শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী নেতৃত্ব

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে 'ভ্যাকসিন হিরো' পুরস্কারে ভূষিত হন। সর্বশেষ ২০২১ সালে তিনি এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কারে ভূষিত হন জাতিসংঘে।

প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯:৩৯

জোবায়ের আলী জুয়েল

গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার ২ কন্যা ও ৩ পুত্র, বড় কন্যা শেখ হাসিনা। শেখ মুজিব ও ফজিলাতুন্নেছার দ্বিতীয় সন্তান শেখ কামাল ১৯৪৯ সালে ৫ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তৃতীয় পুত্র শেখ জামাল ১৯৫৪ সালের ২৮ এপ্রিল টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। চতুর্থ সন্তান শেখ রেহানা ১৯৫৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। পঞ্চম সন্তান শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ঢাকায় ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসভবনে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার ডাক নাম হাসু। পিতা-মাতা তাঁকে হাসু বলে ডাকতেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা বাড়িতেই শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে টুঙ্গিপাড়ার নিকটবর্তী করালকোপা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। শেখ মুজিব তৎকালীন আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার পরিবারের সদস্য নিয়ে ঢাকায় বাস করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে বাসা ভাড়া নেন। শুরু হলো শেখ হাসিনার ঢাকা শহরে নাগরিক জীবনের পথচলা। কিন্তু তিনি কোনো দিন তার প্রিয় গ্রামকে ভোলেননি।

 

\হশেখ হাসিনা ঢাকায় এসে আজিমপুর গার্লস স্কুলে ভর্তি হন, শেখ মুজিবকে রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকার দরুন বারবার হাজতবাস করতে হয়েছে। তাই তিনি আদুরে কন্যা হাসুর লেখাপড়ার প্রতি যত্ন নিতে পারেননি।

১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় পাস করেন এবং ১৯৬৬ সালে ইডেন গার্লস কলেজে ভর্তি হন। তিনি স্কুল জীবন থেকেই ছাত্রলীগে যোগদান করেন এবং ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের সভানেত্রী ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইডেন কলেজের ছাত্রী সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ছাত্রলীগ থেকে তিনি ইডেন কলেজের প্রথম ভিপি নির্বাচিত হন। ইডেন কলেজের ছাত্রী মহলে খুব জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ছাত্রলীগ ৬ দফা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্র্তী সময়ে তিনি ৬ দফা আন্দোলনে ও রাজনীতিতে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। শেখ হাসিনার জীবনের লক্ষ্য ছিল একজন ডাক্তার অথবা একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়া। কিন্তু তার জন্য নির্ধারিত ছিল বাংলাদেশের নেতৃত্ব এবং তার নেতৃত্বে গণতন্ত্র উদ্ধার। তিনি ইতিহাসের গণতন্ত্রের মানসকন্যা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।

শেখ হাসিনা ১৯৬৭ সালে ইডেন গার্লস কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের ছাত্রী। পরবর্তী সময়ে নির্বাচিত হন রোকেয়া হলের ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি। পিতার আদর্শ, দেশপ্রেম এবং মায়ের উপদেশ ও গুণাবলির অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে তার মধ্যে।

১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সালের ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত তার পিতা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আবদ্ধ ছিলেন। তিনি মা, ভাইবোনসহ নিয়মিত কারাগারে পিতাকে দেখতে যেতেন এবং পিতাকে খাবার দিতেন। পিতা-মাতার আদর্শ তাকে জননেত্রী হতে সহায়তা করেছে। মহান পিতার আর্দশ ও মহান মানবপ্রেম তার জীবনের পাথেয়।

১৯৬৭ সালে শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে বিএ অনার্সের ছাত্রী থাকাকালীন পিতা-মাতার মতানুসারে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এম এ ওয়াজেদ রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার ফতেপুর গ্রামে ১৯৪১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ওয়াজেদ মিয়া ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথমস্থান দখল করে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন, বিয়ে করার পর শেখ হাসিনার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। পারিবারিক ও রাজনৈতিক কারণে তার এমএ ডিগ্রি নেয়া সম্ভব হয়নি।

১৯৬৩ সালে এম এ ওয়াজেদ মিয়া লাহোরে আণবিক শক্তি কমিশনের অফিসে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন এবং ঢাকায় আণবিক শক্তি কমিশনের অফিসে যোগদেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন।

