বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইনের শাসন

কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে
নতুনধারা
  ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

একটি দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি এবং জনসাধারণের যথাযথ বসবাসের প্রশ্নে আইনের শাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বলার অপেক্ষা রাখে না, আইনের শাসনের অর্থ হচ্ছে সব নাগরিকের প্রতি আইনের সমান দৃষ্টি অর্থাৎ আইন সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হবে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর দেশে সব স্তরে আইনের শাসন যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে অপরাধ কমে আসবে এবং বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও দুর্নীতি দূর করা সম্ভব এমন আলোচনা বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিশ্বের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জরিপকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রোজেক্টের (ডবিস্নউজেপি)-২০২১ সালের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সূচক প্রকাশ করেছে।

তথ্য মতে, দক্ষিণ এশিয়ার ছয় দেশ নেপাল, শ্রীলংকা, ভারত, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সূচকে ৪র্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের ১৩৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৪তম। গত বছর বৈশ্বিক আইনের শাসন সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ০.৪১, এ বছর দাঁড়িয়েছে ০.৪০-এ। সংস্থাটি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আইনের শাসনের সূচক প্রকাশ করে আসছে। ডবিস্নউজেপির সূচকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে বৈশ্বিকভাবে শীর্ষে অবস্থান করছে ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভীয় অঞ্চলের তিন দেশ নরওয়ে, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ড। অপরদিকে, সর্বনিম্নে অবস্থানকারী তিন দেশ হলো- গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, কম্বোডিয়া এবং ভেনেজুয়েলা।

আমরা বলতে চাই, এই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার যে, এই সংস্থাটি আটটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আইনের শাসনের এই সূচক করে। এগুলোর মধ্যে সরকারি ক্ষমতা, সরকারি উন্মুক্ততা, দুর্নীতি, মৌলিক অধিকার, আদেশ ও নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণ প্রয়োগ এবং ফৌজদারি ও নাগরিক বিচার ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। মোট ৪৪টি বিষয় দেখা হয় এখানে। ফলে প্রত্যেকটি বিষয় আমলে নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। উলেস্নখ্য যে, সূচকে উঠে এসেছে, আইনের শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে 'অর্ডার অ্যান্ড সিকিউরিটি' বিভাগে ভালোভাবে কাজ করেছে বাংলাদেশ। এ সম্পর্কে ডবিস্নউজেপির বক্তব্য হলো, বাংলাদেশ কার্যকরভাবে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে। এমনকি অভ্যন্তরীণ সংঘাত বেশ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এছাড়া এমনটিও বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের মানুষ এখন নিজেদের সম্পত্তি রক্ষার্থে ব্যক্তিগতভাবে সহিংসতায় জড়ায় না। এসব ক্ষেত্রে-১ এর মধ্যে দশমিক ৬৩ পয়েন্ট পেয়েছে বাংলাদেশ; আর দক্ষিণ এশিয়ার ছয় দেশের মধ্যে অর্জন করেছে দ্বিতীয় স্থান। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলো ইতিবাচক। একইসঙ্গে সূচক নির্ধারণের সামগ্রিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ এবং তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে।

উলেস্নখ্য, দক্ষিণ এশিয়ার ছয় দেশের শীর্ষে অবস্থান করছে নেপাল। দশমিক ৫২ পয়েন্ট অর্জনকারী এই দেশটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সূচকে বৈশ্বিকভাবে রয়েছে ৭০তম অবস্থানে। এ ছাড়া ৭৯তম অবস্থানে ভারত ও ৭৬তম অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান রয়েছে সূচকের একদম শেষদিকে। এই দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ১৩০তম ও ১৩৪তম। এটিও আমলে নেওয়া দরকার, 'মুক্ত সরকার' বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বিষয়সমূহ, অর্থাৎ আইনগত ও সরকারি তথ্য প্রকাশ, তথ্য অধিকার, জনগণের অংশগ্রহণ প্রভৃতিতে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর শূন্য দশমিক ৪২। দক্ষিণ এশিয়ার ছয় দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এই দুই পয়েন্টের গড় হিসেবে ২০২১ সালে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে আমরা বলতে চাই, দেশকে এগিয়ে নেওয়া এবং নাগরিকে সুন্দরভাবে বসবাসের স্বার্থে আইনের শাসনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। সঙ্গত কারণেই বিশ্বের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জরিপকারী আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড জাস্টিস প্রোজেক্টের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সূচক সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশে বিভিন্নভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে, আর এই পরিস্থিতিতে আইনের শাসন সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। আর তা সবার সুন্দরভাবে বসবাসের জন্যও জরুরি। আইনের শাসন সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে