সমৃদ্ধি অর্জনে জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হবে

প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এ দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ যার আয়তন মাত্র ১,৪৮,৪৬০ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৯২তম। দেশের আয়তনের তুলনায় এ দেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি। প্রতি বর্গ কিলোমিটার-এ প্রায় ১১০৬ জন লোক বাস করে যা বিশ্বে সপ্তম। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এ দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি, ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এদেশের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সম্ভাবনার ব্যাপার এই যে বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ জনগণ তরুণ যাদের বয়স ০-২৫ বছরের মধ্যে। এই তরুণ জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে দেশ খুব দ্রম্নত এগিয়ে যাবে। জনসংখ্যা বেশি হলে তা সবসময় ক্ষতি বয়ে আনে কথাটা কিন্তু পুরোপুরি সত্য নয়। বাংলাদেশ জনবহুল দেশ হওয়ায় এ দেশে খুব সস্তায় শ্রম পাওয়া যায়। আর এই সস্তা শ্রমকে পুঁজি করে দেশের পোশাক শিল্প ভালো অবস্থান করে নিয়েছে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে পোশাক পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩ হাজার ১৪৫ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে ২১ লাখ ৩০ হাজার ১৫৪ শ্রমিক কাজ করেন। বাংলাদেশে পোশাক শিল্প সুবিধা করার পিছনে প্রধান কারণ ছিল বাংলাদেশের জনসংখ্যা। শুধু পোশাক শিল্প নয় জনসংখ্যা রপ্তানিতেও বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে। ২০২০-২০২১ অর্থ বছরে রেমিট্যান্স আয় ছিল ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। বিদেশে বাংলাদেশি প্রায় ১ কোটি ২০ লাখেরও বেশি মানুষ কর্মরত আছে। যারা প্রতিনিয়ত নিজেদের শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের শতকরা ৭০ ভাগ জনসাধারণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সঙ্গে জড়িত। স্বাধীনতার পর থেকে জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেলেও খাদ্যোৎপাদন বেড়েছে অন্তত তিনগুণ। সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। এ দেশে বছরে উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬০ লাখ টন। বাংলাদেশ সবজি রপ্তানি করে বছরে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার আয় করে। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়টি আমাদের কাছে নতুন হলেও আমাদের দেশের তরুণরা এই সেক্টরে ভালোই দক্ষতা দেখিয়েছে। বিশ্বে আউটসোর্সিং তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থা তৃতীয়। বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মানুষ ফ্রিল্যান্সিং-এর সঙ্গে জড়িত। প্রতিবছর দেশে এই খাত থেকে ১০ কোটি ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। আউটসোর্সিং বাংলাদেশের শিক্ষিত বেকার তরুণদের জন্য আশীর্বাদ। বাংলাদেশ সরকার এই সেক্টরে বিশেষভাবে নজর দিয়েছে। তরুণদের আউটসোর্সিং-এ প্রশিক্ষণ প্রদান, আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনসংখ্যা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। চীনে ১৯৭৯ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে কোনো দম্পতি একটির বেশি সন্তান নিতে পারবে না বলে নীতি ছিল। যার ফলে গত ১০ বছরে চীনের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ০.৫৩%-এ। যার ফলে আগামী দিনে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে কর্মক্ষম শ্রমশক্তির জোগান দেওয়াটা অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে চীন এক সন্তান গ্রহণ নীতি শিথিলসহ সংস্কার পরিকল্পনা করেন। বাংলাদেশের শতকার ৬০ ভাগ জনসংখ্যা তরুণ আর মাত্র শতকরা ৬ ভাগ জনসংখ্যার বয়স ৬৫ বছরের উপরে। তাই ভবিষ্যতে দেশে শ্রমশক্তির কোনো ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শুধু এই জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর পারে দেশের উন্নয়নের পথ সুগম করতে। ২০১৯ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশের শিক্ষার হার ৭৩.৯ শতাংশ। এই বিশাল শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে শুধু চাকরির উপর নির্ভরশীল না করে কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। উন্নত প্রযুক্তিতে পশুপালন, বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে চাষাবাদ ইত্যাদি কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। বিদেশ থেকে দামি যন্ত্রপাতি আমদানি না করে দেশে যাতে উৎপাদন করা যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে দৃষ্টিপাত করতে হবে। আমরা বিদেশে যে শ্রমশক্তি রপ্তানি করি তার বেশির ভাগই অদক্ষ। যার ফলে তারা বাইরে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। বিদেশ যাওয়ার আগে তাদের ট্রেনিং প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে হবে। বিশাল বেকার জনগোষ্ঠীকে বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে আউটসোর্সিং-এর দিকে মনোযোগ দিতে হবে। প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে তাদের দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় কর্মমুখী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। সর্বোপরি জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি দেশের জন্য অভিশাপ নয়। জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করে এই বিশাল জনসংখ্যাকে দেশের জন্য আশীর্বাদে পরিণত করা সম্ভব। যথাযথ সরকারি পদক্ষেপই পারে এই বিশাল জনসংখ্যার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। মো. তাজুল ইসলাম শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া