সবর্ত্র শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক

বিজয়া দশমী

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আজ দশমী, শেষ হচ্ছে সনাতন ধমার্বলম্বীদের অন্যতম ধমীর্য় উৎসব শারদীয় দুগোর্ৎসবের অনুষ্ঠানমালা। বোধনের মধ্য দিয়ে যে দেবীর আগমন ঘটেছিল মতের্্য, আজ বিসজের্নর মধ্য দিয়ে তিনি ফিরে যাবেন কৈলাসধামে। অশুভ শক্তির প্রতীক অসুরদের দলপতি মহিষাসুরকে বধ করে দেবী দুগার্ দেবকুলকে রক্ষা করেছিলেন। এর মধ্য দিয়ে নিশ্চিত হয়েছিল অন্যায় ও অশুভ শক্তির পরাজয়, ন্যায় ও শুভশক্তির জয়। তিনি যেমন মানুষকে মহৎ হতে প্রাণিত করেন, তেমনি মানুষের মনের দৈন্য ও কলুষ দূর করেন। মানবের জন্য বহন করে আনেন মঙ্গলবাতার্। বাঙালির সাংস্কৃতিক মিলনসূত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ পূজা দেশাত্মবোধও জাগিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। কেননা বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রাখার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই শারদীয় দুগোর্ৎসব। পুরাকালে দুগার্ দেবী শক্তিদেবী হিসেবে পূজিত হলেও ভক্তের অন্তরের কাছে তিনি চিরকালই মাতৃরূপিণী। পেশিশক্তি, ধন ও বিদ্যাশক্তি লাভের সঙ্গে নতুন যে শক্তি যুক্ত হয়েছে তা হলো প্রেমভক্তি। ভক্তির এ মনোভাব সম্পূণর্রূপে প্রতিফলিত হয় মাতৃরূপিণী দেবী দুগার্র মৃন্ময়ী মূতিের্ত। জগতের সব ধরনের আসুরিক শক্তি বিনাশপূবর্ক দেবী দুগার্ মানবহৃদয়ে সততা, শক্তি ও প্রেমভক্তিরস জাগ্রত করেন। সঙ্গত কারণে দেবী দুগার্ কখনো শক্তিরূপিণী, মাতৃরূপিণী, ধনরূপিণী, আবার কখনো শত্রæবিনাশিনী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাঙালি সনাতন ধমার্বলম্বীদের দুগার্পূজা এখন আর শুধু ধমীর্য় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। শারদীয় দুগোর্ৎসব বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধমীর্য় উৎসব হলেও উৎসবকে ঘিরে সব ধমের্র মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ করা যায়। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকেও শারদীয় উৎসব গভীর তাৎপযর্পূণর্। দেবী দুগার্র শ্রীমূতির্ দশের্ন সব বণর্-ধমের্র মানুষের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে পূজামÐপগুলো। ধুপের ধেঁায়া, শঙ্খ, উলুধ্বনি আর ঢাকের বাদ্যে এ উৎসব পরিণত হয় মহোৎসবে। উৎসব মানুষের মনকে কলুষমুক্ত করে প্রফুল্ল করে তোলে। পূজা ও উৎসবমুখর পরিবেশ মানুষকে উদার হতে শেখায়। এ সময় সব বাধা, ব্যবধান ও বিভেদের প্রাচীর ছোট হয়ে আসে। বাংলাদেশ সম্প্রীতির দেশ। এ দেশে সব ধমের্র মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় ধমীর্য় উৎসবগুলো। ভিন্ন ভিন্ন ধমের্র লোকেরা এসব উৎসবে একত্রিত হয়ে উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। যদিও অনেক সময় দেখা যায়, একশ্রেণির উগ্র গোষ্ঠী এসবের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে সম্প্রীতিতে আঘাত করার অপচেষ্টা করে থাকে। এ ধরনের কমর্কাÐ কোনো জাতির জন্য শুভ ফল বয়ে আনে না। এটা উল্লেখ্য যে, বিগত বছরগুলোতে দুগার্পূজাকে কেন্দ্র করে কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। তবে এবার নিবির্ঘœ ও শান্তিপূণর্ভাবেই শারদীয় দুগোর্ৎসব পালিত হচ্ছে। আর শারদীয় দুগোর্ৎসব নিবিের্ঘœ পালনের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা। আমরা মনে করি, নিবিের্ঘœ শারদীয় দুগোর্ৎসব পালনের মধ্য দিয়ে নিজেদের ভ্রাতৃত্ববোধেরও জাগরণ ঘটবে। সবর্ত্র সুন্দরের অধিষ্ঠান ঘটবে। নিজেদের পারস্পরিক সুসম্পকর্ এবং পরম ভ্রাতৃত্ববন্ধনের মধ্য দিয়ে পরাজিত হবে সব রকমের অপশক্তি। এটা অনস্বীকাযর্ যে, আমাদের সমাজে একধরনের আসুরিক শক্তি বিরাজ করছে। যে কারণে মানুষে মানুষে এত ভেদাভেদ, রেষারেষি। এ ছাড়া নানা রকম অপশক্তির উত্থানে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দরকার। সন্ত্রাস দমন ও শান্তিপূণর্ সমাজ গঠনে দেবী দুগার্র আদশর্ সমাজের শুভফলদায়ক, প্রেরণাস্বরূপ। আমরা চাই সমাজ-সংসার-রাষ্ট্র থেকে সব অশুভর বিনাশ হোক। মতর্্যলোক থেকে দেবী দুগার্র বিসজের্নর সঙ্গে বিসজির্ত হোক সব অপশক্তির। আজ শুভ বিজয়ার দিনে আমরা সনাতন ধমার্বলম্বীদের জানাই আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা। পাশাপাশি এই দিনে আমাদের প্রত্যাশা, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট হোক, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কাছে দূর হোক জাতি-বণর্ প্রথাসহ সব বিভেদনীতি। শক্তিশালী হোক মিলন ও সৌহাদর্্য-সম্প্রীতির ধারা। শারদীয় দুগোর্ৎসবের মধ্য দিয়ে বিশ্বে সত্য, ন্যায় ও শুভশক্তির জয় হোক।