‘বিভ্রান্ত হইও না পথিক’

আশাহীন ব্যক্তির বুকে যেমন হতাশা বাসা বঁাধে, তেমনি আশাহীন জাতির মনেও দেখা দেয় বিভ্রান্তি। আশাহীন জাতির বুকে আশা জাগিয়ে তাদের সামনের দিকে দুবার্র বেগে এগিয়ে নেওয়াই নৈতিকতাসম্পন্ন নেতাদের প্রধান কাজ। আজ আমাদের বেশির ভাগ নেতাই ভোগমত্ত ও দুবৃর্ত্ত। এদের কাছে বেশি কিছু আশা করা বোকামি হলেও হাল ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না।

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

সৈয়দ জাহিদ হাসান
বিপদ এলে বিভ্রান্তি এসেও হাজির হয়। বিপদে যে ধৈযর্ ধারণ করতে পারে, বিবেক-বুদ্ধি জাগ্রত রেখে যে বিপদ মোকাবিলা করতে পারে, বিভ্রান্তি তাকে ভুল পথে পরিচালিত করতে পারে না। দিনে দিনে আমাদের সামনে এসে জড়ো হচ্ছে বিভ্রান্তির পাহাড়। এই অচল, অটল পাহাড় ঠেলে এগিয়ে যেতে হলে চোখ-কান খোলা রাখা সাবর্ক্ষণিক কতর্ব্য। আজ আমরা সবাই যার যার সুবিধা আদায় করে নিতে ব্যস্ত। কেউ অন্য কারো কথা ভাবছি না, অন্যের সুখ-দুঃখের কথা আজ যেন আমরা ইচ্ছে করেই ভুলতে বসেছি। আজ আমরা প্রত্যেকেই আটকে যাচ্ছি ব্যক্তিগত স্বাথের্র বৃত্তে। স্বাথর্বৃত্তের বাইরে বেরিয়ে বৃহৎ পরিসরে দঁাড়ানোর সাহস আজ আমাদের কম মানুষেরই আছে। ‘মানবসেবা’, ‘মানবভক্তি’ কিংবা ‘মানবধমর্’ কথাগুলো মানুষের মন-মাথা থেকে তো গেছেই, এমনকি আজকাল বই-পুস্তকেও এই কথাগুলো খুব একটা দেখা যায় না। আজ আমরা প্রযুক্তিগত শিক্ষার অজুহাতে হৃদয়হীন হওয়ার যে নিদর্য় পথ ধরেছিÑ ওই পথের শেষে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে তা একটু ভেবে দেখা দরকার। চটুল কিংবা চটকদার কথায় আজ আমরা বিভ্রান্ত হয়ে সবর্স্ব হারাতে বসেছি। অনেকেই এর মধ্যে সবর্স্ব হারিয়ে ফেলেছি। বিভ্রান্তির সঙ্গে লোভযুক্ত হয়ে ক্রমাগত আমাদের নিয়ে যাচ্ছে সবর্নাশের অতল গহŸরে, আজ সবর্ত্রই দেখতে পাচ্ছি লোভের বিজ্ঞাপন। রাজনীতিতে লোভের বিজ্ঞাপন, ব্যাংক-বীমায় লোভের বিজ্ঞাপনÑ এমনকি ধমার্লয়েও আজ লোভের বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। মুলোর লোভ দেখিয়ে গাধাকে যেমন গন্তব্যে যেতে বাধ্য করা হয়, বড়শিতে খাবারের লোভ দেখিয়ে নিবোর্ধ-ক্ষুধাতর্ মাছকে যেমন জলের ভেতর থেকে ডাঙায় টেনে তোলা হয়Ñ তেমনি ‘অফারের’ লোভ দেখিয়ে আমাদের সবকিছু কেড়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র। ওরা আমাদের নিঃস্ব করতে চায়, উদ্বাস্তু করতে চায়, আমাদের মাথায় কঁাঠাল ভেঙে কৌশলে খেয়ে যেতে হয়। সারা পৃথিবীতেই আজ শঠের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শঠেরা ক্ষমতাবান হয়ে নিবোর্ধ-দুবর্লদেরÑওপর নানা রকম চাতুরির কৌশল প্রয়োগ করছে। এই কৌশল প্রথম প্রথম উপকারী মনে হলেও কিছুদিন পরে দেখা যায়Ñ ‘জান ধরে টান দিচ্ছে।’ বাংলাদেশে এখন ভোটের হাওয়া বইছে। ভোটের হাওয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘জোটের চাওয়া-পাওয়া’। কে কার সঙ্গে জোট করে কী কী সুবিধা পাবেÑ মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী হবেÑ এসব হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলো। ভোটের সময় বাংলাদেশের গরিব মানুষের আদর বাড়লেও ভোটের পরে তারা বন্য বঁাদরের মতো তাড়া খায় নিবাির্চত জনপ্রতিনিধিদের কাছে। এখনকার বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধিদের বেশিরভাগই আসছে ব্যবসায়ী গোষ্ঠী থেকে। ব্যবসায়ীরা লেনদেনে দক্ষ হয়ে থাকেন। ভোটের বাজারেও তারা লেনদেন করতে ওস্তাদি দেখিয়ে থাকেন। গরিবের ক্ষুধাকে পুঁজি করে এরা টাকা দিয়ে ভোট কিনে শুধু গরিবের সঙ্গেই নয়, পুরো জাতির সঙ্গেই প্রতারণা করে থাকেন। যারা অবৈধ কালো টাকা দিয়ে ভোট কিনতে চায়Ñ আগামী নিবার্চনে তাদের বয়কট করার মানসিক শক্তি প্রদশর্ন করা দরকার। আশাহীন ব্যক্তির বুকে যেমন হতাশা বাসা বঁাধে, তেমনি আশাহীন জাতির মনেও দেখা দেয় বিভ্রান্তি। আশাহীন জাতির বুকে আশা জাগিয়ে তাদের সামনের দিকে দুবার্র বেগে এগিয়ে নেওয়াই নৈতিকতাসম্পন্ন নেতাদের প্রধান কাজ। আজ আমাদের বেশির ভাগ নেতাই ভোগমত্ত ও দুবৃর্ত্ত। এদের কাছে বেশি কিছু আশা করা বোকামি হলেও হাল ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। যতক্ষণ না বঁাশ পাওয়া যায় ততক্ষণ কঞ্চি দিয়েই কাজ চালিয়ে নিতে হয়। আজ আমাদের সমাজে কাজ চালানোর মতো কঞ্চির সংখ্যাও সীমিত। তবু এই সীমিত সংখ্যা দিয়েই সীমাহীন সমস্যার সমাধান করতে হবে। অনেক প্রলোভন এখন সমাজের সামনে আসবে। এসব প্রলোভনের ফঁাদে পা না দিয়ে, মরীচিকায় বিভ্রান্ত না হয়ে যেখানে তৃষ্ণার জল পাওয়া যাবেÑ সেখানেই আশ্রয় নিতে হবে আমাদের। এখন বিচলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলেই মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যু নয়, জীবনের গানই হোক বিভ্রান্ত পথিকের এগিয়ে চলার মন্ত্র। সৈয়দ জাহিদ হাসান: কবি ও কথাশিল্পী ংুবফলধযরফযধংধহ২৯@মসধরষ.পড়স