দুই সাংবাদিকের নোবেল প্রাপ্তি সাংবাদিক জগতে নতুন দিক উন্মোচন

যেই দুইজন সাংবাদিক নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন তারাও কিন্তু অন্যায় মেনে নেননি, আপসের তোয়াক্কা করেননি, নিজের ব্যক্তিত্বকে রঙ্গমঞ্চের বাজারে বিকিয়ে দেননি।

প্রকাশ | ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০৯:৪০

শতদল বড়ুয়া

দীর্ঘ ৮৬ বছর পর একসঙ্গে দুই সাংবাদিক নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন। যা বাংলাদেশসহ সব দেশের সাংবাদিকের জন্য মাইলফলক হিসেবে উন্মোচিত হলো সর্বসাধারণের জন্য। ৯ অক্টোবর, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ, শনিবার দেশের সব সংবাদপত্রে এ খবর প্রচারিত হয়েছে। সূত্রে জানা যায়, ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে সাংবাদিক হিসেবে প্রথম নোবেল শান্তি পুরস্কার পান জার্মানির নাগরিক কার্ল ভন ওসিয়েৎজকি। সাংবাদিক নোবেল শান্তি পুরস্কার পান প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান শাসকগোষ্ঠীর গোপনে সামরিক শক্তি বাড়ানো কর্মসূচি বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করায়। সাংবাদিকতা পেশায় যারা নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন তারা কিন্তু নিজের কথা ভাবেননি। মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় সাহসী পদক্ষেপ শুধু বিদেশি সাংবাদিকদের বেলায় নয়, আমাদের স্বদেশি সাংবাদিকরাও যথেষ্ট ভূমিকা রেখে চলেছেন। কিন্তু অপ্রিয় সত্য কথা হলো সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ নয়। আমরা অনেকটা প্রতিহিংসা টাইপের। বিদেশেও এ ধরনের ঘটনা দৃশ্যমান। যেই দুইজন সাংবাদিক নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন তারা হলেন- ফিলিপাইনের নাগরিক মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার দিমিত্রি মুরাতভ। এখানে উলেস্নখ্য যে, মারিয়া রেসা ফিলিপাইনের প্রথম নাগরিক হিসেবে এ সম্মানে ভূষিত হলেন। যুগ্মভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ায় আমার ব্যক্তিগত তরফ এবং বাংলাদেশের সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এদের স্যালুট জানাই। গত শুক্রবার নরওয়ের রাজধানী অসলোতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই সাংবাদিকের নাম ঘোষণা করেন নোবেল শান্তি পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান বেরিট রেইস-আন্ডারসন। প্রকাশিত খবরে আরো জানা যায়, ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের (বিলুপ্ত) সাবেক প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভের পর রুশ হিসেবে মুরাতভ নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন। মারিয়া রেসা ফিলিপাইনের সংবাদভিত্তিক ওয়েভসাইট রেপলারের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। রাশিয়ার পত্রিকা নোভায়া গেজেটার প্রধান সম্পাদক। বাকস্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করলেও কিছু অপশক্তির কাছে সাংবাদিকরা বারবার হেরে যাচ্ছে। তারপরও সাংবাদিকরা থেমে নেই। সত্য প্রকাশে আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়েও লক্ষ্যে পৌঁছানো যাচ্ছে না। কেন যাচ্ছে না সে কথা একটা গল্পের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। এক কাঠুরিয়া বনে গিয়ে কুড়াল দিয়ে গাছ কাটছে। গাছ কুড়ালকে বলছে- আমায় এভাবে কষ্ট দিয়ে তুমি কাটছ কেন? আমারতো বেশ কষ্ট হচ্ছে, এভাবে আমাকে আর কষ্ট দিও না। উত্তরে কুড়াল বলছে, কই আমি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি? আমিতো কিছুই করছি না। তাছাড়া আমার কোনো ভূমিকা নেই। তোমার জাত ভাই এ কাজ করছে আমাকে ব্যবহার করে। এখানে কুড়াল বুঝাতে চাইল- কুড়ালকে গাছের বাঁট দিয়ে আটকিয়ে ওই বাঁট ধরে কাটুরিয়া গাছ কাটছে। একথার মানে হলো- গাছের বাঁট দিয়ে কুড়াল আটকিয়ে গাছ কাটছিল কাঠুরিয়া। সাংবাদিকতা বিষয়ে উলিস্নখিত ঘটনাবলির অবতারণা হয়। কিছু সাংবাদিক পত্রিকা মালিকের তোষামোদি করে ছড়ি ঘুরাচ্ছে অন্যের ওপর। এর সুবিধা ভোগ করছে পত্রিকার মালিকরা। যারা মালিকের তোষামোদিতে ব্যস্ত তারা কিন্তু পরিচিত সাংবাদিক তথা সিনিয়র সাংবাদিক। নিজের আখের ঘুচানোর জন্য অন্যান্য সাংবাদিকদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। যারা এই পবিত্র মহান পেশায় আছেন, তারা চায় একটা পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা লাভ করুক। বাংলাদেশে অনেক জুয়েল জুয়েল সাংবাদিক আছেন। যাদের পরিচিতি শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এদের খ্যাতি রয়েছে। আমার জানামতে একটা পত্রিকায় যারা মালিকের তোষামোদি করে তারা ভালো অবস্থানে রয়েছে। সিনিয়র সাংবাদিকরা সে পত্রিকায় বেশি দিন টিকতে পারল না। দোষ একটাই, তারা তোষামোদি করতে রাজি না। শেষে দেখা গেল ওই পত্রিকার সৎ ও নীতিবান সাংবাদিকদের মালিক বিদায় করে দিল নানা অজুহাত দেখিয়ে। যাদের সাংবাদিকতা বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই তারাই চাকরিতে বহাল তবিয়তে আছে। দীর্ঘকাল সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত রয়েছি। কিন্তু নীতি-আর্দশকে বিসর্জন দিতে পারছি না বলে বহুবিধ ভোগান্তিতে আছি। কিন্তু আত্মবিশ্বাস, আত্মতুষ্টির কোনে কমতি নেই। নিজেকে অপরাধীও ভাবি না। যেই দুইজন সাংবাদিক নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলেন তারাও কিন্তু অন্যায় মেনে নেননি, আপসের তোয়াক্কা করেননি, নিজের ব্যক্তিত্বকে রঙ্গমঞ্চের বাজারে বিকিয়ে দেননি। তারাও কিন্তু স্ব-স্ব অবস্থানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। আপসকামিতা কি তা তারা না জানার কারণে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আজ সাফল্যের সর্বোচ্চ শিকড়ে পৌঁছে গেছেন। এদের থেকে অনেক কিছু শিখার আছে আমাদের। তাবেদারিতে পা না রাখলে, আপসকামিতাকে গুরুত্ব না দিলে, নিজের ব্যক্তিত্বকে বিকিয়ে না দিলে সাফল্য শুধু সময়ের ব্যাপার। তারা কিন্তু একদিনে এই সাফল্যের অধিকারী হননি। তাদের অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, মালিকের দৃষ্টিতে হয়তো বা তারা ভালো ছিল না। তবুও তারা হাল ছাড়েনি। যার ফলাফল নোবেল শান্তি পুরস্কার। এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কার আরও অনেকেই পেয়েছেন। তাদেরও জানাই অভিনন্দন। বাংলাদেশ সরকার কিন্তু সাংবাদিকবান্ধব। করোনাকালীন এই কঠিন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বারবার সাংবাদিকদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছেন। আমরা সাংবাদিকরাই যত অনিষ্টের গোড়া। সরকার থেকে পত্রিকার মালিকরা সব সুযোগসুবিধা পাচ্ছে। এর ছিটেফোঁটা সাংবাদিকরা পাচ্ছেন না। বাংলাদেশে অনেক সাংবাদিক গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছেন। কারণ তারা আদায়ের কৌশল জানেন। আবার তারা নেতাও সাজেন। সাধারণ সাংবাদিকদের তারা বলেন, আমরা এখনো কিছুই পাইনি, আপনাদের জন্য করছি। অথচ তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পস্নট, ফ্ল্যাট, গাড়ি এমনকি আলিশান প্রাসাদ গড়েছেন। যাক আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। আসুন না সবাই মিলে হলুদ সাংবাদিকতা ছেড়ে সুস্থ সাংবাদিকতায় ফিরে আসি। এ জীবনতো জীবন না, আরো জীবন আছে, যেখানে পদলেহনি, তোষামোদি, চরিত্র বিকিয়ে দেওয়ার কোনো পথ খোলা নেই। পরিশেষে বলব- নিজে খান, অন্যরা অভুক্ত আছে কিনা সে বিষয়েও নজর রাখুন। এতে আত্মতৃপ্তি আছে, আছে নিজেকে ফুটিয়ে তোলার সুযোগ। আমরা হয়তো বা নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না। অন্তরের শান্তিতো পাব। এটা একশ পার্সেন্ট সঠিক। সবার জীবন নিরাময় আনন্দে ভরে উঠুক, এ কামনা করছি। শতদল বড়ুয়া : সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক