জেলহত্যা দিবস

জাতীয় জীবনে এক কলঙ্কময় অধ্যায়

প্রকাশ | ০৩ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
আজ ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। বাঙালির জাতীয় জীবনে এক কলঙ্কময় দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিজর্ন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতাÑ বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নিমর্ম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাকাÐের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় ববের্রাচিত এ ধরনের হত্যাকাÐ পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাÐ ছিল একই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে ষড়যন্ত্রকারীরা জাতীয় চার নেতাকে তাদের সরকারে যোগদানের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর এই জাতীয় চার নেতা সেই প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করায় তাদের নিমর্মভাবে জীবন দিতে হয়। বলা দরকার যে, জেলহত্যা দিবসটি ইতিহাসে কলঙ্কিত এবং শোকের দিন হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সত্তে¡ও দীঘির্দন এই হত্যাকাÐের বিচার শুরু করা যায়নি। যারা দেশের জন্য এত ত্যাগ এবং স্বাধীনতা অজের্ন ভ‚মিকা রেখেছিলেন, তাদের বিচার নিয়ে এই দীঘর্ সময়ক্ষেপণও জাতির জন্য লজ্জাজনক। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদেের্শ বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং জেলহত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৩ সালের এপ্রিলে জেলহত্যা আপিলের রায়ের মধ্যদিয়ে বহু প্রতীক্ষিত মামলার চ‚ড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়, যা বাঙালি জাতির কলঙ্কমোচন এবং ইতিহাসের দায় শোধ হওয়ার পথে অন্যতম রায় হিসেবে মনে করা যায়। রায়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলহত্যা (জাতীয় চার নেতা) মামলায় নিম্ন আদালতের দেয়া তিনজনের মৃত্যুদÐের রায় বহাল রাখে আপিল বিভাগ। আমরা মনে করি, এই হত্যাকাÐটি শুধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল এমন নয়, বরং সদ্য স্বাধীন দেশ থেকে প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনা মুছে দেয়াও ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, প্রতিটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক হত্যাকাÐের নেপথ্যে কাজ করে সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য। যা বাঙালি এখনো উপলব্ধি করছে। অবশেষে বাংলার মাটিতে এ হত্যাকাÐের বিচার হয়েছে, এটা দৃষ্টান্ত। তবে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এ হত্যাকাÐের পুনঃতদন্ত ও পুনবির্চার দাবি করেছিলেন। এ ছাড়া জেলহত্যা মামলায় যথাযথ তদন্ত হয়নি বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। গত বৃহস্পতিবার শহীদ এম মনসুর আলী স্মৃতি সংসদ আয়োজিত রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়াসর্ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে জেলহত্যা দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারাও বলেছেন যে, জেলখানার মতো জায়গায় এ হত্যাকাÐের প্রকৃত সত্য জানাতে একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে। আমরা মনে করি, বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় নেয়া সমীচীন। কেননা, এটা মনে রাখা জরুরি যে, বঙ্গবন্ধু থেকে জেলহত্যার ঘটনা এবং স্বাধীন বাংলাদেশে নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা বারবার করা হয়েছে। আর এ জন্যই সব ধরনের অপশক্তির মূলোৎপাটনের কাযর্কর উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে। সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, জেলহত্যা মামলার বিচার অবশ্যই তাৎপযর্পূণর্। একইসঙ্গে উল্লেখ্য, সম্প্রতি, বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যা মামলার পলাতক আসামিদের খুঁজে এনে বিচারের রায় কাযর্কর করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। আমরাও মনে করি, যত দ্রæত সম্ভব এই রায় কাযর্কর করা দরকার। এটি স্পষ্ট যে, মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী চার নেতার হত্যাকাÐ কোনোভাবেই কেবল গুটিকতক বিপথগামী অস্ত্রধারীর কাজ হতে পারে না, জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করতে, দেশকে মুক্তি সংগ্রামের চেতনার বিপরীত দিকে নিয়ে যেতে স্বাধীনতার শত্রæদের ঘোরতর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। আপিল রায়েও এই হত্যাকাÐের নেপথ্যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রবিরোধী যে কোনো ষড়যন্ত্রের স্বরূপ জাতির সামনে উন্মোচিত হওয়া আবশ্যক। জেলহত্যায় দায়ীদের দÐ কাযর্করের মধ্যদিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হোকÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।