১৯৬৭ সালের ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। শেখ মুজিবের ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাসভবনে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ হাজার টাকা দেন মোহরে বিয়ে নিবন্ধনকৃত হয়। শেখ হাসিনা ও ওয়াজেদ মিয়া বিয়ে নিবন্ধন দলিলে স্বাক্ষর করেন। বিয়ের সময় ওয়াজেদ মিয়ার বয়স ছিল ২৬ বছর এবং শেখ হাসিনার বয়স ছিল ২০ বছর। বিয়ের পর্ব অত্যন্ত সাধারণভাবে সম্পন্ন হয়। কারণ তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। বিয়ের পর ওয়াজেদ মিয়া ৩২ নম্বর ধানমন্ডির বাড়িতে বসবাস করতে থাকেন। পরিবারের সুখ-দুঃখে তিনি সঙ্গে ছিলেন এবং জ্যেষ্ঠপুত্রের ন্যায় কর্তব্য পালন করেছেন।

৫২ সালে শহীদ সালাম, বরকত, জব্বারের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে শেখ মুজিবের সুদীর্ঘ ১৮ বছরের দক্ষ নেতৃত্বে, আন্দোলন ও সংগ্রাম জেল-জুলুমের সার্থক ফসল আমাদের স্বাধীনতা। একাত্তরে বীর বাঙালি অস্ত্র হাতে তুলে শত্রম্ন হননের প্রবল মন্ত্রে সে সময় যুদ্ধে ঝাঁপিড়ে পড়েছিল। একটি ফুলকে বাঁচাতে কণ্ঠে তুলে নিয়েছিলেন শিকল ভাঙার গান। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পরাজিত পাকিস্তান শক্তি এবং দেশীয় ঘাতক চক্রের রক্ত পিপাসার শিকার হয়ে সপরিবারে শহীদ হন জাতির জনক তৎকালীন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান। কিন্তু শেখ হাসিনা স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে (বোন রেহানাসহ) দেশের বাইরে থাকায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। তারপর গত ৪৩ বছরে তার জীবনে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বাধা বিপত্তি, হামলা-মামলা, সংগ্রাম ও জেল-জুলুমের। আবার কখনো কখনো সফল রাষ্ট্রনায়কের। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত কেটেছে তার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দেশের বাইরে। এই ক'টি বছর ছিল হত্যা, কু্য, পাল্টা কু্য, কিংবা সামরিক শাসনের নামে গণহত্যা এবং বিচারের নামে প্রহসন চালিয়ে অসংখ্য দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যাসহ এক নৈরাজকর বাংলাদেশ।

ইউরোপের এক এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখোমুখি হয়েছিলেন পিতৃহারা এক ভদ্র মহিলা। তার হাতে বাংলাদেশের পাসর্পোট দেখে ইমিগ্রেশন অফিসার অত্যন্ত ঘৃণাভরে বলেছিলেন- 'তুমি বাংলাদেশের মানুষ? তোমরা বড় অকৃতজ্ঞ জাতি। যে মানুষটা তোমাদের মুক্তি এনেছিলেন তাঁকেই তোমরা হত্যা করলে'? একথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মহিলা। তিনি তখন খুব পরিচিত মুখ ছিলেন না। ঐ ইমিগ্রেশন অফিসারও জানতেন না, তিনি ইতিহাসের সেই মহানায়ক, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা।

১৯৮১ সালে দেশের মায়া মমতার টানে, দেশ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে শেখ হাসিনা তার নিজ জন্মভূমিতে ফিরে আসেন। এরপর থেকে বাংলাদেশে এক নতুন গণতন্ত্রের ইতিহাস রচিত হতে থাকে। তিনি গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে নিরন্তর চেষ্টা চালাতে গিয়ে বহুবার বিপক্ষ দলের হামলায় শিকার হয়েছেন এবং ঘাতকদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা সৃষ্টি কর্তার অপার মহীমায় আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন, বেঁচে থাকবেন। ১৯৮১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অসংখ্যবার ঘাতকদের হত্যা চেষ্টাকে ব্যর্থ করে কখনো রাষ্ট্রনায়ক, কখনো বা বিরোধীদলীয় নেত্রী, আবার কখনো রাজপথের প্রতিবাদী কান্ডারি হয়ে দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে নিরন্তন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সন্ত্রাসমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মৃতু্য ভয় উপেক্ষা করে ছুটে চলেছেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া।

১৯৮৮ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শোক দিবসের কর্মসূচি চলাকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় ঘাতকচক্র, কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। এরপর ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ সালে পতন হয় প্রেসিডেন্ট এরশাদের। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবনে শুরু হয় আরেক অধ্যায়। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একই বছর ১৫ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনের দিন ধানমন্ডির গ্রিন রোডে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে ঘাতকরা, কিন্তু এবারও ঘাকতদের টার্গেট ব্যর্থতায় পরিণত হয়। ১৯৯৪ সালে ডিসেম্বরে তত্ত্বাবধায়ক, সরকার ব্যবস্থার দাবিতে সারাদেশের আন্দোলন যখন তুঙ্গে সে সময় লংমার্চের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ট্রেনে যাওয়ার পথে ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার কামরাকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো গুলি বর্ষণ করে ঘাতকরা। কিন্তু সৌভাগ্য বশত তিনি অক্ষত অবস্থায় বেঁচে যান। ১৯৯৫ সালের মার্চ মাসে পান্থপথে আওয়ামী লীগের দলীয় সভায় তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়। ১৯৯১-৯৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেশ ক বার হামলা চালানো হয়। কিন্তু প্রতিবারই ঘাতকরা ব্যর্থ হয়েছে এবং জননেত্রী শেখ হাসিনা অক্ষত অবস্থায় বেঁচে গিয়েছেন।

অবশেষে ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন দীর্ঘ ২১ বছর পর অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘাতকচক্র এবং তাদের দোসর স্বাধীনতাবিরোধীরা তাকে নতুন হত্যার পন্থা খুঁজতে থাকে। ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে বোমা হামলার পূর্ব পরিকল্পনা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আগেই ফাঁস হওয়ায় চক্রান্তকারীরা ব্যর্থ হয়। এরপর ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালী পাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভা স্থলের কাছে প্রায় ৭৬ কেজি ওজনের শক্তিশালী বোমা পুঁতে রাখে ঘাতকরা। জঙ্গি তথা মৌলবাদী নেতা মুফতী হান্নানের নেতৃত্বে এই হত্যার চেষ্টা চালানো হয়, এবারো তিনি অক্ষত অবস্থায় প্রাণে বেঁচে যান। ২০০১ সালের ২৯ মে আবারও খুলনার রূপসা সেতুর উদ্বোধনের দিন তাকে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে যান। পরবর্তী সময়ে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় গেলে (২০০১ সালের ১ অক্টোবর) একজন মন্ত্রীর (তৎকালীন বিএনপি'র উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু) সরকারি বাসভবনে জঙ্গি নেতাদের নিয়ে বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনাকে যতবার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে ইতিহাসে তা একটি নজির বিহীন ঘটনা। জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদতে ঘৃণিত পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ নারকীয় হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে। কিন্তু বর্বর ঘাতকদের মূল টার্গেট ব্যর্থ হয়। গুরুতর আহত হয়েও এ যাত্রাও বেঁচে যান শেখ হাসিনা। সে সময়ে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা জিলস্নুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২১টি তাজাপ্রাণ মুহূর্তেই মৃতু্যর কোলে ঢলে পড়ে। গুরুতর আহত অসংখ্য মানুষ।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবদীগোষ্ঠী, ইসলামী জঙ্গি এবং ৭৫ সালের ঘাতক ও দোসরদের রক্ত চক্ষুতে পরিণত হয়েছেন। প্রতি মুহূর্তেই ওতপেতে বসে আছে ঘাতকচক্র। সুযোগ পেলেই ওরা শেখ হাসিনাকে হত্যা করে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃতি করবে। কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ওরা পরাজিত হবেই। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি প্রগতিশীল বাঙালিকে দেশ উদ্ধারের এ যুদ্ধে শরিক হতে হবে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য বিশ্বের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠান শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন ডিগ্রি ও পুরস্কার প্রদান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি, ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়, স্কটল্যান্ডের অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের বিশ্বভারতী এবং ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রাসেলসের বিশ্ববিখ্যাত ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয়, রাশিয়ার পিপিলস ফ্রেন্ডশিপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পিটার্সবার্গ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। এছাড়া ফ্রান্সের ডাওফি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডিপেস্নামা প্রদান করে। সামাজিক কর্মকান্ড, শান্তি ও স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকার জন্য শেখ হাসিনাকে বিভিন্ন সংস্থা সম্মানিত করেছে। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে সুদীর্ঘ ২৫ বছরের গৃহযুদ্ধ অবসানের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো তাকে 'হুপে-বোয়ানি' (ঐড়ঁঢ়যড়ঁবঃ-ইড়রমহু) শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করে। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতা ও দূরদর্শিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের রনিডলপ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ ২০০০ সালের ৯ এপ্রিল মর্যাদাসূচক 'চবধৎষ ঝ. ইঁপশ ৯৯' পুরস্কারে ভূষিত করে। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ক্ষুধার বিরুদ্ধে আন্দোলনের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে সম্মানজনক 'সেরেস' (ঈঊজঊঝ) মেডেল প্রদান করে। সর্বভারতীয় শান্তি সংঘ শেখ হাসিনাকে ১৯৯৮ সালে 'মাদার টেরেসা' পদক প্রদান করে। ১৯৯৮ সালে আন্তর্জাতিক রোটারি ফাউন্ডেশন তাকে চধঁষ ঐধৎরং ফেলোশিপ প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সর্বভারতীয় কংগ্রেস ১৯৯৭ সালে তাকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পদক প্রদান করে। আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাব কর্তৃক ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে গবফধষ ড়ভ উরংঃরহপঃরড়হ পদক ও ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে 'ঐবধফ ড়ভ ঝঃধঃব' পদক দেয়া হয়। ২০০৯ সালে ভারতের ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় অসামান্য ভূমিকা পালনের জন্য শেখ হাসিনাকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ব্রিটেনের গেস্নাবাল ডাইভার্সিটি পুরস্কার এবং ২ বার সাউথ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২০১৪ সালে ইউনেস্কো তাকে 'শান্তিরবৃক্ষ' এবং ২০১৫ সালে উইমেন ইন পার্লামেন্টস গেস্নাবাল ফোরাম নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তাকে রিজিওনাল লিডারশিপ পুরস্কার এবং গেস্নাবাল সাউথ-সাউথ ডেভেলটমেন্ট এক্সপো-২০১৪ ভিশনারি পুরস্কারে ভূষিত করে। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অব্যাহত সমর্থন, খাদ্য উৎপাদনে সয়ম্ভরতা অর্জন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে অবদানের জন্য আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ সালে তাকে সম্মাননা সনদ প্রদান করে।

জাতিসংঘ পরিবেশ উন্নয়ন কর্মসূচি দেশে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিবেশ এবং টেকসই উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য লিডারশিপ ক্যাটাগরিতে শেখ হাসিনাকে তাদের সর্বোচ্চ পুরস্কার 'চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-২০১৫' পুরস্কারে ভূষিত করেছে। এছাড়া টেকসই ডিজিটাল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঞবষবপড়সসঁহরপধঃরড়হ টহরড়হ (ওঞট) শেখ হাসিনাকে ওঈঞং রহ ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ অধিৎফ-২০১৫ প্রদান করে। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনাল এক্সেলেন্স অ্যাওয়ার্ডস-২০১৯ এ ভূষিত হন। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কবরী হলের এক অনুষ্ঠানে ড. কালাম স্মৃতি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান উপদেষ্টা টি পি শ্রী নিবাসন ও সংস্থাটির চেয়ারপারসন দীনা দাস শেখ হাসিনার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে 'ভ্যাকসিন হিরো' পুরস্কারে ভূষিত হন। সর্বশেষ ২০২১ সালে তিনি এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কারে ভূষিত হন জাতিসংঘে।

তার স্বামী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম ওয়াজেদ মিয়া ২০০৯ সালের ৯ মে ইন্তেকাল করেন। শেখ হাসিনার জ্যেষ্ঠপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় একজন তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদ। তার একমাত্র কন্যা সায়মা হোসেন ওয়াজেদ একজন মনোবিজ্ঞানী এবং তিনি অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ সবাইকে আমরা আহ্বান করব, আসুন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, স্ব-নির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করে সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলি। এই হোক আমাদের আজকের প্রত্যাশা।

সর্বোচ্চ ত্যাগ, ধৈর্য, সহযোগিতা ও মেধার বিকাশ ঘটিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্য পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং ব্যাপকভাবে সাফল্য অর্জন করেছেন।

জোবায়ের আলী জুয়েল : কলাম লেখক