বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকারখানা খোলার সিদ্ধান্ত

পথে পথে এমন দুর্ভোগ প্রত্যাশিত নয়
নতুনধারা
  ০২ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

করোনা সংক্রমণরোধে চলমান লকডাউনের মধ্যে গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ কারণে শনিবার সকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষ ঢাকায় ফিরতে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে ভিড় করতে থাকে। রাজধানীমুখী যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করার কথা থাকলেও বাস্তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ নেই। কর্মস্থলে ফেরার জন্য যে যেভাবে পারছেন যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর এভাবে যাত্রায় একদিকে যেমন চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে, অন্যদিকে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। বাড়ি থেকে কাকডাকা ভোরে রওনা হয়ে অনেক কষ্টে ভেঙে ভেঙে ঘাটে আসতে সক্ষম হয়েছেন অনেকেই। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে উঠতে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়েছে তাদের।

উলেস্নখ্য, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা এই রুট হয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করেন। কঠোর লকডাউনের কারণে গণপরিবহণ বন্ধ থাকলেও দক্ষিণাঞ্চল থেকে মানুষ নসিমন, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার মাহেন্দ্রসহ বিভিন্ন যানবাহনে ও পায়ে হেঁটে মাদারীপুরের বাংলাবাজার ফেরিঘাটে পৌঁছেছে। অনেকেই গাড়ি না পেয়ে হেঁটেই রওনা দেয়। চাকরি বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের শ্রমিকরা রংপুরে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। অবশেষে প্রশাসন তাদের বিশেষ বাসে ঢাকায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অল্প সময়ের জন্য গণপরিবহণ ও লঞ্চ চালুর ঘোষণা দেয়া হলেও তাতে সুফল বয়ে আনেনি।

সরকার যদি পোশাক শ্রমিকদের কথা বিবেচনা করে আগে থেকেই বাস চালু করে দিত, তাহলে এমন ভোগান্তিতে পড়তে হতো না। পশু পরিবহণের চেয়েও গাদাগাদি করে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে তাদের। এদিকে ভোগান্তির মধ্যে বৃষ্টির কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে ফিরছেন। স্বাস্থ্যবিধিসহ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে প্রশাসনের তেমন একটা নজরদারি নেই। সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে নাকি বলা হয়েছিল কারখানার আশপাশের শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা খোলা হবে। আর যারা লকডাউনে আটকা পড়েছেন, লকডাউন শেষে তাদের কাজে যোগদানে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না। যদি তাই হয়, তা হলে রাজধানীমুখী এমন জনস্রোত কেন।

কয়েক দিন আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে জানানো হয় ৫ আগস্টের আগে শিল্প ও কলকারখানা চালু হবে না। এরপরই মালিকরা সরকারের বিধিনিষেধ ও আইনকে তোয়াক্কা না করে জানিয়ে দেন ১ আগস্টের মধ্যে কারখানা খুলে দেওয়া না হলে 'লে-অফ' ঘোষণা করা হবে। মালিকদের এমন ঘোষণায় আইন অমান্য করার কারণে সরকারকে যেখানে কঠোর হওয়ার কথা, সেখানে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মালিকদের প্রতি অনুনয় করে ছাঁটাই, লে-অফ না করার অনুরোধ জানান। আমরা মনে করি, মালিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এভাবে হঠাৎ শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সুস্থ চিন্তার পরিচয় বহন করে না। শিল্পকারখানা চালুর আগে শ্রমিকদের জন্য পরিবহণ ও টিকা নিশ্চিত করা উচিত ছিল। দেশের লাখ লাখ শ্রমিককে এভাবে দুর্ভোগে ফেলা সমীচীন হয়নি। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে দূরদর্শী ও যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়াই সঙ্গত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে