শোকের সাগর থেকে শক্তির আগুন

শুধু বাঙালি নয়- সারাবিশ্বের সবার হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন অপার মহিমায়। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা দ্রম্নত এগিয়ে চলেছে অভীষ্ট লক্ষ্যের পানে। উন্নয়নের সবগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার পথে বাংলাদেশ। বলিষ্ঠ অঙ্গীকারে পথ চলছে ১৭ কোটি বাঙালি। সবার হাতে রয়েছে প্রত্যয়দীপ্ত সূর্যমশাল- জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর উদ্ভাসিত এই সূর্যমশাল আলো ছড়াবে এগিয়ে চলা পৃথিবীর শেষ ক্ষণ পর্যন্ত। চির অমলিন শ্বেতপাথরের হৃদয়ে লেখায় স্পষ্ট হয়ে থাকবে- বঙ্গবন্ধুর নাম।

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ০২ আগস্ট ২০২১, ১০:৪৭

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্রফেসর ডা. নাজমা বেগম নাজু

ইতিহাস সাক্ষী আছে- কোটি বছরের ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে, পৃথিবীর বুক থেকে কখনই কোনো মহাসত্যকে মুছে ফেলা যায় না। যে কোনো সত্যকে মুছে ফেলার, ধ্বংস করার বা মিথ্যার সঙ্গে মিশিয়ে এক করার সামান্যতম প্রচেষ্টাও শত হাজারগুণে প্রকৃতি ফিরিয়ে দেয় আপন মহিমায়। কিছু সময় এবং সুযোগের ব্যবধানে আবারও কয়েকগুণ হয়ে ফিরে আসে সে প্রতিশোধের আগুন। বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্ধকারতম শোকাবহ দিন ১৫ আগস্ট তার জ্বলন্ত প্রমাণ হয়ে মহাকালের পাতায় অমর হয়ে থাকবে। ঘৃণ্য ঘাতকদের নৃশংস হত্যাকান্ড তাই বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্বকে বিন্দুমাত্র ম্স্নান করতে পারেনি। একটি মুজিব লাখ কোটি হয়ে সারা পৃথিবীর মানুষের মনে চিরস্থায়ী ঠাঁই করে নিয়েছে। তার মৃতু্য হয়নি, তিনি হয়েছেন অমর ও চিরঞ্জীব। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে তিনি পৃথিবীর সবার হৃদয়ের মনিকোঠায় চির-জ্বলমান থাকবেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাতে ঘাতকের হাতে নিহত হন বাঙালি জাতির চির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানসহ পরিবার-পরিজন এবং স্বজনদের অনেকেই। গভীর শোকে পাথর হয়েছিল পুরো বাংলাদেশ সেদিন। জাতির রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্রষ্টার এই নির্মম পরিণতি সেদিন বাংলাদেশকে করেছিল শোকার্ত ও দিশেহারা। বঙ্গবন্ধু কেবল একজন ব্যক্তি নন, এক মহান আদর্শ ও বিশ্বনেতার নাম। যে আদর্শে উজ্জীবিত হয়েছিল গোটা দেশ। বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র আর ধর্মনিরপেক্ষতার দর্শনে দেশের সংবিধানও প্রণয়ন করেছিলেন স্বাধীনতার স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। শোষক আর শোষিত বিভক্ত সেদিনের বিশ্ববাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতের পক্ষে। পাকিস্তানি শাসন-শোষণ-দমনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার যে ডাক দিয়েছিলেন তা অবিস্মরণীয়। বিশ্ব ইতিহাসে অমরত্বের মর্যাদা পেয়েছে তা (ঐতিহাসিক এই ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তিকরণে ওয়ার্ল্ড ডেমোক্রেসি হেরিটেজের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়)। তার অমর আহ্বান-"এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগাম মুক্তির সংগ্রাম"- এর মন্ত্রপূত ঘোষণায় বাঙালি হয়ে উঠেছিল লড়াকু এক বীরের জাতি। আবার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাতে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠেই জাতি শুনেছিল মহান স্বাধীনতার ঘোষণা। এরপর মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাকে বন্দি থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারে। পুরোটা সময় তার আহ্বানেই চলে মুক্তিযুদ্ধ। বন্দিদশায় মৃতু্যর খড়গ মাথায় নিয়েও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি বাঙালি হৃদয়ের এই মহান নেতা। মুক্তিযুদ্ধ শেষে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতাকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। দেশে ফিরে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখার পাশাপাশি আপামর জনতাকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করেন বঙ্গবন্ধু। দেশকে দেশের মানুষকে জীবন দিয়ে ভালোবাসতেন বঙ্গবন্ধু। সাদা মনের এই মানুষটি সরল বিশ্বাসে তাই সরকারি বাসভবনের পরিবর্তে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের সাধারণ বাড়িটিতেই বাস করতেন। মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত অপশক্তির ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর বিপথগামী উচ্চাভিলাষী কিছু সদস্যকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রকারীরা। ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে গভীর রাতে হামলা চালিয়ে হত্যা করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও তার পরিবারকে। শুধু বঙ্গবন্ধু নয়- তারা মুছে ফেলতে চেয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের অর্জন, স্বাধীনতার আদর্শ এবং বাঙালির বীরত্বগাথার ইতিহাসও। কিন্তু শোকের সাগরে নিমজ্জিত বাঙালি জাতিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ হতে একচুলও সরাতে পারেনি কেউ-ই। শত আঘাতে ছিন্ন ভিন্ন হয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। ঘৃণ্য ঘাতকরা চেয়েছিল ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম চিরতরে মুছে ফেলতে। কিন্তু প্রকৃতির প্রতিশোধ- নিজেদের ব্যর্থতার ছাইয়ে নিজেরাই চাপা পড়ে গেছে তারা। বঙ্গবন্ধু আজ বিশ্ববন্ধু, বিশ্বনেতার আসনে ঠাঁই পেয়েছেন ইতিহাসের অমর পাতায়। স্বীয় নাক্ষত্রিক আলোকশিখায় উদ্ভাসিত করেছেন চারদিক। শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি পেয়ে অমর হয়েছেন মহাকালের কালজয়ী বহতায়। ঘাতকদের কোনো ইচ্ছারই স্থায়ী বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি। তাদের নামও লিখা হয়েছে চিরস্থায়ী ঘৃণার আসনে। প্রকৃতি নিজ হাতে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু মরেননি, কোথাও হারিয়ে যাননি তিনি। লাখ কোটি সূর্যের প্রজ্ঞাময় অঙ্গীকারে তিনি বেঁচে আছেন- চিরদিন বেঁচে থাকবেন। শুধু বাঙালি নয়- সারাবিশ্বের সবার হৃদয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন অপার মহিমায়। তার স্বপ্নের সোনার বাংলা দ্রম্নত এগিয়ে চলেছে অভীষ্ট লক্ষ্যের পানে। উন্নয়নের সবগুলো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার পথে বাংলাদেশ। বলিষ্ঠ অঙ্গীকারে পথ চলছে ১৭ কোটি বাঙালি। সবার হাতে রয়েছে প্রত্যয়দীপ্ত সূর্যমশাল- জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর উদ্ভাসিত এই সূর্যমশাল আলো ছড়াবে এগিয়ে চলা পৃথিবীর শেষ ক্ষণ পর্যন্ত। চির অমলিন শ্বেতপাথরের হৃদয়ে লেখায় স্পষ্ট হয়ে থাকবে- বঙ্গবন্ধুর নাম। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল প্রফেসর ডা. নাজমা বেগম নাজু : কবি, কথাসাহিত্যিক, চিকিৎসক