৬ যুবকের লাশ উদ্ধার

সংশ্লিষ্টদের টনক নড়বে কবে?

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বৈশ্বিক নানান সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সাম্প্রতিক সময়ে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ যখন সামগ্রিক উন্নয়নের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠার জন্য উৎসাহবোধ করছে, ঠিক তখনই হত্যাকাÐের মতো দারুণ সব হতাশার ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে দেশবাসীকে। বস্তুত সমাজে নেতিবাচক ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অসহিষ্ণু আচরণও বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে। সমাজের বিভিন্ন স্তরে মানুষের বিকৃত আচরণের প্রবণতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে একের পর এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যেমন বেড়ে যাচ্ছে, তেমনি ভাবে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে হত্যাকাÐের মতো লোমহষর্ক ঘটনা। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, সম্প্রতি রাজধানীর দিয়াবাড়ি এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে ৬ যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার রাতে উত্তরার ১৬ নম্বর সেক্টরের দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের দুই যুবকের লাশ এবং রোববার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার পঁাচরুখী এলাকার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে গুলিসহ পিস্তল এবং মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়। এসব ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির নিদের্শক বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিভিন্ন অজুহাতে নিমর্মভাবে মানুষ খুনের বিষয়টি আমাদের সমাজে নতুন নয়। শুধু ঢাকা নয়, পুরো দেশেই পারিবারিক কলহ আর দ্ব›েদ্বর জেরে হত্যাকাÐ বাড়ছে। প্রতিনিয়তই এসব হত্যাকাÐের খবর জানতে হচ্ছে দেশবাসীকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও কঠোরতা সত্তে¡ও খুন-খারাবির ঘটনা সঙ্গত কারণেই উদ্বেগের জন্ম দিয়ে চলেছে। অতীতেও লক্ষ্য করা গেছে নিবার্চনকালীন সময়ে অপরাধীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন আসন্ন। নিবার্চনকে সামনে রেখে অপরাধীরা যেন প্রকাশ্যে আসতে না পারে সে ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর সতকর্তা অবলম্বন জরুরি বলেই মনে করেছেন বিশ্লেষকরা। পাশাপাশি যে কোনো হত্যাকাÐের ক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করে যথাযথ শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা নেয়াও কতর্ব্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, সামাজিক, পারিবারিক, সবোর্পরি মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় যেন সমাজকে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে চলেছে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক দ্ব›দ্ব-কলহের কারণে অবলীলায় মানুষ খুন হবে, এটা একটি সভ্য দেশে কাম্য হতে পারে না। আমরা লক্ষ্য করেছি, এ দেশে বাবা-মায়ের হাতে সন্তান হত্যার ঘটনা যেমন ঘটেছে, তেমনি সন্তানের হাতে জন্মদাতা বাবা-মায়ের প্রাণহানিও ঘটেছে। পরকীয়ার কারণে স্বামীর হাতে স্ত্রী এবং স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন হওয়ার ঘটনাও কম নয়। এক ভাই আরেক ভাইকে হত্যা করছে। দেখা যায় প্রতিটি ঘটনাই মামুলি বা তুচ্ছ কোনো কারণে। একটি ঘটনার নৃশংসতা ছাড়িয়ে যাচ্ছে আরেকটিকে। এসব কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতির দৃষ্টান্তই নয়, সামাজিক অসুস্থতারও লক্ষণ। সম্প্রতি উত্তরা এবং নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থেকে যে ৬ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, এসব মৃত্যুর পেছনেরও ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দ্ব›দ্ব-কলহ থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে প্রকৃত তদন্তের মধ্যদিয়েই এসব খুনের পেছনের আসল রহস্য উন্মোচিত হতে পারে বলে আমাদের বিশ্বাস। উত্তরার দিয়াবাড়ি এবং নারায়ণগঞ্জ এলাকায় মাঝেমধ্যেই সন্ত্রাসী কমর্কাÐ পরিচালনাসহ নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হওয়ার খবর আসে গণমাধ্যমে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এসব অপরাধ কিছুতেই রোধ করতে পারছে না আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। সাধারণভাবে খুন-খারাবি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিকেই নিদের্শ করে। অপরাধীর উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা বলবৎ থাকলে অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণে থাকারই কথা। আমাদের দেশে এ ক্ষেত্রে যে দুবর্লতা আছে তা স্বীকার করতেই হবে। অনেক আলোচিত চাঞ্চল্যকর হত্যা-নিযার্তনের ঘটনা বিচারহীন থাকছে দিনের পর দিন। দেখা গেছে, অপরাধীরা নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে লঘু দÐে পার পেয়েছে, যা পরবতীের্ত অপরাধপ্রবণতাকে বহুলাংশে উসকে দেয় বলেই বিশিষ্টজনেরা মনে করেন। সবোর্পরি বলতে চাই, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব। তাই যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর দ্রæত তার কারণ উদ্ঘাটন করা এবং অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার কোনো বিকল্প নেই। আর সামাজিক অপরাধপ্রবণতা রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক প্রতিরোধও দরকার। প্রত্যাশা থাকবে, সাম্প্রতিক ৬ হত্যাকাÐের রহস্য উন্মোচনসহ অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টরা দ্রæত উদ্যোগ নেবেন।