সংসদ নিবার্চনে ইভিএম ব্যবহার

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সবোর্চ্চ সতকর্তা অবলম্বন করতে হবে
আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিধান রেখে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অধ্যাদেশ আকারে জারি এবং বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এই অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেছেন। অধ্যাদেশে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মধ্যদিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নিবার্চনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পথ প্রশস্ত হলো। বলার অপেক্ষা রাখে না, যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া ভোট গ্রহণে ইভিএম চালুর এই প্রস্তাব নিয়ে ব্যাপক বিতকর্ চলে আসছে দীঘির্দন। রাজনৈতিক অঙ্গনও ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে বেশ সরগরম। শুরু থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ইভিএম ব্যবহারসংক্রান্ত প্রস্তাবের বিরোধিতা করে আসছে। অন্যদিকে জাতীয় নিবার্চনের আগ মুহূতের্ ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধনকেও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা সন্দেহের চোখে দেখছেন। গণমাধ্যমে এমনই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকষর্তার এই যুগে ইভিএমের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা তখনই যুক্তিযুক্ত হতে পারে, যখন তার যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়Ñ বিশেষজ্ঞের মত এমনটিই। বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবহারের প্রয়োগিক সক্ষমতা কিংবা প্রস্তুতির বিষয়গুলো আগেই সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেয়া জরুরি। আগামী জাতীয় সংসদ নিবার্চন প্রশ্নমুক্ত, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা অনুষ্ঠানে, বিদেশি ক‚টনীতিক ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের জবাবে, তার সরকারও অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নিবার্চন চায় বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে নিবার্চনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই নিবার্চনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে বাকবিতÐা বাড়ছে। গতকাল থেকে বহুল প্রতীক্ষিত সংলাপও শুরু হয়েছে। কিন্তু এতেই যে রাজনৈতিক নানারকম দ্ব›দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কা তিরোহিত হয়েছে এমন নয়। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতাও এ ব্যাপারে প্রীতিকর নয়। অতীতে যখন নিবার্চন কমিশনের সংলাপ অনুষ্ঠান হয়েছিল তখনও আশা করা গিয়েছিল, নিবার্চনকালীন সরকারের ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হবে। বাস্তবতা হলো, এর আশানুরূপ কিছুই দেশবাসী দেখতে পায়নি। এবার শেষ সময়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে নতুন করে বিতকের্র সৃষ্টি করা হলো বলেও অনেকে মনে করছেন। আমরা জানি, শুধু রাজনৈতিক মহলেই ইভিএম নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে তা নয়, খোদ কমিশনের ভেতরেও বিরোধিতা আছে। সঙ্গত কারণেই ইভিএম ব্যবহার কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাবে, সে বিষয়টিই বিবেচ্য হয়ে পড়েছে। তথ্য অনুযায়ী, খÐিতভাবে ইভিএমের প্রচলন করেছিল এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নিবার্চন কমিশন। কিন্তু এখন হঠাৎ করে জাতীয় নিবার্চন যেখানে এক থেকে দেড় মাস বাকি, সেখানে সামগ্রিকভাবে ইভিএমের প্রচলনে এত তাড়াহুড়া কেন করা হলো, সে বিষয়টিও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করেন, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ করা হলে কারচুপি হবে না। আর ইভিএমের ভালো-মন্দ সব দেখভাল করার দায়িত্ব ইসির। এ জন্য ইভিএমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসিরও থাকতে হবে যথাযথ উদ্যোগ। দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন অনুষ্ঠানের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। আর এর জন্য সবার জন্য সমান সুযোগও নিশ্চিত করতে হবে। নিবার্চনকালীন ইসির ক্ষমতা সবাির্ধক। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি কঠোর হলে, স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেলে জাতি একটি উল্লেখযোগ্য নিবার্চন উপহার পাবে এ ব্যাপারে দ্বিমতের সুযোগ থাকে না। আর ইসি যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে সরকারকেই। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও সমানভাবে সহযোগিতা করতে হবে ইসিকে। কেননা, দেশবাসী আর কোনো ধরনের সহিংসতাযুক্ত নিবার্চন দেখতে আগ্রহী নয়। সবোর্পরি বলতে চাই, নিবার্চনে উচ্চতর প্রযুক্তি ব্যবহার দোষের নয়, যদি তার সুষ্ঠু প্রয়োগ ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়। ইভিএম ব্যবহার করলে দ্রæততার সঙ্গে ফল প্রকাশ, জালভোট প্রদান রোধ করাসহ নানা সুবিধা আছে বলেই ইসি আসন্ন নিবার্চনে ইভিএম ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে। আমরাও মনে করি, শুধু ইভিএম ব্যবহার করলেই হবে না, আগে ইভিএমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও নিতে হবে কাযর্কর উদ্যোগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন অংশগ্রহণমূলক এবং সবদিক দিয়েই গ্রহণযোগ্য হোক এটাই দেশবাসীর দাবি। যা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইসি এবং সরকারের।