তৃণমূলে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার

স্থানীয় সরকারের নিজস্ব তহবিল শক্তিশালী করবার প্রশ্নের সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক রয়েছে এবং এভাবেই সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন উঠে আসে। স্থানীয় বাজেটকে যথার্থভাবে তৈরি করা ও রূপায়ন করা সম্ভব উপযুক্ত দায়বদ্ধতার মাধ্যমে।

প্রকাশ | ০৪ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

স্বপন দাশ
সংজ্ঞাগতভাবেই স্থানীয় সরকার একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। যার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হলো স্বাধিকার। স্থানীয় সরকার গঠন করা হয়েছে স্থানীয় জনগণকে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানের জন্য। এর দ্বারা স্থানীয় নাগরিকদের চাহিদার ভিত্তিতে পরিষেবা প্রদান ও স্থানীয় উন্নয়ন সাধন করা হয়ে থাকে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কার্যত এখতিয়ার নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে মডেলকেই অনুসরণ করা হোক না কেন, আজকের দিনে বাস্তব সত্য হলো স্থানীয় সরকারের কাজের পরিধি ক্রমশই বিস্তৃত হচ্ছে। জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের ধারণা অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে স্থানীয় সরকারের উন্নয়নমূলক ভূমিকা ক্রমবর্ধমান। স্থানীয় সরকার কেবল সীমিতক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করবে তা কখনো অভিপ্রেত নয়। এলাকার সমস্ত উন্নয়নমূলক কাজ স্থানীয় সরকারের এখতিয়ার হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন। সাধারণভাবে স্থানীয় সরকারের কাজগুলোকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। (১) আবশ্যিক কাজ, (২) স্বেচ্ছাধীন কাজ ও (৩) অর্পিত কাজ। আবশ্যিক কাজগুলো হলো স্থানীয় সরকারের সেই সমস্ত কাজ- যে কাজগুলোর সঙ্গে স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের সম্পর্ক রয়েছে। দেশের স্থানীয় সরকারের আইন অনুসারে কিছু আবশ্যিক কর্তব্য পালন করতে হয়। এই ধরনের কাজগুলো নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকারি প্রতিনিধিদের রুটিন কাজের অন্তর্গত। স্থানীয় সরকারের স্বেচ্ছাধীন কাজ হলো সেই সমস্ত কাজ যেগুলো স্থানীয় সরকার স্বাধীনভাবে সম্পাদন করতে পারে। পরিকল্পনা নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। এই ধরনের কাজের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণ সাধারণভাবে এবং জনপ্রতিনিধিরা বিশেষভাবে পরিকল্পনা তৈরি থেকে মূল্যায়ন স্তর পর্যন্ত যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করে। শেষোক্ত অর্পিত কাজ বলতে সেইসব কাজগুলোকে বোঝায় যে, কাজগুলো স্থানীয় সরকারকে জাতীয় বা কেন্দ্রীয় সরকার সময় সময় অর্পণ করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেন্দ্র স্থানীয় সরকারকে যে কাজ অর্পণ করে তাতে পূর্ণ আর্থিক সাহায্য প্রদান করে থাকে। সাধারণত অর্পিত কাজের দায়িত্ব পালন না করবার কোনো এখতিয়ার স্থানীয় সরকারের থাকে না। অর্থনীতিবিদরা মূলত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নিয়ে অধিক আলোচনায় আগ্রহী। অথচ, উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে আজ স্থানীয় অর্থনৈতিক পরিচালনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশ থেকে শুরু করে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোতেও স্থানীয় সরকারের আর্থিক ভিত্তি নিয়ে গবেষণা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় সরকারের আর্থিক পরিপ্রেক্ষিত এত গুরুত্বপূর্ণ যে, স্থানীয় পুঁজি বা অর্থ না থাকলে বা সংগতির অভাবে যে কোনো স্থানীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ করবার সামর্থ্য থাকে না। অথচ স্থানীয় সরকারের অস্তিত্বের মূল কারণই হলো স্থানীয় স্তরের উন্নয়ন পরিচালনা করা। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের স্বাধীন অস্তিত্ব ও কাজকর্ম অনেকাংশই নির্ভর করে সেই সরকারের আর্থিক সংগতির ওপর। অর্থনীতিবিদরা স্থানীয় সরকারের আর্থিক সামর্থ্যকে অর্থনীতির মাপকাঠিতে বিচার করলেও বাস্তবে কিন্তু স্থানীয় সরকারের অর্থ বা পুঁজির সঙ্গে রাজনৈতিক প্রশ্ন জড়িত। প্রায় সমস্ত দেশেই জাতীয় বা কেন্দ্রীয় সরকার স্থানীয় পুঁজির বা রাজস্বের বণ্টন ঠিক করে দেয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে স্থানীয় অর্জিত রাজস্বের গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ স্থানীয় পর্যায়ে অর্জিত রাজস্বের দুর্বলতার অর্থ হলো স্থানীয় সরকারের দুর্বলতা- যার থেকে সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা। স্তব্ধ হয়ে পড়ে উন্নয়নের গতি। স্থানীয় সরকারের নিজস্ব আয় বা রাজস্ব এর মূল উদ্দেশ্য হলো- রাজনৈতিক বহুত্ববাদী বিন্যাসের মধ্যে এক ধরনের আর্থিক বহুত্ববাদী বিন্যাস প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থায় বিন্যাসে বহুত্ববাদ থাকবে। কিন্তু অর্থনৈতিক বিন্যাস যদি একমুখী হয় তবে সেখানে উন্নয়ন বা গণতন্ত্র পূর্ণমাত্রায় পৌঁছায় না। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশেই বহুত্ববাদী রাজনৈতিক বিন্যাস থাকলেও একমুখী অর্থনৈতিক বিন্যাস দেখা যায়। এই অবস্থা দূর করার জন্য বহুত্ববাদীরা দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোকে বহুত্ববাদী বিন্যাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের নিজস্ব আয় বৃদ্ধি করাকে আলোচনার কেন্দ্রীয় উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। যে কোনো গণতান্ত্রিক উন্নয়নশীল দেশে জনগণের আর্থিক দায়িত্বশীলতা থাকা উচিত। তা না হলে উন্নয়ন সম্ভব নয়। স্থানীয় পর্যায়ে আয়ের উদ্দেশ্য হলো জনগণের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগানো। জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি স্থানীয় সরকারের তহবিল এবং সামাজিক পুঁজি গঠনের অপর একটি উদ্দেশ্য। আর্থিক দায়িত্ব নিলে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রাষ্ট্রীয় তহবিলের অর্থবহ ও সঠিক ব্যবহার সম্ভব হয়। আমাদের তৃণমূলের স্থানীয় সরকার আর্থিক দিক থেকে সহায় সম্বলহীন। এ কারণে স্থানীয় সরকারের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অসমর্থতা থেকে বিভিন্ন ধরনের তত্ত্বের আত্মপ্রকাশ ঘটে। তহবিল গঠন বা আয়বৃদ্ধির প্রধান অবলম্বন হয় কর আরোপ। স্থানীয় সরকার বিধিসম্মতভাবেই কর আরোপের অধিকারী। এই কর দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রত্যক্ষ কর, যেমন- ব্যবসা কর, বসতবাড়ির কর, উন্নয়নমূলক কর, যানবাহনের কর, ভূমির ওপর কর ইত্যাদি। আবার পরোক্ষ কর সংগ্রহের অধিকারও রয়েছে স্থানীয় সরকারের, যেমন- প্রবেশ কর ও বিক্রয় কর। এই দুই ধরনের করকে আমরা স্থানীয় সরকারের নিজস্ব সম্পদের উৎস বলতে পারি। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের স্থানীয় সরকার প্রত্যক্ষ কর আরোপ করে ভোটারদের সরাসরি অসন্তোষের শিকার হতে চান না। যেমন- বসতবাড়ির বা হোল্ডিং ট্যাক্স। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এ দ্বিতীয় তফসিল এর ৪৭ ধারায় কর, ফি, টোল, ফিস ইত্যাদি ধার্যকরণ ও আদায়ের বিধান আছে। স্থানীয় সরকারের কর নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত। ক, স্থানীয় করের ভিত্তি জনগণের কাছে বোধগম্য হতে হবে এবং তার সঙ্গে এই কর সেই স্থানীয় সরকারের সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে, খ, স্থানীয় সরকারের প্রবর্তিত কর কাঠামো সহজ ও প্রত্যক্ষ হওয়া প্রয়োজন। কর সংগ্রহের প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং আইন কানুন সহজ হওয়া দরকার এবং গ, যে মাত্রায় করারোপ করা হচ্ছে স্থানীয় এলাকার মানুষ যেন সেই অনুপাতে সুবিধা পায়। স্থানীয় সরকারকে সেইদিকে নজর দিতে হবে। কর বহির্ভূত স্থানীয় সরকারের রাজস্বের মধ্যে অন্তর্গত বিষয়গুলো হলো পরিষেবা চার্জ, ফি, প্রকল্প রূপায়নে জনগণের অংশীদারিত্বমূলক ব্যয় এবং স্বেচ্ছায় শ্রমদান। পরিষেবা চার্জ স্থানীয় সরকার সংগ্রহ করে থাকে পরিষেবা ব্যবহারকারীদের থেকে। অন্যদিকে ফি সংগ্রহ করে কোনো কিছু অনুমোদনের ভিত্তিতে যেমন, বাড়ির নকশা অনুমোদন, জন্ম-মৃতু্যর নথিভুক্তকরণ, সার্টিফিকেট প্রদান করা ইত্যাদির ক্ষেত্রে। মডেল ট্যাক্স সিডিউল-২০১৩ এর বিধান অনুযায়ী ট্রেড লাইসেন্স ফি ইউনিয়ন পরিষদ সংগ্রহ করে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব রাজস্ব আয়ের সিংহভাগ সংগৃহীত হয় বসতবাড়ির কর থেকে, যাকে হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা বসতবাড়ির মূল্যের ওপর বার্ষিক মূল্য নির্ধারণপূর্বক ধার্য করা হয়। তৃণমূলের নিবিড় গণতান্ত্রিক চর্চা ও সুশাসন কায়েমে ইউনিয়ন পরিষদকে ওয়ার্ড সভার সম্পূরক কার্যক্রম হিসেবে অ্যাসেসমেন্টকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে সক্ষমতা প্রদর্শন করতে হবে। 'অ্যাসেসমেন্ট' বলতে প্রচলিত অর্থে হোল্ডিং ট্যাক্স নিরূপণে বসতবাড়ির মূল্য এবং তার বার্ষিক মূল্যের ওপর কর নির্ধারণ প্রক্রিয়াকেই নির্দেশ করে। এই কর আরোপ ও আদায়ে অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আগ্রহ দেখান না, আগেই বলেছি ভোটারদের অসন্তুষ্টি বাড়বে এই কর। যতটা আদায় হয় তাতেও স্বচ্ছতার অভাব থাকে। অনেক ক্ষেত্রে দৈনিক হিসাব বহিতে যথার্থ পোস্টিং হয় না। আদায়কারী সাপ্তাহিক জমা যথাযথভাবে ব্যাংক হিসাবে জমা করে না। অনেক সময় সদস্য-সদস্যাকে মাসিক সম্মানী বাবদ স্ব স্ব ওয়ার্ডের জনগণের হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ ধরিয়ে দেওয়া হয়। কাজটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে পরিষদের সচিব করে থাকেন, অনেক ইউনিয়ন পরিষদে এ ধরনের নজির আছে। যা শুধু অস্বচ্ছই নয় রীতিমত গোঁজামিল। খাতাপত্রে আদায় দেখানো হয় অডিট বা পরিদর্শন মোকাবিলার জন্য। এটি ইউনিয়ন পরিষদের অনেক পুরনো দুর্বল দিক। অনেকেই এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়েছেন স্বচ্ছতাও প্রদর্শন করছেন। বস্তুত, হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান জনগণের অধিকার আদায়ের বড় 'হাতিয়ার'। হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের মাধ্যমে জনগণ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার প্রাপ্য বুঝে নিতে বেশি তৎপর হন। যে জনপ্রতিনিধিরা অনাগ্রহী থাকেন প্রকান্তরে তারা জনগণকে অধিকার হারা করে রাখতে চান এবং দায়বদ্ধ হতে চান না। স্বচ্ছতা ও দায়পূরণের মধ্য দিয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, তাদের ট্যাক্সের টাকায় দেশের উন্নয়ন হয়, সেবা ক্ষেত্রের সম্প্রসারণ ঘটে। স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর ৪৫ ধারায় কর আরোপ ও আদায় সংক্রান্ত একটি স্থায়ী কমিটি গঠনের বিধান আছে। এই কমিটি তাদের সৃজনশীলতা দিয়ে এই ক্ষেত্রে একটি সাবলীল পদ্ধতিও বের করতে পারেন। জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে স্ব-নির্ধারণী প্রক্রিয়া অবলম্বন করা যেতে পারে। ট্যাক্স আরোপে অংশগ্রহণমূলক ব্যবস্থাপনা তথা ট্যাক্স নিরূপণ কমিটিকে প্রচলিত ধারার বাহিরে নিয়ে ত্রম্নটিমুক্ত করার একটি উদাহরণ, বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। টিমে থাকবেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য, সদস্যা, সাবেক একজন সদস্য/সদস্যা, বিগত নির্বাচনে পরাজিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, ওয়ার্ডের একজন প্রবীণ শিক্ষক, গ্রাম পুলিশ ও গ্রামের একজন বা দুজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। স্থায়ী কমিটি গড়ে দেবেন এই কমিটি যা পরিষদের মাসিক সভায় আলোচনাপূর্বক অনুমোদিত হবে। চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এই টিম বাড়ির আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে বসতবাড়ির মালিকের কাছ থেকে জেনে নেবেন তার বাড়ির মূল্য। হোল্ডিং ট্যাক্স আরোপকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য শুধু অ্যাসেসমেন্ট নয়, এই টিম প্রতি বাড়ির জন্য একটি ফর্ম ব্যবহার করবেন যাতে লিপিবদ্ধ করা হবে ওই পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য, তাদের চাহিদা ও প্রত্যাশার কথা। যেমন, গৃহকর্তার নাম, পিতার নাম, গ্রাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, মোবাইল নম্বর, মোট লোকসংখ্যা, পুরুষ-মহিলা, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, স্যানিটেশন/ল্যাট্রিনের অবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা কি আছে, আর্থিক অবস্থা, ঘরের অবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কোনো সহায়তা তিনি ভোগ করেন কিনা ইত্যাদি। একটি শিটে এটি লিপিবদ্ধ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু এর বাইরে হচ্ছে অনেক কথা, ছেলেমেয়ের পড়াশুনার কথা, চাকরির কথা, জলাবদ্ধতা নিরসনের কথা, রাস্তার উন্নয়ন, শরিকী বিরোধের কথা ইত্যাদি। সর্বোপরি চেয়ারম্যানসহ একটি জবাবদিহিমূলক টিম তার দোরগোড়ায়, তিনি তার অধিকারের কথা বলবেন। এভাবে গণতন্ত্রের ভিত মজবুত হওয়ার সুযোগ পায়। ইউনিয়নের সব ওয়ার্ডে, প্রতিটি বাড়ির তথ্যাবলি ইউনিয়নের তথ্যসেবা কেন্দ্রে সংরক্ষিত হচ্ছে। ডাটাবেজের প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে। এই জরিপে সর্বোচ্চ দুই মাস সময় লাগে। পরিষদে বসে বাড়ির মূল্যের বার্ষিক মূল্য নির্ধারণপূর্বক হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করে নোটিশ বোর্ডে টানানো হলো, কোন আপত্তি নেই। পুরা তালিকা জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ ও অনুমোদন। কল্পনা নয়। বাস্তবে এই পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক সফলতা দেখিয়েছে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়ন পরিষদ। শতভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের রেকর্ড একটানা গত ১০ বছর যাবত। চলে ওয়ার্ডবাসীর প্রতিযোগিতা, কোন ওয়ার্ড প্রথম শতভাগ হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করবে। ট্যাক্স মেলা হচ্ছে, লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে মানুষ ট্যাক্স দিচ্ছে। কোনো ট্যাক্স কালেক্টরও নেই, সবাই পরিষদে এসে ট্যাক্স দিচ্ছে উন্মুক্ত বাজেট সভার পূর্বে। কারণ বাজেটে ওই টাকার প্রকল্প প্রস্তাব থাকবে। স্বচ্ছতা ও ঐতিহ্য রক্ষার মিছিল দেখেছি, সামাজিক পুঁজি সৃষ্টির মহোৎসব যেন। নিজস্ব রাজস্ব সংগ্রহের তহবিল স্ফীত হচ্ছে। জনঅংশগ্রহণে ওয়ার্ড সভায় প্রকল্প গৃহীত হচ্ছে, বাস্তবায়নে জনগণের অংশীদারিত্ব ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, স্যানিটেশন সবখানে নিজস্ব অর্থায়নে স্থায়ী কমিটিসমূহের সহায়তায় বাস্তবায়িত হচ্ছে জনচাহিদার উদ্ভাবনী মূলক ও নান্দনিক প্রকল্পসমূহ। স্থানীয় সরকারের নিজস্ব তহবিল শক্তিশালী করবার প্রশ্নের সঙ্গে বাজেটের সম্পর্ক রয়েছে এবং এভাবেই সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রশ্ন উঠে আসে। স্থানীয় বাজেটকে যথার্থভাবে তৈরি করা ও রূপায়ন করা সম্ভব উপযুক্ত দায়বদ্ধতার মাধ্যমে। সব সংকীর্ণতাকে দূরে ঠেলে গড়ে উঠবে নতুন রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। যা আজকের গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় ঊন্নয়নের এক পথরেখা হতে পারে। স্বপন দাশ : উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ফকিরহাট, বাগেরহাট