পাঠক মত

বর্তমান সমাজে নারীদের অবস্থান

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

চন্দ্রিকা চক্রবর্তী শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়
নারী হলো সৃষ্টির প্রতীক। সৃষ্টির অস্তিত্ব নারী ছাড়া কল্পনায় আনা যায় না। নারীদের অবদান নিয়ে তো রয়েছে অনেকের মুখেই জয়জয়কার। নারীদের অধিকার আদায় নিয়েও এখন সিংহভাগ মানুষ সচেষ্ট। এমনকি নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা যথাযথভাবে হয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকেই। হঁ্যা, অধিকার প্রতিষ্ঠা অনেকটাই হয়েছে। তবে সম্পূর্ণরূপে হয়েছে কি? অতীতের সঙ্গে বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলনা করে বলা যায়, অতীতে এমন এক সমাজও ছিল যেখানে নারীদের মূল্যায়ন করা তো দূরের কথা, 'নারী'-তে পরিণত হওয়ার আগেই সমাজ তাদের দিকে ছুড়ে দিত এক প্রতিকূল পরিবেশ। কন্যাসন্তান জন্ম হয়েছে? এটা ছিল সেই জন্মধাত্রী মায়ের জন্য অভিশাপস্বরূপ। কন্যাশিশু নামক সেই ভবিতব্য নারীকে জন্ম দেওয়ার জন্য অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনার শিকার হতে হতো মা নামক নারীকে। এক অর্থে, অঙ্কুর থেকে পরিপূর্ণ নারীরূপে প্রস্ফুটিত হওয়াটাই সেই নারীসত্তার জন্য ছিল একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। কিন্তু বর্তমান সমাজব্যবস্থা আমরা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সম্পূর্ণভাবে সক্ষম বলে দাবি করি। করব না-ই বা কেন? স্বামী মারা গেলে মেয়েদের এখন আগুনে ঝলসে তীব্র মৃতু্যযন্ত্রণা অনুভব করতে হয় না কিংবা বিধবা বলে তাকে সমাজে সম্মানহারা হতে হয় না, এমনকি নিজের ভালোমন্দ বোঝার আগেই অন্যের ভালো থাকার দায়িত্ব নিতে হয় না। এক কথায়, এখন সতীদাহ প্রথা নেই, বাল্যবিয়ে নেই, মেয়েদের পায়ে উন্নতি রোধের শিকল বাঁধা নেই, বিধবা বিয়েরও বিরুদ্ধাচরণ করা হয় না। এমনকি অনেক দেশেই নারী নেতৃত্ব প্রাধান্য পাচ্ছে। সেগুলো তো সবার চোখেই পড়ে। তাহলে নারীরা পুরুষের থেকে অধিকার আদায়ে কোনো অংশে পিছিয়ে আছে একথা বলার অবকাশ নেই। তবে খানিকটা সূক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত করলেই এখনো নারী-পুরুষের অধিকারের মধ্যে যে একটা অদৃশ্য পর্দা বিরাজমান সেটা অবলোকন করা যায়। ছেলে ভবিষ্যতে বড় হয়ে অর্থোপার্জন করে পরিবার চালাবে, মেয়েরা তো পরের ঘরের বাসিন্দা। তাদের এত পড়াশোনা করার দরকার কী? মেয়ে বিয়ে দিতে গেলে পাত্রপক্ষ 'কিছুই দাবি নেই' এই ছোট্ট এক বাক্যের মধ্যেও অসংখ্য দাবি ঢুকিয়ে দেন। যাকে বলা চলে যৌতুক। আরও সুন্দরভাবে বলা যায় ডিজিটাল ভিক্ষা। এরপর আসে বিয়ের পরের কথা। যদি পিতৃগৃহে শিক্ষা অর্জন করে শিক্ষিত হয়েও নারী শ্বশুরবাড়িতে আসে, অনেক ক্ষেত্রে সেখানেও তার চাকরি করার সুযোগ মেলে না। কারণ এখনো অনেক শিক্ষিত পরিবারেই একটা অশিক্ষিত চিন্তাধারা বিরাজ করে। সেটা হলো, ঘরের বউ বাইরে চাকরি করতে গেলে সংসার সামলাবে কে। আর বাচ্চারা তো বিনা শাসনে উচ্ছন্নে যাবে। নিরাপত্তা প্রত্যেকের জন্যই একটি মৌলিক অধিকার। সেটা জীবনের হোক, কিংবা সম্মানের। বাসা থেকে একা বের হওয়া কিংবা একটু রাত করে বাসার বাইরে থাকলে যেন অভিভাবকদের নাভিশ্বাস উঠে যায়। চিন্তার ছাপ তাদের চোখে-মুখে লেপ্টে থাকে। তাদের মেয়েটা ঠিক আছে কিনা, নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারবে কিনা, এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তারা কূল-কিনারা হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু উপরোক্ত একটা প্রতিবন্ধকতাও কি কোনো পুরুষের মোকাবেলা করতে হয়? এই সমাজব্যবস্থা কি সত্যিকার অর্থে নারীদের অধিকার বাস্তবায়ন করতে পেরেছে? নাকি সেটা শুধুমাত্র লিখিত এবং মৌখিকভাবে জাহির করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়।