গড় আয়ু বৃদ্ধির পূবার্ভাস

গুণগত জীবন নিশ্চিত করতে হবে

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানুষ মরণশীল, তবে জীবনমান উন্নয়নের মাধ্যমে আয়ু বৃদ্ধি অসম্ভব নয়। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। আগামী বছরগুলো আয়ু বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও পূবার্ভাস দিয়েছে বিখ্যাত স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেট। ইউনিভাসিির্ট অব ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট অব হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশনের এক জরিপে উঠে আসা আয়ু বৃদ্ধির এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বতর্মানে ৭২ বছর। আয়ু বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকায় ২০৪০ সালের মধ্যে বিশ্বের মানুষের গড় আয়ু ৮৫ দশমিক ৮ বছর হবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু হবে ৭৯ বছর। যখন সংবাদপত্রে ইতিবাচক সংবাদের দেখা পাওয়া দুলর্ভ, তখন বিখ্যাত স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের প্রতিবেদনে ওঠে আসা এ খবরটি যে কোনো বাঙালিকেই আশান্বিত করবে। করবে আস্থাশীলও এ কারণে যে, অজস্র প্রতিক‚লতা মোকাবিলা করেই এ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অনেক নেতিবাচক সূচকের বিপরীতে এরকম একটি-দুটি ইতিবাচক সূচকÑ বলাই বাহুল্য, এ জাতির সংগ্রামী ঐতিহ্যকে ঊধ্বের্ তুলে ধরে। অপরদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গড় আয়ু বৃদ্ধি কোনো দেশের জন্যই অশনিসংকেত নয়, যদি আয়ু বৃদ্ধিকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। আর ২০১৮ সালে গড় আয়ু এসে দঁাড়িয়েছে ৭২ বছরে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুমৃত্যু হ্রাস, বয়স্ক ব্যক্তিদের দেরিতে মৃত্যু গড় এবং জীবনমানের উন্নয়ন গড় আয়ু বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। আবার যখন গড় আয়ু আরও বৃদ্ধির পূবার্ভাস পাওয়া যাচ্ছে তখন পুষ্টিকর খাদ্য, ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরিচযার্ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা অপরিহাযর্ সন্দেহ নেই; কিন্তু দীঘর্ জীবনের জন্য এর পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরিচযার্র কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী বতর্মানে গুণগত স্বাস্থ্য বা জীবন এবং সংখ্যাগত জীবন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। শুধু গড় আয়ু বাড়ানো মুখ্য নয়, বড় বিষয় গুণগত জীবনের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া। দীঘর্ সময় বঁাচার মধ্যে সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকাই বঁাচার বড় সাথর্কতা। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের আয়ু বেশি হলে সমাজে অবদান রাখার পরিমাণ বাড়ে। কিন্তু স্বাস্থ্যের গুণগত মান ভালো না হলে গড় আয়ু বেশি হলেও ভালো ফল পাওয়া দুষ্কর। ফলে গড় আয়ু বৃদ্ধির এই পযাের্য় দঁাড়িয়ে গুণগত জীবন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শতবষর্ আগে লিখেছিলেন- ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বঁাচিবারে চাই।’ তখন দেশ ছিল পরাধীন, মানুষ ছিল শৃঙ্খলিত। কিন্তু স্বাধীন দেশে এখন কবির সেই আকাক্সক্ষা কিছুটা হলেও বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। বাড়ছে মানুষের গড় আয়ু। ল্যানসেট ছাড়াও বৈশ্বিক নানান জরিপে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে এসেছে। বিবিএস প্রতিবেদনেও গড় আয়ু, গড় আয়, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধিসহ নানা খাতের অগ্রগতির চিত্র ওঠে এসেছে। দেশের অগ্রগতির বিষয়গুলো নিঃসন্দেহে আমাদের আশান্বিত করে। পাশাপাশি বৈশ্বিক নানান সূচকে দেশের বিভিন্ন বিষয়ে অবনমনের খবরও জানা যায়। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কতর্ব্য হওয়া দরকার এসব বিষয়ে আরও উদ্যোগী হওয়া। সবোর্পরি বলতে চাই, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের পথ পরিক্রমায় জনগণের জীবনমান উন্নয়নেও ইতিবাচক পরিবতর্ন এনেছে, দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আয়ু বৃদ্ধির অব্যাহত থাকার পূবার্ভাসও আশা জাগানিয়া। মানুষের সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর একটি উত্তম উপায় মানুষের আয়ু বৃদ্ধি। স্বাস্থ্য খাতসহ দেশের নানান খাতের সফলতা আমাদের জীবন প্রত্যাশাকে বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। এখন দেশের মানুষের জীবনমান আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে নেয়া গেলে আয়ু বৃদ্ধির সুফলকে কাজে লাগানো যাবে বলেই আমরা বিবেচনা করতে চাই, যা সরকারই নিশ্চিত করতে পারে।