ধরে রাখতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।