বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দখল ও দূষণের শিকার নদী

যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে
নতুনধারা
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের ভেতরে ও আশপাশের নদী-খালগুলোর দখল এবং দূষণের বিষয়টি নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও বাস্তবতা হলো, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ অশুভ তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

দেশের সব নদী, বিল ও খালগুলোর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ এবং দূষণবিরোধী অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি আবারও যাতে দখলের প্রক্রিয়া শুরু না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদাররা এতটাই বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, তারা নদীর তীরে সীমানা পিলার পর্যন্ত উপড়ে ফেলে দেয়। ৫৩ জেলার নদী ও খালের বিভিন্ন অংশ দখল করেছে ১০ হাজারেরও বেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। তবে নদী দখলদারদের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে দখলদারদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করে থাকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের একটি অংশ। বস্তুত, দেশের সব নদী ও খালই দখলের শিকার হয়েছে।

দেশের বিভিন্ন স্থান, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নানা রকম প্রভাব খাটিয়ে নদী ও খালের তীরবর্তী স্থান দখলে নিয়ে অনেকে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন রকম স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এমনকি নদীর তীরবর্তী স্থানে অবৈধভাবে হাটবাজারও বসানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, নদী ও খালের জমি দখলদারদের সঙ্গে স্থানীয় ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধেও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী দখলের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের কোনো নেতাকর্মী যুক্ত আছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখতে হবে।

মনে রাখতে হবে, সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে নদনদী, খাল-বিল অবৈধভাবে দখল হয়ে যাওয়ার কারণে স্বাভাবিক পানি প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, নদনদী সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। এতে বর্ষাকালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অনেক স্থানে বৃষ্টির পানি জমে ফসল ও বাড়িঘর তলিয়ে যায়। কোনো কোনো স্থানীয় প্রভাবশালী দখলদার ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র তৈরি করে মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালিয়ে যায়।

তবে যেভাবেই দলিল করা হোক না কেন, কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিলে নদী রক্ষা আইন অনুযায়ী তীরের দখলকৃত জায়গা যে কোনো সময় উদ্ধার করা সম্ভব। দেশের সব নদীর স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নদী দখলমুক্ত করতে গিয়ে সরকারকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। পঁচাত্তরের পর একটি ধারা তৈরি হয়, মানুষ মনে করেছিল অপরাধ করলে বিচার হবে না, নদী দখল করলে বিচার হবে না। অনেকে নদীর পাড়ে গিয়ে ঘর তুলেছে, অনেকে নদীর পাড়ে কলকারখানা গড়ে তুলেছে। তারা মনে করেছে এটা দখল নয়, এটা আমার প্রাপ্য অধিকার। এই মনে করে কিন্তু অনেকে নদীর পাড় দখল করেছে। নদীগুলোকে রক্ষা করে এর প্রবাহ নিশ্চিত করাই নদী দিবসের অঙ্গীকার।

ভুলে গেলে চলবে না, দেশের নদীগুলোর যতটুকু অস্তিত্ব আছে তাও আজ অসহায়। নদী রক্ষায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। নদী উদ্ধারে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সুপারিশও কাজে আসছে না। দেশের নদনদী অব্যাহতভাবে দখল হয়েছে, হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, নদনদী না বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে না। দূষণ এবং অবৈধ দখলের হাত থেকে নদীকে বাঁচাইতেই হবে। এর অন্য কোনো বিকল্প নেই।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে