তৈরি পোশাক খাত বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আয়ের মধ্য অন্যতম। সঙ্গত কারণেই এই খাতের সার্বিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বৈশ্বিক তৈরি পোশাকের বাজারে শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছে ভিয়েতনাম। গত দশকের প্রায় বেশির ভাগ বছরই ধারাবাহিকভাবে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার মাধ্যমে ২০২০ সালে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাকের রপ্তানিকারকের জায়গায় উঠে এসেছে দেশটি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ করা দরকার, শুক্রবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডবিস্নউটিও) ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ-২০২১ শীর্ষক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাবের ব্যাপারে পরিসংখ্যানগত ধারণা দিতে বৈশ্বিক তৈরি পোশাক রপ্তানির এই চিত্র তুলে ধরে ডবিস্নউটিও। আমরা মনে করি, এমন তথ্য যখন সামনে এলো, তখন তা এড়ানোর সুযোগ নেই। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা।
এটাও আমলে নেওয়া দরকার, ডবিস্নউটিওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক তৈরি পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালে বিশ্ব তৈরি পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি ৬ দশমিক ৮০ শতাংশ থাকলেও ২০২০ সালে তা কমে ৬ দশমিক ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ। এছাড়া একই সময়ে গত বছর বৈশ্বিক তৈরি পোশাকের বাজারে ভিয়েতনামের রপ্তানি আগের বছরের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬ দশমিক ৪০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া দশকের তুলনায় দেখা যায়, ২০১০ সালে বৈশ্বিক তৈরি পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। একই বছর ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২ দশমিক ৯০ শতাংশ। আমরা মনে করি, এ চিত্র আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।
উলেস্নখ্য, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত বছর ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ৭ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ১৫ শতাংশ। ফলে আমরা মনে করি, রপ্তানি আগের তুলনায় হ্রাস পাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা মহামারি প্রায় প্রত্যেকটা খাতকেই বিপর্যস্ত করেছে। তৈরি পোশাক খাতও এর ব্যতিক্রম নয়। তবু এই বাস্তবতাকে মেনেই দেশের পোশাক খাতের রপ্তানির ক্ষেত্রে অগ্রগতি ধরে রাখতে সর্বাত্মক উদ্যোগ বজায় রাখতে হবে।
জানা যায়, গত বছর বাংলাদেশের বার্ষিক তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে, ওই বছর ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৯ বিলিয়ন ডলার। যদিও বিশ্বে তৈরি পোশাকের রপ্তানির শীর্ষ স্থানে রয়েছে চীন। ২০১৯ সালে বিশ্ব বাজারে চীনের তৈরি পোশাকের রপ্তানি ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ হলেও গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৬০ শতাংশে। এছাড়া পোশাক রপ্তানির হিসাবে বিশ্ব বাজারে চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পর তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারকের জায়গায় আছে ভিয়েতনাম। পোশাক রপ্তানির এই তালিকায় বাংলাদেশ চতুর্থ স্থানে আছে বলে ডবিস্নউটিওর প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারতকে পেছনে ফেলে পঞ্চম শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশের স্থানে উঠেছে এসেছে তুরস্ক। এর ফলে ষষ্ঠ স্থানে নেমে গেছে ভারত। গত বছর ভারতের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বাণিজ্য সংস্থার পরিসংখ্যান পর্যালোচনা প্রতিবেদনে যখন উঠে এসেছে, গত বছর ভিয়েতনামের তৈরি পোশাক পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ৭ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে ১৫ শতাংশ- তখন এই চিত্র পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যেগী হতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এছাড়া সামগ্রিকভাবে দেশের পোশাক খাতের ধারাবাহিক অগ্রগতি নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শ্রমিকদের জীবনমান এবং নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সামগ্রিক অগ্রগতি বজায় রাখতে সব ধরনের প্রচেষ্টা জারি থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।