বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

করোনাকালে বেড়েছে বাল্যবিয়ে

সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে
নতুনধারা
  ১৬ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

করোনা মহামারির কারণে কেবল বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই বাল্যবিয়ে বেড়েছে। বাল্যবিয়ের ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে মারা যাচ্ছে ৬০ জনেরও বেশি কিশোরী; আর এই মৃতু্যর অর্ধেকই ঘটছে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশসমূহে। শিশু অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে ভারতের অন্যতম জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতি বছর পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলোতে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় ৯ হাজার ৬০০ কিশোরী, যা এ জনিত কারণে বার্ষিক মৃতু্যর প্রায় অর্ধেক। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন কিশোরী মারা যাচ্ছে আফ্রিকায়। এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সন্তান ধারণ ও জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি বছর মারা যায় ২০০০ কিশোরী। দৈনিক হিসাবে এই মৃতু্য সংখ্যা ৬ জন। এছাড়া পূর্ব এশিয়ায় প্রতি বছর মারা যায় ৬৫০ জন এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে এই সংখ্যা ৫৬০। এই কিশোরীদের সবাই বাল্য বিয়ের শিকার।

বাল্যবিয়ে বন্ধে গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বজুড়ে নানামুখী তৎপরতা চলছিল এবং তাতে কিছু সাফল্য আসাও শুরু করেছিল, কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সেসব তৎপরতা অনেকাংশে সীমিত হয়ে পড়ায় ফের উন্নয়নশীল ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোতে বাড়ছে এই সামাজিক সমস্যা। এছাড়া, বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়িয়েছে মহামারি। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে আরও এক কোটি কিশোরী বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

আমাদের দেশের পরিস্থিতিও সুখকর নয়। করোনাকালীন দেশে আগের চেয়ে ১৩ শতাংশ শিশু বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলে এ সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। করোনা মহামারির মধ্যে গত দেড় বছর দেশের ৯ জেলায় সাড়ে সাত হাজারের বেশি বাল্যবিয়ে হয়েছে। এসব জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাল্যবিয়ের ঘটনা খুলনায়। এই জেলায় তিন হাজারের বেশি ছাত্রী বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছে। গত বছরের মার্চ থেকে টানা দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ১২ সেপ্টেম্বর সারা দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। খোলার পরও অনেক ছাত্রী স্কুলে নিয়মিত আসছে না বলে নজরে আসে শিক্ষকদের। এরও আগে অনেক ছাত্রী নিয়মিত অ্যাসাইনমেন্টও জমা দিচ্ছিল না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণি পড়ুয়া অনেক ছাত্রীরই বিয়ে হয়ে গেছে। প্রধানত করোনাকালে আর্থিক অনিশ্চয়তা ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতাকে বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা। এসব বাল্যবিয়ের ৮৫ শতাংশই হয়েছে সংকটকালে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণে। ৭১ শতাংশ বিয়ে হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়। করোনাভাইরাস সংকটে বিদেশ থেকে ফেরত আসা পাত্র পাওয়ায় ৬২ শতাংশ শিশুর পরিবার বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়েছে। ৬১ শতাংশের বিয়ে হয়েছে অভিভাবকের সীমিত উপার্জনের কারণে পরিবার চালানোয় হিমশিম খাওয়ায়। এটা হতাশাজনক চিত্র। আমরা মনে করি, বাল্যবিয়ে রোধে ও কন্যাশিশু-কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা বাড়াতে সরকারকে আরও মনোযোগী হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে