শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
কার্যকর পদক্ষেপ নিন

পাহাড়ধসে প্রাণহানি

নতুনধারা
  ৩০ জুলাই ২০২১, ০০:০০

কক্সবাজার জেলায় ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, অতিবর্ষণে পাহাড়ধস ও পাহাড়ি ঢলে মৃতু্যর মিছিল বেড়েই চলছে। তথ্য মতে, বুধবার পাহাড়ধসে একই পরিবারের পাঁচজনসহ ৬ জন ও ঢলের পানিতে তলিয়ে গিয়ে আরও ৬ জনের মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। এর আগে মঙ্গলবার আরও ৮ জনের মৃতু্য হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পাহাড়ধসে মৃতু্যর ঘটনা এই প্রথম নয়, নানা সময়ে পাহাড়ধসে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। একের পর এক যখন পাহাড়ধসে মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে, তখন সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না।

প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, এর আগে পত্রপত্রিকায় এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে যে, নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড় করার কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘনঘন পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন-জঙ্গল ও গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। কিন্তু পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। আর এসব কারণে পাহাড়ে ধস নামে বলেও আলোচনায় এসেছে। ফলশ্রম্নতিতে একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি অতি বৃষ্টির কারণে পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম নগরের খুলশী ও বায়েজিদ এলাকার বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে ৯২টি পরিবারকেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত তাদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানুষকে নিরাপদে রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা জারি রাখা অপরিহার্য।

পাহাড়ধসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই, বৃষ্টি হলে পাহাড়ধস হবে এটা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়, আর মানুষের প্রাণহানি তো নয়ই। কারণ এটা মনে রাখতে হবে যে, বছরের পর বছর ধরে নির্বিচারে গাছ কেটে পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলা হয়েছে। পাহাড় কেটেও সমতল বানানো হয়েছে। গাছ না থাকায় মাটির কাঠামো দুর্বল হবে এটাই স্বাভাবিক। যার ফলে বৃষ্টি হলেই নামছে ধস এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে বিভিন্ন সময়ে। এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছাড়াও প্রভাবশালী মহলসহ বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়েই পাহাড়ধসে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে, এছাড়া নানা ধরনের অভিযোগ উঠলেও চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোয় পাহাড় কাটা, অবৈধ স্থাপনা ও বসতি নির্মাণ বন্ধ হয়নি এমনটিও বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে- যা অত্যন্ত উদ্বেগের। আমরা মনে করি, এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, কিছু মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকান্ডের ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। ফলে এ ধরনের বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। মনে রাখা দরকার, এর আগে এমন তথ্যও উঠে এসেছিল যে, পাহাড়খেকোদের কবলে পড়ে কেবল চট্টগ্রামেই গত এক দশকে নিশ্চিহ্ন হয়েছে ৩৫টি পাহাড়। এছাড়া অনেক পাহাড় ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় পড়ে আছে বলেও জানা গিয়েছিল। আমরা মনে করি, পাহাড়ধসসহ যে কোনো দুর্যোগ স্থায়ীভাবে মোকাবিলার জন্য যথাযথ তৎপরতা ও উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই।

সর্বোপরি বলতে চাই, পাহাড়ধসে একের পর এক মানুষ মারা যাচ্ছে- এই বিষয়টি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রকৃতি তার নিজস্ব নিয়মে চলে। সঙ্গত কারণেই পরিবেশ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কঠোর হতে হবে। তা না হলে পাহাড়ধস রোধ করা যাবে না। বেআইনিভাবে পাহাড় কাটা, পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে। পাহাড়ধসে একের পর এক মৃতু্যর ঘটনা ঘটছে- সামগ্রিক এ পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে