শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানিস্তান :বিরাজনীতিকরণের অনিবার্য পরিণতি

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো বুঝতে পারেনি, অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করেছে, রাজনীতির শূন্যতায় মৌলবাদই কেবল দ্রম্নত বিকশিত হয়। সেটিই ঘটেছে। তাই আমি দেশটির সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে উদ্বিগ্ন হলেও অবাক হচ্ছি না। যা ঘটছে তা- অন্য আরও অনেক কারণের সঙ্গে বিরাজনীতিকরণেরও অনিবার্য ফসল।
মোশতাক আহমেদ
  ০২ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

খবরে প্রকাশ- আফগানিস্তানের দুই শতাধিক জেলা নাকি তালেবানরা দখল করে নিয়েছে। দেশের ৩৪টি প্রদেশের ৪২১টি জেলার মধ্যে (প্রাদেশিক রাজধানীসহ) ২০০-এর অধিক যদি বিদ্রোহীদের হাতে চলে গিয়ে থাকে তাহলে এ কথা ভাবা যেতেই পারে যে দ্বিতীয়বারের মতো তালেবানদের দেশটির ক্ষমতা দখল সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমাদের এই দেশে অনেকেই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন (কেউ কেউ আবার উলস্নসিতও হচ্ছে, এদের সংখ্যাটাও নিতান্ত কম নয়।) এ নিয়ে অনেকের মতো আমিও কমবেশি উদ্বিগ্ন, কিন্তু অবাক হচ্ছি না। কারণ গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে তালেবানদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই যে 'চোর-পুলিশ' খেলা চলছে তা সর্বজনবিদিত। তা ছাড়া গত চার দশক ধরে দেশটিতে এত খেলোয়াড় আর এত আম্পায়ার মাঠ মাতাচ্ছে যে এতে কখন কি ঘটে তা নিশ্চিত করে বলা আসলেই কঠিন। সে কারণেই দেশটির আশু ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো নিশ্চিত মন্তব্য করার সময় এখনো এসেছে বলে মনে করি না। তবে বাস্তবতা এই যে ২০০৮/২০০৯ থেকেই দেশটির দক্ষিণ, পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অধিকাংশ জেলারই ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এলাকা তালেবানদের দখলে কিংবা প্রভাব বলয়ে রয়েছে যেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ (ৎিরঃ) নামমাত্র। এসব এলাকায় তালেবানরা কেন্দ্রীয় সরকারের সমান্তরাল প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু রেখেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের মতোই তারা এসব জেলায় তাদের নিজস্ব জেলা গভর্নর (উরংঃৎরপঃ ডঁষঁংধিষ), জেলা পুলিশ প্রধান (ঈড়সসধহফধহ -ব- অসরহরুধঃ) এবং জেলা অপারেশন কমান্ডার নিয়োগ দিয়ে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এবং তা গোপনে নয়- প্রকাশ্যে করছে। তালেবান অধু্যষিত এসব এলাকায় জনগণ তাদের বিচার-আচার কিংবা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কখনোই জেলাসদরে সরকারি অফিস-আদালতে যায় না। বরং তারা এসবের জন্য স্থানীয় তালেবান কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয় এবং হচ্ছে। সরকারি অফিসের কাজ মূলত 'তাজকেরা' বা জাতীয় পরিচয়পত্র ইসু্য করা। যেহেতু গ্রামাঞ্চলে সরকারি প্রশাসনের তেমন নিয়ন্ত্রণ বা গ্রহণযোগ্যতা ছিল না বা নেই, তাই সব ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থানীয় তালেবানদের সাহায্য নিয়েই বাস্তবায়ন করা হয়। তালেবানদের সুপারিশকৃত ঠিকাদারের বাইরে অন্য কারও পক্ষে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গিয়ে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন অসাধ্য একটা বিষয়। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ বিষয়টি ভালোভাবেই জানেন। এমনও শোনা যায় সরকারি কর্মচারীদের বেতনের একটা নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত তালেবানদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাই তারা তালেবানদের সঙ্গে এক ধরনের ংুসনরড়ঃরপ ৎবষধঃরড়হংযরঢ় গড়ে তুলে প্রশাসন চালাচ্ছে। এ অবস্থাই চলে আসছে প্রায় এক দশক ধরে। এ অবস্থায় তালেবানরা যদি ক্ষমতায় এসেই যায় তাতে অবাক হওয়ার কিছু দেখি না।

