বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরোক্ষ ধূমপানের শিকার প্রায় ৪ কোটি মানুষ

সঠিক পদক্ষেপ জরুরি
নতুনধারা
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

প্রত্যক্ষভাবে ধূমপান না করেও কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক পেস্নস ও গণপরিবহণে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। এ ছাড়া দেশে প্রায় পৌনে চার কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক পণ্য ব্যবহার করে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে 'তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োজনীয়তা' শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব তথ্য জানান ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর ডা. আহমদ খাইরুল আবরার। তিনি বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের বহুল ব্যবহার হৃদরোগ, ক্যানসার, বক্ষব্যাধি এবং অন্যান্য অনেক প্রতিরোধযোগ্য রোগ এবং মৃতু্যর অন্যতম প্রধান কারণ। দেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে। তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে ধূমপায়ীদের মারাত্মকভাবে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা ১৪ গুণ বেশি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে তামাকের ব্যবহার কমানোর মতো করারোপ করা হয়নি। তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে যে সব উন্নয়ন ও সামাজিক সংগঠন কাজ করছে তারাও এমনটি বলছেন। বলা হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেট, বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন (জর্দ্দা, গুল) তামাক পণ্যের দাম একদমই বাড়ানো হয়নি। সম্পূরক শুল্ক হারও আগের মতোই আছে। কিন্তু তামাকের ব্যবহার এবং এ সংক্রান্ত অর্থের অপচয় কমিয়ে আনতে প্রয়োজন ছিল আরও করারোপ। যেটা করলে সব ধরনের তামাক পণ্যের দাম বাড়ত। এতে সরকার যেমন বেশি রাজস্ব পেতো, তেমনি ধূমপায়ী এবং তামাক ব্যবহারকারীদের সংখ্যা আরও কমে আসত। আর এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ত জনস্বাস্থ্যের ওপর। তামাক একটি ধারাবাহিক ক্ষতিকর উপাদান- এ নিয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক অনাবশ্যক। তামাক চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন- সবখানেই ক্ষতির তথ্য মেলে। এই একটি পণ্য যা থেকে মানবদেহের কোনো লাভ হয় না, ক্ষতি ছাড়া। সেই ক্ষতিটা এখন আবার বহুভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, তামাক যে বা যারা সরাসরি গ্রহণ করছেন শুধু তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা নয়, পরোক্ষভাবে অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তামাকের পরোক্ষ ক্ষতিও কম নয়। যেখানে-সেখানে তামাকের ধোঁয়ার কারণে অধূমপায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অসতর্কতার কারণে শিশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবার তামাক ব্যবহারের ফলে মানবদেহে যে সব রোগ হচ্ছে তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসায় প্রতিটি পরিবারকেই অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রতিরোধযোগ্য মৃতু্যর অন্যতম কারণ তামাক। তামাক নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে সব গবেষণা হচ্ছে সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি তামাকের কারণে মৃতু্যঝুঁকি কতটা সক্রিয়। তামাক শ্বাসজনিত বিভিন্ন রোগ এবং ক্যানসারকে এখন সবেচেয়ে বিস্তৃত করছে। এসব রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতিও মারাত্মক। বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, তামাক চাষের কারণে অনেক ফসলি জমিতে ধান, পাট, ভুট্টা চাষ হচ্ছে না। বাংলাদেশকে অবশ্যই তামাকমুক্ত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা করেছেন। আমরা মনে করি, আমাদের সামনে এটি একটি বড় মাইলস্টোন। এই লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে ধাপে ধাপে আমাদের কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। কোনো কিছুই রাতারাতি অর্জন করা সম্ভব নয়। অনেক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সামনে রেখে নীতি-নির্ধারক এবং নাগরিক সমাজের যে যৌথ কণ্ঠস্বর তৈরি হয়েছে- তা আশার আলো দেখাচ্ছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য অর্জনে আরও এগিয়ে যাব সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে