বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
পাঠক মত

মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র হয়ে উঠুক আশার আলো

নতুনধারা
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

বাংলাদেশের তরুণ সমাজ আজ আসক্ত। এই আসক্তিটা হতে পারে স্মার্টফোন, ভিডিও গেমস আসক্তি। গেমস আসক্তিটা মারাত্মক না হলেও মাদকাসক্তি কিন্তু অতি ভয়ানক ও মারাত্মক। কারণ আমরা জানি করোনাকালে বাংলাদেশের তরুণরা অতিমাত্রায় ভিডিও গেমসে আসক্তি হয়ে উঠেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার জনপ্রিয় দুটি ভিডিও গেমস বন্ধ করে দিয়েছে। বন্ধ করে দেওয়ার ফলে আজ কিন্তু আর কেউ এই গেমসগুলো খেলতে পারছে না। তার মানে গেমস আসক্তি আসক্তি নয়, বরং চাইলেই এই আসক্তি অবসান ঘটানো যায়। কিন্তু মাদকাসক্তি এমন নয় যে চাইলেই তা থেকে আসক্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করা যাবে। আমরা জানি অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা, যে কারখানায় প্রতিনিয়ত উৎপন্ন হয় ক্ষতিকর কিছু চিন্তা। যে চিন্তাগুলো বিপদের কিনারায় নিয়ে যেতে পারে। একজন তরুণ যে কিনা দুর্জয় সে কিন্তু বিপথগামী হয় বেশি। কারণ এই তরুণ বয়সে যখন বিপথগামী কিছু মানুষের সাহায্য গ্রহণ করে তখনই মূলত মাদকের মতো ভয়ানক জিনিসে আসক্ত হয়ে ওঠে। আবার এমনও দেখা যায় যে সমাজের কিছু লিডার বা নেতা রয়েছে যারা তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে এসব তরুণদের ব্যবহার করে। তরুণদের টাকা-পয়সা এবং ক্ষমতা প্রদান করে তারা। যাতে করে তারা বিপথগামী হয়ে ওঠে। আর এখান থেকে সে মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কারণ হাতে টাকা-পয়সা আর অসৎ বন্ধু থাকলে খুব শিগগিরই বিপথগামী হওয়া যায়। এখন তারা তো মাদকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল, শুরু হলো মাদক গ্রহণ করা। এখন এই মাদক গ্রহণ করার জন্য তো টাকার প্রয়োজন। একটা সময় যখন সে আসক্ত হয়ে ওঠে অতিমাত্রায় তখন আর তার পিছনে কেউ থাকে না। তখন মাদক কেনার জন্য অর্থ ও তাকে সংগ্রহ করতে হয়। যেহেতু সে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নয়, তাই সে উক্ত অর্থ সংগ্রহ করার জন্য পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে। আবার বিভিন্ন গ্যাং-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ওঠে। সুন্দর এক জীবনের অধ্যায় তখন কালো রঙে ঢেকে যায়। এই ব্যক্তি তখন পরিবার, দেশ ও সমাজের জন্য হুমকির প্রধান কারণ হয়ে ওঠে। তাকে নিয়ে তখন চিন্তার অন্ত থাকে না। মাদকের এক ভয়াবহ চিত্র আজ বাংলাদেশের দেখা যাচ্ছে। দেশে সরকারিভাবে এক হিসাব অনুযায়ী মাদকাসক্তির ব্যক্তির সংখ্যা ৩৬, লক্ষ্য কিন্তু বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী এর সংখ্যা ৮০ লাখ। যা আমাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। এক সময় ছিল যখন দেশে মাদকের এমন ছড়াছড়ি ছিল না। তখন দেখা যেত দেশের শহরাঞ্চলে ছিল মাদকের ছড়াছড়ি। বর্তমানে গ্রামে দেখা যায় মাদকের ভয়ানক পরিণতি। আজ মাদককে কেন্দ্র করে কয়েকটা শ্রেণি গড়ে উঠেছে। একশ্রেণি রয়েছে যারা মাদক বিক্রয় করে সেখানেও কিন্তু কিশোর-তরুণদের দেখা যায়। আর এক শ্রেণি আছে যারা তা ক্রয় করে সেবন করে। এখন এই শ্রেণিকরণের ফলে মাদক আজ নিছক কোনো উপাদান নয়, বরং তা আজ হুমকির কারণ। সরকার দেশের এই মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করেছে। কিন্তু তবুও কমছে না মাদকের ভয়াবহতা। তাই বাংলাদেশের এই ভয়াবহ চিত্র পরিবর্তনের জন্য দরকার নিরাময় কেন্দ্রের। আশার কথা হলো- দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন স্থানে নিরাময় কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। কিন্তু এসব কেন্দ্র ব্যক্তিমালিকানায় গড়ে ওঠার কারণে সেখানে আসক্ত ব্যক্তিকে রাখতে গেলে এক বৃহৎ অর্থের প্রয়োজন হয়। তাই দেখা যায় এ কেন্দ্রগুলোতে শুধুই সমাজে ধনী ব্যক্তিগুলোর আধিপত্য। আবার এমনও শোনা যায় এসব কেন্দ্রতে নাকি নির্যাতনের এক বীভৎস চিত্র ফোটে। আবার এমনও শোনা যায় যে রোগীর সঙ্গে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের চিত্র। আর এই নির্যাতনের চিত্রগুলো নাকি দেখা যায়। তাই তো মাদকাসক্ত ব্যক্তি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় এবং পুনরায় আসক্ত হয়ে ওঠে। এই সমস্যা থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি তত্ত্বাবধানে ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি শুভযাত্রা শুরু হয় পহেলা অক্টোবর থেকে। মাদকাসক্তি ব্যক্তির জন্য যেখানে নিয়োজিত থাকবে দক্ষ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান ও কর্মী বাহিনী এবং মানিকগঞ্জে ৩০০ শয্যার একটি হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে, কারণ এসব নিরাময় কেন্দ্র চলবে পুলিশের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে। তাই সেখানে হয়তো বা কোনো নির্যাতন এবং অর্থনৈতিক কারচুপির বিষয়টা দেখতে পাওয়া যাবে না। এখানে কিন্তু একটা বিষয় থেকেই যায়, আর তা হলো- যে উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, তা বাস্তবায়িত হবে, নাকি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এমন একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে স্বচ্ছ এবং মানবিক হতে হবে। আর জনসাধারণের সমস্যাকে দেখতে হবে আন্তরিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। জনগণের জন্যই পুলিশ, জনগণের সেবার জন্যই তাদের জন্ম। এই কথাটা মাথায় রাখতে হবে। তবে এই উদ্যোগ সফল হবে বলে আশা করি।

জাফরুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে