সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা

অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি জরুরি

প্রকাশ | ১৮ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এ দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। উগ্রপন্থিরা সামান্য অজুহাতে তাদের ওপর হামলা করছে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এ নিয়ে শোরগোল হয়। আবার একসময় তা মিইয়ে যায়। আবার হামলা হয়। বারবার হামলা হওয়ার কারণ, এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হয় না। পরিকল্পিত এসব হামলা উদ্‌ঘাটনের দায় প্রশাসনেরও রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর এসব হামলার পেছনে আছে সাম্প্রদায়িক শক্তি। তারা এসব হামলার মাধ্যমে তাদের শক্তির জানান দিতে চায়। এটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য হুমকি। এসব হামলা রুখতে প্রশাসনের ব্যর্থতা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। হামলা রুখতে সব অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক হতে হবে। এসব হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, পরিকল্পিত। ঘটনা ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সেটি আর হয় না। প্রকৃত ব্যবস্থা নিলে এভাবে হামলার পুনরাবৃত্তি হতো না। দেশের সংখ্যালঘুদের মূল্যহীন করে রাখতে চায় একটি উগ্রবাদী চক্র। এই চক্র সবসময় সক্রিয় রয়েছে। এদের প্রতিহত করতে হবে। বাংলাদেশের চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ পৃথিবীর কোথাও নেই। আমাদের আশপাশের দেশগুলোর দিকে তাকালে এর প্রমাণ মিলে। বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল নজির, যেখানে সব ধর্মের লোকরা যুগ যুগ ধরে শান্তিতে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে প্রশংসিত। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলাদেশে চমৎকার একটা পরিবেশ বিরাজ করছে বহু বছর ধরে। সবার মাঝে গড়ে উঠেছে ভাতৃত্বের বন্ধন। ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাই দেশের স্বাধীনতার জন্য '৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ঢেলে দিয়েছিল বুকের তাজা রক্ত। এ দেশের মুসলমানরা বিপদে হিন্দুদের আশ্রয় দিয়েছে, প্রাণ বাঁচিয়েছে। এ দেশে ঈদ-পূজা পাশাপাশি পালিত হয়। এই দুই উৎসব এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিদেশ থেকে যারাই এসেছেন তারা আমাদের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশংসা করেছেন। এমন নজির পৃথিবীতে বিরল। ২০০১ সালে নির্বাচনের পরও এ দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর পূর্ণিমা শীল ধর্ষণসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া বীভৎস ঘটনাগুলো। এ ছাড়া কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, যশোরের পালপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু নির্যাতন, গাইবান্ধায় আদিবাসীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের সম্প্রীতির ক্ষেত্রে কলঙ্কজনক আঁচড় হয়ে আছে, এ বিষয়গুলোও বহুল আলোচিত। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, বাড়িঘর দখলের বিষয়টিও কম আলোচিত নয়। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সরকারকে আরো উদ্যোগী ও আন্তরিক হতে হবে। কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ গোষ্ঠীর দ্বারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছে তারা দেশ, জাতি ও সব ধর্মের শত্রম্ন। এই ধরনের উদ্বেগজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।