কিন্তু কেন এমনটি হলো? গত ১৮ বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেন এই পরিণতিকে ঠেকাতে পারল না বা পারছে না? রাজনীতি বিশ্লেষক ও গবেষকরা হয়তো একদিন এর উত্তর খুঁজে বের করবেন। আমি কোনো রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই। তবে আমার ১৩/১৪ বছরের আফগানিস্তানে অবস্থানকালে আমি যা দেখেছি আর উপলব্ধি করেছি তার আলোকেই আমার মতো করে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করেছি। এই লেখা তারই ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র।

এ কথা সবাই জানেন ২০০১-এ তালেবানদের হটিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে। আর তখনই শুরু হয়ে যায় দেশটি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির বিতাড়ন প্রক্রিয়া। এ যেন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প। প্রথমেই শুরু হয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের কাজ। তারই ধারাবাহিকতায় অনুষ্ঠিত হয় ২০০৪-এ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন (০৯ অক্টোবর ২০০৪)-(যে নির্বাচনে আমি নিজে আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় সামাংগান প্রদেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছি।) যতদূর মনে পড়ে- মোট ২৩ জন প্রার্থী এতে অংশগ্রহণ করেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ১৮ জন টিকে ছিলেন নির্বাচনী দৌড়ে। ভোটার লিস্ট নাই, নির্দিষ্ট কোনো ভোটার এলাকা নাই- শুধু একটি ভোটার আইডি কার্ড, এ নিয়েই যে যেখানে খুশি ভোট দিতে পারে- এমনি একটা নির্বাচনে হামিদ কারজাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. ইউনুছ কানুনীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে।

উলেস্নখ্য, প্রার্থীদের কারুরই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না- না ছিল কোনো রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক ইশতেহার। এই অবস্থাতে শুধু ব্যক্তিগত ইমেজকে পুঁজি করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনটিতে আসীন হলেন ভারতের হিমাচল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, পশতুন অধু্যষিত দক্ষিণাঞ্চলীয় কান্দাহারের পপালজাই ট্রাইবের প্রধান হামিদ কারজাই। সেই শুরু- দেশটি থেকে রাজনীতি বিতাড়নের প্রক্রিয়া।

ঠিক এক বছর পর ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৫ দেশটিতে অনুষ্ঠিত হলো সংসদ নির্বাচন যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ডড়ষবংর ঔরৎমধ. অরাজনৈতিকভাবে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে ব্যবহার করা হলো সম্পূর্ণ নতুন এক পদ্ধতি ঝঘঞঠ (ঝরহমষব ঘড়হঃৎধহংভবৎধনষব ঠড়ঃব)। আমার জানামতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে হাতে গোনা ৪/৫ টি অখ্যাত দেশে এই পদ্ধতি চালু আছে। আফগানিস্তানে সেই পদ্ধতিরই পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা হলো। আমি তখনও উত্তরাঞ্চলীয় সামাংগান প্রদেশের নির্বাচন কার্যালয়ের প্রধান। একটি সংসদ নির্বাচন- অথচ নেই কোনো রাজনৈতিক দল বা দলীয় প্রচার। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতোই নেই কোনো রাজনৈতিক ইশতেহার। সবকিছুই ব্যক্তিকেন্দ্রিক। সামাংগান থেকে ওয়ালেসি জিরগার সদস্য হলেন 'কমান্ডার আহাম্মদ খান'। এমনই অরাজনৈতিক 'কমান্ডারে' তথা 'ওয়ার লর্ডে' পূর্ণ হলো আফগান সংসদ। এদের অধিকাংশেরই না ছিল কোনো রাজনীতির ব্যাকগ্রাউন্ড না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এর অনিবার্য পরিণতি হলো প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির নির্বাসন।

তারপর কেটে গেল আরও পনেরোটা বছর। এই সময়ে অনুষ্ঠিত হলো আরও কয়েক দফা নির্বাচন। ২০০৯, ২০১০, ২০১৪, ২০১৮ও ২০১৯ এ। ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসেন আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা নৃতত্ত্ববিদ ডক্টর আশরাফ গণি। প্রথম জীবনে একজন শিক্ষক এবং পরে বিশ্ব ব্যাংকের আমলা গণির নির্বাচন ছিল দেশটির নির্বাচনী ইতিহাসে এক অভূতপূর্ব বিষয়। প্রথম রাউন্ড নির্বাচনে গণি মোট ভোটের মাত্র ৩৫% ভোট পান আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডা. আব্দুলস্নাহ পান প্রায় ৫৪%। কিন্তু নির্বাচনী আইনের ফাঁকফোকরের কারণে নির্বাচন দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়ায়। আর তখন আশরাফ গণি পান প্রায় ৫৫% আর ডা. আব্দুলস্নাহ পান ৪৫%।

অতীতের সব নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনও ছিল অরাজনৈতিক। না কোনো দল, না কোনো ইশতেহার। ফলে দেশটির রাজনীতি বিকশিত হওয়ার মতো কোনো সুযোগই পেল না। আশরাফ গণিও একজন ক্যারিয়ার বু্যরোক্র্যাট হিসেবে তার বিশ্বব্যাংকের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ চালাতে লাগলেন। রাজনীতি 'যেই লাউ সেই কদুই' রয়ে গেল। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো প্রচেষ্টাই পরিলক্ষিত হলোনা- না আফগান সরকারের পক্ষ থেকে, না আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে। এদিকে জাতিসংঘসহ সব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাজনীতিকে দূরে রেখে বা পাশ কাটিয়ে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু অধিকার, বাল্যবিয়ে নিরোধ- এজাতীয় কিছু বিষয়কে নিয়ে মেতে থাকল সারাটা সময়- যার ফল ভোগ করল কিছু কাবুলকেন্দ্রিক শহুরে এলিট। এরা ট্রেনিং আর এক্সপোজারের নামে আজ এই দেশে কাল ওই দেশে সেমিনার-সিম্পোজিয়াম অ্যাটেন্ড করে বেড়ালো। সাধারণ মানুষ আর রাজনীতি থাকল দূরে পড়ে।

জাতিসংঘও রহস্যজনক কারণে এ ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখা থেকে বিরত থাকল। শুধু তাই নয়- রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাশ কাটিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনকে নিয়ে মেতে থাকল তারা। ফলে রাজনৈতিক দলসহ সব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান মুখ থুবড়ে পড়ল। অবশ্য আফগানিস্তানে জাতিসংঘ কতটুকু স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছে তা নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অনেকেই মনে করেন চ৫ ভুক্ত দেশগুলোর সুপারিশের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা জাতিসংঘের আফগান মিশনের ছিল না। আর তাই হয়তো দেশ যখন প্রচন্ডরকম সংকটের ভিতর দিয়ে যাচ্ছে তখনও জাতিসংঘকে দেখা গেল কিছু শহুরে মোলস্না নিয়ে মিটিং করতে। উদ্দেশ্য তাদের কাছ থেকে তালেবানবিরোধী একটা 'ফতোয়া' আদায় করা। এ লক্ষ্যে তারা কাবুলে আয়োজন করল এক বিশাল ওলেমা সম্মেলনের। সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার ওলেমা এতে অংশগ্রহণ করলেন। খাওয়া-দাওয়া হলো। সম্মেলন শেষে তারা একটা ফতোয়ায় স্বাক্ষর করলেন। এভাবে অরাজনৈতিক শক্তিকে শক্তিশালী করার সব প্রচেষ্টাই চালালো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো দূর থেকে শুধু চেয়ে থাকল। এই পনেরো বছরে জাতিসংঘ টষবসধ ঝযঁৎধ (পড়ঁহপরষ). ণড়ঁঃয ঝযঁৎধ, ডড়সবহ ঝযঁৎধ, এসব গঠনেই সময় ও অর্থ ব্যয় করেছে বেশি, প্রতিমাসেই এদের সঙ্গে মিটিং করেছে; কিন্তু রাজনীতিবিদ আর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে গেছে অপাঙ্‌ক্তেয়।

বিচ্ছিন্নভাবে অবশ্য অনেক রাজনৈতিক দলের প্রধানের সঙ্গেই জাতিসংঘের মিশন প্রধান বা তার ডেপুটিরা দেখা-সাক্ষাৎ করেছেন। অনেকবার আমি নিজেও তাদের সঙ্গ দিয়েছি। কিন্তু সামষ্টিকভাবে কোনো কাজ করা হয়েছে বলে আমি মনে করতে পারছি না।

সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও একটা কাজ করেছে- খুবই সচেতনভাবে এবং সুচারুভাবে। তা হলো- রাজনীতিবিদদের চরিত্র হনন। তারা নতুন প্রজন্মকে এ কথা বোঝাতে সক্ষম হলো যে রাজনীতিবিদ মানেই খারাপ মানুষ, দুর্নীতিবাজ, রাজনীতি মানেই খারাপ। রাজনীতি করে বা রাজনৈতিক চিন্তা করে দেশের কোনো উন্নতি হবে না। এখন দরকার ব্যক্তির বিকাশ। এভাবে তারা দেশটাকে একটা বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার সুরঙে ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা এ কথা কাউকেই বুঝতে দেয়নি যে তালেবানিজম বা মৌলবাদ একটা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ারই বিকৃত রূপ। একে প্রতিহত করতে হলে সুস্থ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই করতে হবে।

প্রসঙ্গত উলেস্নখ করতেই হয়- জালালাবাদ (নাঙারহার) কিংবা গার্দেজে (পাকতিয়া) জাতিসংঘের আঞ্চলিক অফিসে বসে আমি নিজ উদ্যোগে অনেকবারই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের একত্রিত করে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। প্রতিবারই তারা কেন্দ্রীয়ভাবে এ ধরনের সমন্বয় সভা করার প্রস্তাব রেখেছে। আমি তাদের সেই সব প্রস্তাব লিখিত আকারে আমার সদর দপ্তরে পাঠিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়েছে আমরা (জাতিসংঘ) ব্যক্তির সুখ-দুঃখ নিয়ে যত চিন্তিত আর ব্যস্ত, সমষ্টি নিয়ে আদৌ তা নই। আসলে সমষ্টি থেকে ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করার কাজই করেছি বেশি। এভাবেই আমরা জনগণকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি। এ কথা অনস্বীকার্য যে রাজনীতি ব্যক্তিকে সমষ্টির সঙ্গে গ্রথিত করার মধ্যদিয়ে একটা সেতুবন্ধন রচনা করে। যখন সেই সেতুটি তৈরি হয়ে যায় তখনই সমাজ তার নিজের শক্তির উপর দাঁড়াতে সক্ষম হয়। গত দুই দশকে আফগানিস্তানে অনেক কিছুই করা হয়েছে; কিন্তু ব্যক্তিকে সমষ্টির সঙ্গে মিলানোর এই কাজটিই করা হয়নি। এই সুযোগে তালেবানরা গ্রামে-গঞ্জে তাদের প্রচারের কাজ চালিয়ে গিয়েছে বাধাহীনভাবে- অনেকের মতে 'লেনিনীয় কায়দায়'। এখনো তারা তা চালিয়ে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হয়তো বুঝতে পারেনি, অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করেছে, রাজনীতির শূন্যতায় মৌলবাদই কেবল দ্রম্নত বিকশিত হয়। সেটিই ঘটেছে। তাই আমি দেশটির সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে উদ্বিগ্ন হলেও অবাক হচ্ছি না। যা ঘটছে তা- অন্য আরও অনেক কারণের সঙ্গে বিরাজনীতিকরণেরও অনিবার্য ফসল।

মোশতাক আহমেদ : সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে