দুগার্পূজা : সংহতি ও শক্তির আরাধনা নিমাই

দুগার্পূজার মধ্যে সমাজ উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণকর চিন্তা নিহিত আছে। মহাষ্টমীতে দেবীর মহাস্নানের উপাচারের তাৎপযর্ অনুধাবন করলে উক্ত বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা যায়, যব, গম, মুগ, তিল, ধান্য এই পঞ্চশস্যের জলে দেবীর স্নানের মহিমার মধ্যে কৃষির উন্নতি চিন্তা নিহিত আছে।

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

কৃষ্ণ সেন
সনাতন ধমের্ যত পূজা পাবর্ণাদি আছে দুগার্পূজার মতো এত সাড়া জাগানো পূজা অন্য কোনো পূজায় নেই। যা ত্রেতা যুগে শ্রী রামচন্দ্র কতৃর্ক দেয়া অশ্বমেধ যজ্ঞের সমতুল্য। এই বঙ্গে প্রতিমায় দুগার্পূজার প্রচলন করেন রাজা কংস নারায়ণ, রাজশাহীর তাহিরপুর জেলায় ১৫৮০ খ্রি.। আর এই পূজার বিধান দিতে এগিয়ে আসেন পÐিত রমেশ শাস্ত্রী। বহু পঁাজি পঁুথি দেখে আশ্বিন মাসের শুল্ক পক্ষে পঞ্চমী তীথিতে এই পূজার দিনক্ষণ নিধার্রণ করেন। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলিÑ চার যুগে এক কল্প, এই কল্প শেষে পৃথিবী ধ্বংস হয়, আবার সৃষ্টি হয়, সৃষ্টির প্রারাম্ভ থেকেই দেবী দুগার্ পূজিতা হয়ে আসছে। যুগে যুগে দুগার্ ও দুগার্পূজা, সত্য যুগে দেবাসুর-যুদ্ধে দেবগণের সমবেত তেজ হতে দেবি দুগার্ আবিভ‚র্ত হন, এবং এই মূতির্ মতি সংহতি শক্তির কাছে বিরাট দানব শক্তির পরাজয় ঘটে। দেবীপূজা প্রকৃত পক্ষে মাতৃভাবে সংহতি শক্তির আরাধনা। মেধা ঋষির উপদেশে রাজা সুরথ আর সমাধি বৈশ্য সবর্প্রথম পৃথিবীতে জগন্মাতা দুগার্ দেবীর পূজা প্রচলন করেন। ত্রেতা যুগে কৃতির্বাস রচিত রামায়ণে উল্লখ আছে শ্রী রাম চন্দ্র রাক্ষস রাজ রাবণ বধের সংকল্প নিয়ে শরৎকালে মহাশক্তি দায়িনি দুগার্ দেবীর পূজা করেন। যা অকাল বোধন শারদীয় দুগার্পূজা বলে কথিত আছে। দ্বাপর যুগে মহাভারতের ২৩ অধ্যায়ে বণির্ত আছে কুরুক্ষেত্রের মহারণাঙ্গনে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ভগবান দুযর্ধনের সৈনদেরকে যুদ্ধ উদ্যত দেখে অজুের্নর কল্যান কামনায় বললেন “হে মহাবাহু অজুর্ন! শত্রæদের পরাজয়ের নিমিত্ত পবিত্র ও সংগ্রাম অভিমুখ হয়ে দুগার্র স্তব কর” অজুর্ন শ্রীকৃষ্ণের উপদেশে রথ থেকে নেমে কৃতাঞ্জলি পুটে দুগার্ স্তোত্র আরম্ভ করলেন। হে কৃষ্ণ পিঙ্গলে! হে যশোদা নন্দিনী, কংস ধ্বংসকারিনী, কাত্যায়নী, শিখিপিচ্ছধ্বজধরে। কলি যুগের বৈষ্ণবাচাযর্ প্রভুনিত্যানন্দ খড়দহে নিজ গৃহে প্রতিমায় দুগার্পূজা করেন। শ্রী শ্রী চÐী তন্ত্রশাস্ত্রের অন্যতম গ্রন্থ। এই শ্রী শ্রী চÐী গ্রন্থে দেবী দুগার্র আবিভার্ব এবং দেবীর কমর্কাÐ বণির্ত আছে। এই গ্রন্থে তিনটি অংশ আছে প্রথম অংশে আছে মধুকৈটভ বধ, দ্বিতীয় অংশে আছে মহিষাসুর বধ, আর তৃতীয় অংশে আছে শম্ভু-নিশুম্ভ বধ। স্বগের্র দেবতাগন, রাজা সুরথ, দশানন বিজয়ী রাম চন্দ্র, মহাবীর অজুর্ন, মহারাষ্ট্রপতি শিবাজী, রাণা প্রতাপসিংহ, শিখগুরু গোবিন্দ সিং অভ্যুদ্বয়কামী রাজন্যবগর্ বা স্বদেশ প্রমিক সাধকগণ দেবীর ভীষণা মূতির্র উপসনা করে শক্তি, ঐশ্বযর্, বীযর্, রাজ্য জয়, শত্রæবধ, বিজয়, দেশ মাতৃকার স্বাধীনতা অথার্ৎ ভুক্তি লাভ করছেন। অপর পক্ষে সমাধি বৈশ্য, বামাক্ষেপা, সাধক রামপ্রসাদ, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, কমলাকান্ত, দুগার্ প্রসন্ন প্রমুখ ভাব সাধকগণ দেবীর দয়াময়ী, করুণাময়ী সৌমা-মূতির্র উপসনা করে প্রেম, ভক্তি, জ্ঞান, বৈরাগ্য, মহামুক্তি লাভ করেছেন। দুগার্পূজার মধ্যে সমাজ উন্নয়ন ও সমাজের কল্যাণকর চিন্তা নিহিত আছে। মহাষ্টমীতে দেবীর মহাস্নানের উপাচারের তাৎপযর্ অনুধাবন করলে উক্ত বিষয়টি পরিষ্কার বোঝা যায়, যব, গম, মুগ, তিল, ধান্য এই পঞ্চশস্যের জলে দেবীর স্নানের মহিমার মধ্যে কৃষির উন্নতি চিন্তা নিহিত আছে। স্বণর্, মুক্ত, হীরা, প্রবাল, পদ্মারাগ এই পঞ্চরতেœ দেবীর মহাস্নানের মধ্যে ঐশ্বযর্ ও খনিজসম্পদ বৃদ্ধির চিন্তা নিহিত আছে। মহৌষধির জলে দেবীর স্নানের মধ্যে স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির চিন্তা নিহিত আছে। গোষ্ট মৃত্তিকার জলে এবং দধিদুগ্ধাদি পশু, মৃতের জলে দেবীর স্নানের মধ্যে গোপালন ও তা রক্ষার দায়িত্ব চিন্তা নিহিত। জাম, বকুল, কুল, শিমুল, রেড়ালা এই পঞ্চকোষের জলে দেবীর স্নানের মধ্যেবনজ সম্পদ বৃদ্ধির চিন্তা করা হয়েছে। পতিতার গৃহে মৃত্তিকার জলে দেবীর স্নানের মধ্যে পতিতোদ্ধার চিন্তা ও সমাজের নীতিবোধ ও নৈতিকতার মানোন্নয়নের চিন্তা বিরাজমান, দেবীর মহাপূজায় ব্রহ্মণ, কুম্ভকার, নরসুন্দর, মালী ও তন্তবায় ঋষিদাস, প্রভৃতি সবর্স্তরের ও সবর্বণের্র মানুষের বিশেষ বিশেষ ভ‚মিকা থাকে। আর এই পবিত্র মিলন মেলায় জাতির সামাজিক ও অথৈর্নতিক চিন্তা পূণর্তা প্রাপ্ত হয়েছে বলা যায়। একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় চৈত্র মাসের বসন্তকালে বাসন্তি পূজা, রাজা রাম চন্দ্রের অকাল বোধন শারদীয় দুগার্ পূজা, একই পূজা, বাসন্তি পূজায় বোধনের প্রয়োজন হয় না।, কিন্তু শারদীয় দুগার্পূজায় বোধন করতে হয়। একই পূজায় দুই নিয়ম শরৎকালে দেব-দেবীদের নিদ্রার সময়, তাই দেবীকে জাগরিত করার নামই বোধন, অন্য কোনো পূজায় বোধনের প্রয়োজন হয় না। স্বগর্ থেকে মতর্্যলোকে (পৃথিবীতে) যখন মা দুগার্ আসেন মায়ের সঙ্গে থাকেন মার সন্তানেরা, গণেশ, কাত্তির্ক, ল²ী, সরস্বতী। সন্তান চার শক্তির প্রতীক, এই চার শক্তির একটির অভাব হলে রাষ্ট্রে পূণর্তা আসে না, রাষ্ট্র পরিচালনায় বিঘœ ঘটে, দুগার্পূজা যেমন সকল শক্তির সমন্বয় ভিন্ন সম্ভব নয়, সেই রূপ রাষ্ট্র পরিচালনায়ও সকল জাতীর মিলিত শক্তির প্রয়োজন। দেবীর বামে সরস্বতী, কাত্তির্ক যথাক্রমে জ্ঞান শক্তি ও ক্ষাত্র শক্তির প্রতীক, দেবীর দক্ষিণে ল²ী ও গণেশ যথা ধনশক্তি ও জনশক্তির প্রতীক, ব্রাহ্মণ শিক্ষা এবং জ্ঞান শক্তি, ক্ষত্রিয় আত্মরক্ষার শক্তি, বৈশ্য অথর্ নৈতিক বা ধন শক্তির প্রতীক, আর শুদ্র জনশক্তির প্রতীক, চারিবণর্ সৃষ্টি হয়েছে গুণ ও কমের্র বিভাগ অনুসারে, ত্যাগ, তপস্যা, তিতিক্ষা, মন ও ইন্দ্রিয়ের সংযম, সত্যনিষ্ঠা, পবিত্রতা, সরলতা, প্রজ্ঞা, প্রভৃতি মানবসম্পদগুলো যার মধ্যে ঠিক ঠিক বিকাশ হয় তিনিই ব্রাহ্মণ। এই গুণের অধিকারী যিনি নন তিনি ব্রাহ্ম হবার অধিকারী নন। ব্রাহ্মণত্ব মানবত্মার অজির্ত সূ² সম্পদ। সাধনার দ্বারা, অনুশীলনের দ্বারা ব্রাহ্মণ হতে হয়। জনক রাজা ব্রাহ্মণ না হয়েও উঁচু গুণের অধিকারী ছিলেন। পবিত্র মহাভারতের রচয়িতা বেদব্যাসের স্ত্রী ছিলেন শুদ্রের মেয়ে। কথায় আছে জন্ম হোক যথাতথা কমর্ হোক ভালো, সেবকরা কিছুদান করে নিজেদের উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত জ্ঞান করেন ও সেব্যরা তাদের সাহায্য ভিখারি বলে তাদের কাছে কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত এইভাব পোষণ করেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন “খবঃ ঃযব মরাবৎ শহববষ ফড়হি ধহফ ড়িৎংযরঢ়, খবঃ ঃযব ৎবপবরাবৎ ংঃধহফ ঁঢ় ধহফ ঢ়বৎসরঃ” অথার্ৎ দাতারাই গ্রহীতাদের সামনে হঁাটু পেতে তাদের সেবা বা পূজা নেবার জন্যে কড়জোরে প্রাথর্না জানাবে ও অনুমতি ভিক্ষা করবে। আমাদের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ব্রিটিশ ভারতে উৎপীড়িত ভারতের বুকে অসুর নাশিনী শক্তিময়ী মায়ের আগমন কামনা করে লিখেছিলেন রণরঙ্গিনী জগৎ মাতা দেয় মহারণ, দশদিকে তার দশ হাতে বাজে দশ প্রহরণ, পদতলে লুটে মহিষাশুর, মহামাতা ওই সিংহ বাহিনী - জানায় আজিকে বিশ্ববাসিকে, শাশ্বত নহে দানব শক্তি, এই কবিতাটি রচনার জন্য কবির হায়তো বাস হয়েছিল। হিন্দুরা যে দেবদেবীর পূজা করেন তাকে প্রতিমা বলে, পুত্তলিকা বলে না। প্রতিমা অথর্ সাদৃশ্য ১ এর পর শূন্য এর সংখ্যা জত বসানো যাবে, লক্ষ, কোটি কোটি হবে। এক সংখ্যা মুছে নিলে শূন্যের আর কোনো মূল্য থাকে না, তাই হিন্দুরা এক ঈশ্বরে বিশ্বাসী। নাম রূপ ব্যতীত মনুষ্যমন সেই অনন্ত অসীম অব্যক্ত বস্তুর ধারণা করতে পারে না, তাই ঈশ্বরের শক্তি বিশেষের সাদৃশ্য কল্পনা করে চিন্তার অবলম্বন স্বরূপ একটা প্রতীক গ্রহণ করা হয় মাত্র। সাধক প্রতীক অবলম্বনে ঈশ্বরেরই পূজা করেন, পুতুল পূজা করেন না। যারা সাধনায় সিদ্ধি লাভ করেছেন, শ্বাত্বিক ঋষি, প্রকৃতির অতীত, তত্ত¡জ্ঞান লাভ করেছেন তাদের প্রতিমার প্রয়োজন হয় না। হিন্দু শাস্ত্রমতে পরমাত্মা অথার্ৎ ঈশ্বরের সৃষ্টিকারিনী শক্তি ব্র²া, পালনকারিনী শক্তি বিষ্ণু, সংহার কারিনীর শক্তি মহেশ্বর...... পুতুল পূজা বা মূতির্ পূজা বলিয়া যাহারা নিন্দা করিয়া থাকেন, তারা তাদের অজ্ঞতার পরিচয় দেন। খ্রিষ্টান (ক্যাথলিক) যীশুর মূতির্পূজা করেন, প্রোটেস্টান স¤প্রদায় ক্রুসের সামনে নতজানু হয়ে উপাসনা করেন। একসময় দুগার্ উৎসব ছিল রাজা জমিদার শ্রেণির একান্ত ঘরোয়া পূজা। ধনি, দরিদ্র, সবাই মায়ের সস্তান। কালের বিবর্তনে রাজ দরবারের পূজার্ আজ গণ দরবারে উপস্থিত হয়ে সাবর্জনীন পূজায় রূপ নিয়েছে। কী ধনি, কী দরিদ্র যে কোনো স¤প্রদায় সব ভেদাভেদ ভুলে, প্রায় সকলেই সারা বছরব্যাপী উদগ্রীব থাকে তাদের অন্যতম উৎসব দুগার্ উৎসবের কয়েকটি দিনের জন্য, বতর্মানে দুগার্পূজা বাঙালি জীবনে শুধু ধমীর্য় অনুষ্ঠানই নয়- এটা একটি বাষির্ক মিলনক্ষেত্র, এবং মহোৎসব বটে, পূজার সূচনা হয় পিতৃপক্ষের শেষ এবং দেবীপক্ষের শুরুতে। সা¤প্রতিককালে দুগার্পূজা তার মৌলিক তত্ত¡ হারাতে বসেছে। দুগার্পূজার মৌলিক তত্ত¡ অনুশীলন করলে বোঝা যায়, এতে যেমনি আছে আড়ম্বর তেমনই রয়েছে আনুষ্ঠানিকতা, আচার-আচারণ নিষ্টা ও নিয়মানুবতির্তার কঠোরতা। বাহ্যিক আড়ম্বর যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে শাস্ত্রবিধি পালনের আগ্রহ ততই কমে যাচ্ছে। স্বাত্তিক, রাজসিক পূজা এখন তামোসিক পূজায় পরিণত হয়েছে। পুরহিত মন্দিরে মায়ের পবিত্র মন্ত্র উচ্চারন করে পূজা শুরু করেন, মায়ের সম্মুখে চলে রাজনৈতিক নেতার গুণ কীত্তর্ন, চলে ফটোসেসনের প্রতিযোগিতা, মায়ের সংগীত পরিবেশন এর পরিবতের্ চলে ব্যান্ড সংগীত, পবিত্র আরতি প্রতিযোগিতার পরিবতের্ চলে আধুনিক নাচের প্রতিযোগিতা, দেখবার যেন কেউ নেই। প্রতিবাদহীন, হৈহুল্লোড়, দুগার্পূজার মৌলিক তত্ত¡ হারিয়ে বাহ্যিক আচার অনুষ্ঠানে পযর্বসিত হয়েছে, পুত পবিত্র পূজার আনুষ্ঠানিকতার পরিবতের্ সাজ-সজ্জার প্রতিযোগিতা চলেছে, হৈহুল্লোড় অতীতেও ছিল, পূজা অঙ্গনে পূজা চলাকালীন মাতৃবন্দনায় এত বিঘœ সৃষ্টি হতো না, পূজার সময় উদ্যোক্তাদের হৈ-চৈ ও অনুষ্ঠান মালার আয়োজনে ইত্যাদিতে পূজার আধ্যাত্মিক চেতনাকে কলুষিত করে চলেছে। আমরা লোক লজ্জা, অপবাদ বা শাস্তির ভয়ে বাহ্যত সৎ হতে চেষ্ঠা করি, আসলে নয়, বাহিরে ধামির্ক সেজে যাতে ধরা না পড়ি এমন লুকোচুরি করে গুপ্ত ভাবে অসৎ কাজ করতে ছাড়িনা। আজও ভদ্রতার আড়ালে প্রতাপশালী কতৃর্ক চলে সমাজে, রাষ্ট্রে, অত্যাচার এরই স্বাক্ষর গণমাধ্যমে পেয়েছিলাম রাজ বাড়ির বালিয়াকান্দি উপজেলায় জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কতৃর্ক আটটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রাখা, গণমাধ্যমে আরো প্রকাশ করে ছিল ঠাকুর গাও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান কতৃর্ক ৩ সন্তানের জননীকে পরিষদে এনে প্রকাশ্যে নগ্ন করে নিযার্তন। বগুড়ায় ধষর্ণ মামলা দেয়ায় মাকে খুন, দিন দরিদ্র ১৪ বছরের এক কিশোরী, মেয়ের বাবা বঁাশের ঝাড়– বিক্রি করে ৪ সদস্যের সংসার চালায় অপরাধ গরিবের মেয়ে সুন্দরী। প্রভাবশালী জসিমের ছেলের অপকমর্ স্থানীয় ভাবে ঢাকার চেষ্টা করেন, কিশোরীর মা তাতে রাজি হন। প্রতাপশালী, প্রভাবশালী, আর বিত্তশালীদের হাত থেকে বঁাচতে হলে আজ সংহতি শক্তির প্রয়োজন। প্রয়োজন একতার, বঁাচতে হলে বল সঞ্চয়ী একমাত্র কতর্ব্য। আমরা সংঘবদ্ধ নই সেইজন্য সমাজে দরিদ্র অসহায় আর সংখ্যালঘুরা এত দুবর্ল, আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। একেই মহাত্মা গান্ধী বলেছেন ঘড়হ-ঠরড়ষবহপব ড়ভ ঃযব বিধশ দুবের্লর অহিংসা ব্রত পালন। কেন বলেছেন? আমরা নীরবে সহ্য করে অহিংসার দোহাই দিই, আমরা আমাদের প্রবঞ্চনা করি। এখানে গান্ধি বলেছেন ঘড়হ-ঠরড়ষবহপব ড়ভ ঃযব ঝঃৎড়হম অথার্ৎ নিযার্তন প্রতিশোধের পুণর্ শক্তি সামথর্্য সত্তে¡ও বৈরীর প্রতি অহিংসা ভাব পোষণ করা ও স্বপ্রেম ব্যবহারকে প্রকৃত অহিংসা ধমর্ পালন বলেছেন। সমাজের এই চিত্র অতিতেও ছিল। সতীদাহ প্রথা স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা, সতীদাহ প্রথা যে ছিল না, এর জলন্ত প্রমাণ রামায়ণ, মহাভারত। সৃষ্টির রক্ষাথের্ মহাদেব সমুদ্র মন্থ্যন কালে বীষ পান করেন, সমাজে গঁাজাখোররা গঁাজা সেবন করে দেবাদিদেব মহাদেবের স্মরণ করে। সমাজে নারী বিদ্বেষ অব্যাহত। ইদানীংকালে আন্তজাির্তক অঙ্গনে রাষ্ট্র পরিচালনায় নারী তার শক্তি, প্রজ্ঞা, বৈভব এর দৃষ্টান্ত রেখেছেন যা এখনো দৃশ্যমান। ব্রিটিশ ভারতে ফ্রি স্কুল স্ট্র্রিটে রানি রাসমনির বাড়িতে ঢুকে গোরা সৈন্যরা যখন সব লÐভÐ করে রানি রাসমনি রুদ্র মূতির্ ধারণ করে তলোয়ার হাতে এগিয়ে আসেন, পরে সেনা কমর্কতার্ এসে রানির কাছে ক্ষমা চান। ভারতে জাহাজের নারী ক্যাপটেন ৭ জন জেলেকে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে প্রাণে বঁাচান। আমাদের দেশে অনূধ্বর্ ১৬ মেয়েরা ফুটবল খেলায় জয়ের ধারা অব্যাহত রেখেছে, যা ছেলেদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। অন্যায়, অত্যাচার, আর ধমের্র অপব্যাখ্যা দিয়ে, ধমের্র ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে নারীকে বন্দি রাখার প্রবৃত্তি এ সমাজের এক শ্রেণি মানুষ এখন লালন করেন। মায়ের সন্তান হয়ে আমরা আকুলভাবে প্রাথর্না যানাই মা শক্তি দাও, সমাজের অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লড়তে, মা তুমি সব সন্তানের মঙ্গল কামনা করো সেহেতু তুমি সবর্মঙ্গলা” তুমি শরণাগতদের বরদান করো, সেইহেতু তুমি বরদা” তুমি দুগির্তনাশিনী, সকলের দুঃখ হরণ কর তাই তুমি দুগার্ নামে প্রসিদ্ধা। তুমি ভক্তগণের ‘শম’ তথা মুক্তি দাত্রি সেই হেতু তুমি শঙ্করি। সংসার সাগরে নিমজ্জিত জীবের উদ্ধারে তুমি দুগার্রূপী শ্রেষ্ঠ “অণর্ব” তথাতরী। তোমার সেই তরীতে আশ্রয় নিয়ে সন্তান পাই সান্ত¡না না। নিমাই কৃষ্ণ সেন: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট