সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি

আওতা আরও বাড়াতে হবে

প্রকাশ | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নে চলমান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দারিদ্র্য কমাতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা সহায়ক হচ্ছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর টেকসই উন্নয়নে চলমান সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সঠিক ব্যবহারে দেশে দারিদ্র্যের হার ৩৬ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ কমে ২৪ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। সংস্থাটির 'বাংলাদেশ সোশ্যাল প্রটেকশন পাবলিক এক্সপেন্ডিচার রিভিউ' শীর্ষক প্রতিবেদনে, সামাজিক সুরক্ষার প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও প্রকল্পের পরিকল্পনা, নকশা, প্রোগ্রামিং এবং ডেলিভারিসহ বিদ্যমান কাঠামোতে কীভাবে উন্নতি করতে পারে, সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলো মূলত গ্রামাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। শহরে জনসংখ্যার প্রায় পাঁচজনের মধ্যে একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। কিন্তু এর মধ্যে অর্ধেক পরিবার দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা মনে করি, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া যায়নি। তবে পরিকল্পনার কাছাকাছিই আছে। বাংলাদেশে গরিবদের চেয়ে ধনীরাই সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা বেশি পান। তাদের পেছনে বেশি খরচ হয়। বাংলাদেশে মাথাপিছু জিডিপির মাত্র দশমিক আড়াই শতাংশ গরিব মানুষের পেছনে খরচ হয়। আর ধনীদের পেছনে খরচ হয় দশমিক ৮ শতাংশ। এর মানে, গরিবের পেছনে যত টাকা খরচ হয়, এর চার গুণ বেশি টাকা ধনীদের জন্য খরচ হয়। এজন্য গ্রামীণ এবং শহুরে এলাকার মধ্যে ভৌগোলিক বরাদ্দ পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন। শহুরে এলাকায় ১৯ শতাংশ দরিদ্র জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ সামাজিক সুরক্ষার আওতায় রয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলে ২৬ শতাংশ দরিদ্র থাকলেও ৩৬ শতাংশ মানুষ এই কর্মসূচির আওতায় এসেছে। সঙ্গত কারণে অসমতা ও দারিদ্র্য দূর করতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়াতে হবে। এই খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে হবে। বাংলাদেশে নারীদের চেয়ে পুরুষরা বেশি সুরক্ষা পান। দেশে এখন প্রচুর গরিব লোক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা পান। এই কর্মসূচির আওতায় সরকার বিধবা ভাতা, দরিদ্র নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসা ভাতা ইত্যাদি দিয়ে থাকে। এ ছাড়া টেস্ট রিলিফ, ভালনারেবল গ্রম্নপ ফিডিং (ভিজিডি), কাজের বিনিময়ে টাকাসহ (কাবিটা) বিভিন্ন কর্মসূচিও আছে। তবে বাংলাদেশের সব নাগরিক পায়, এমন কোনো সর্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নেই। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম সামাজিক সুরক্ষা খাতে খরচের দিক থেকে বাংলাদেশ এশিয়ার বেশ ক'টি দেশের নিচে রয়েছে। তা ছাড়া সরকারি চাকরির পর অবসরভোগীদের প্রায় শতভাগই দারিদ্র্যসীমার ওপরে বাস করেন। অথচ বেসরকারি বা অন্য পেশার লোক ধীরে ধীরে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যান। এই বিষয়টিও সরকারকে দেখতে হবে। সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাড়িয়েছে। তবে এর আওতা আরও বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে দেশ আরও এগিয়ে যাবে।