জাতিসংঘের আহ্বান

আমলে নিতে হবে

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর চলমান হামলা বন্ধ ও নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সেপ্পো বলেন, 'বাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর সাম্প্রতিক হামলাগুলো সামাজিক মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে উদ্ভূত- যা সংবিধানের মূল্যবোধের পরিপন্থি এবং বন্ধ করা প্রয়োজন।' আমরা সরকারের প্রতি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি। উলেস্নখ্য, গত ১৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার অষ্টমীতে কুমিলস্নার একটি মন্দিরে 'কোরআন অবমাননার' অভিযোগ তুলে কয়েকটি মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন জেলায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছে। সর্বশেষ রোববার রাতে রংপুরের পীরগঞ্জে ফেসবুকে এক তরুণের 'ধর্ম অবমাননার' অভিযোগ তুলে সেখানে জেলেপলস্নীতে ২৯টি বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। রংপুরের ঘটনায় সম্পৃক্তদের 'তাৎক্ষণিকভাবে চিহ্নিত' করা হয়েছে দাবি করে বলেছেন, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪৫ জনকে ইতোমধ্যে আটক করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এ দেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়। উগ্রপন্থিরা সামান্য অজুহাতে তাদের ওপর হামলা করছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। বারবার হামলা হওয়ার কারণ, এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হয় না তাই। পরিকল্পিত এসব হামলার দায় প্রশাসনেরও রয়েছে। এটা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জন্য হুমকি। এসব হামলা রুখতে প্রশাসনের ব্যর্থতা বারবার প্রমাণিত হচ্ছে। হামলা রুখতে সব অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক হতে হবে। এসব হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, পরিকল্পিত। ঘটনা ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সেটি আর হয় না। প্রকৃত ব্যবস্থা নিলে এভাবে হামলার পুনরাবৃত্তি হতো না। ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাই দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ঢেলে দিয়েছিল বুকের তাজা রক্ত। এ দেশের মুসলমানরা বিপদে হিন্দুদের আশ্রয় দিয়েছে, প্রাণ বাঁচিয়েছে। এ দেশে ঈদ-পূজা পাশাপাশি পালিত হয়। অথচ একটি উগ্রবাদীগোষ্ঠী এটি চায় না। তারা সুযোগ পেলেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে অপতৎপরতা চালায়। এদের প্রতিহত করতে হবে। ২০০১ সালে নির্বাচনের পরও এ দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ করা হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর পূর্ণিমা শীল ধর্ষণসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ঘটে যাওয়া বীভৎস ঘটনাগুলো। এ ছাড়া কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, যশোরের পালপাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘু নির্যাতন, গাইবান্ধায় আদিবাসীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাগুলো বাংলাদেশের সম্প্রীতির ক্ষেত্রে কলঙ্কজনক আঁচড় হয়ে আছে, এ বিষয়গুলোও বহুল আলোচিত। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, বাড়িঘর দখলের বিষয়টিও কম আলোচিত নয়। আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য সরকারকে আরো উদ্যোগী ও আন্তরিক হতে হবে। কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ গোষ্ঠীর দ্বারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছে, তারা দেশ, জাতি ও সব ধর্মের শত্রম্ন। এই ধরনের উদ্বেগজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি।