চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হোক

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একটি অপার সম্ভাবনাময় দেশের নাম বাংলাদেশ। এখানে যেকোনো অসাধ্য কাজ অতি সহজেই সাধন করা যায়। আবার কখনো কখনো নগণ্য কাজও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। এদেশের ক্রিকেটাররা ম্যাচ হারতে হারতে জিতে, কখনো জিততে জিততে হারে। বিশ্বের সমৃদ্ধশালী দেশগুলোকে পিছনে ফেলে দ্রæত ধনী হওয়ার দেশের তালিকাসূচকে আমরা একনম্বর স্থানটি দখলেও সিদ্ধহস্ত। সবর্জন স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত বাণীকেও ‘যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত সে জাতি তত বেশি উন্নত’ এদেশ ভুল প্রমাণ করেছে। এখানে যে যত বেশি শিক্ষিত সে তত বেশি বেকার জীবনের অভিশাপপ্রাপ্ত। সম্প্রতি প্রকাশিত শ্রম জরিপ অনুযায়ী ২০১৬-২০১৭ অথর্বছরের শেষে সারা দেশে ২৬ লাখ লোক বেকার জীবনযাপন করছে। এদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার তরুণ -তরুণী উচ্চশিক্ষিত হয়েও চাকরি পাচ্ছে না। দেশের মোট বেকারের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। তার মধ্যে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা হলো ১৫ শতাংশ এবং স্নাতক পাস করা ১২ শতাংশ। অথচ যারা জীবনে কোনোদিন স্কুলেই যায়নি এমন লোকদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা মাত্র ২ শতাংশ। উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ক্রমবধর্মানের ফলে অনেকেই উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে; দিনে দিনে বাড়ছে ড্রপ আউটের সংখ্যা। ইউজিসির মতে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পযাের্য় বছরে ১৩ লাখ আসন শূন্য থাকছে। দিনে দিনে এর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অনাসর্ ও মাস্টাসর্ সম্পন্ন করতে একজন ছাত্রের ২৬-২৭ বছর লেগে যায়। ফলে সে চাকরিতে আবেদনের সময় পায় মাত্র ৩-৪ বছর। ২৬-২৭ বছরের অজির্ত সাটিির্ফকেটের মেয়াদ মাত্র ৩-৪ বছর! ভাবতে অভাগ লাগে। আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষিত কমর্ক্ষম জনশক্তির কমর্হীনতার কারণে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গ্রামীণ সমাজে শিক্ষা এখনো একমাত্র চাকরির মাধ্যম বলেই বিবেচিত হয়। গ্রামের একজন কৃষক, দিনমজুর যখন দেখছে, এলাকার সবচেয়ে মেধাবী ছেলেটি দেশের সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে সবোর্চ্চ ডিগ্রি নিয়েও চাকরি পাচ্ছে না; তখন সেই কৃষক নিজের ছেলেকেও পড়াশোনা করাতে আর ভরসা পাচ্ছে না। মেয়েদের অবস্থা সেক্ষেত্রে আরও নাজুক। দেশের বেকারের হার কমাতে চাইলে, চাকরিতে আবেদনের অবাধ সুযোগ দিতে হবে। এখানে বয়সকে যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা মোটেও যৌক্তিক হবে না। কারণ এতে করে বেকারত্বের হার আরও বেড়ে যাবে। আমাদের দেশে ২৬-২৭ বছরে স্নাতক পাস করে একজন ছাত্র যখন দেখেন, তার সাটিির্ফকেটের মেয়াদুত্তীণর্ হতে মাত্র ৩-৪ বছর বাকি; তখন স্বভাবতই সে ছোটখাটো কোনো চাকরিতে প্রবেশ করতে সাহস পায় না। ফলে তার জন্য তিন-চার বছর বেকার থাকাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এতে করে একসময় দেখা যায়, সে না পায় সরকারি চাকরি, না পায় বেসরকারি চাকরি। কারণ ভালো কোম্পানিগুলো সরকারি চাকরির মতো বয়সকে ৩০ মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। ফলে জাতীর সম্ভাবনাময় এই তরুণ সমাজ একসময় চাকরিবঞ্চিত হয়ে হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়। মাদকাসক্ত, চোরাচালান, ছিনতাই, ডাকাতির মতো ভয়াবহ অপরাধে তারা জড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে সলীল সমাধি গ্রহণ করে। বেকারত্বের অভিশাপ সইতে না পেড়ে অনেকেই আত্মহত্যার মত ঘৃণ্য কাজ করতেও কুষ্ঠিত হয় না। আর চাকরিতে প্রবেশের বয়সে কোনো সীমা না থাকলে, স্নাতক পাস করার সঙ্গে সঙ্গেই একজন ছাত্র যেকোনো ছোটখাটো চাকরিতে প্রবেশ করতে উৎসাহ পাবে। কেননা তার হাতে জ্ঞানচচার্র মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভালো চাকরি পাওয়ার সুযোগটা রয়েছে। এতে করে দেশের বেকারত্ব অনেকটাই কমে যাবে। এ জন্য উন্নত বিশ্বে চাকরিতে প্রবেশের বয়স এত বেশি। পৃথিবীর ১৬২ দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এই তরুণ সমাজকে উপেক্ষা করে নয়, বরং সঙ্গী করে নিতে হবে। তাদের পেশিশক্তি ও শানিত মেধাশক্তিকে কাজে লাগাতে পারলেই আমরা আমাদের কাক্সিক্ষত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সক্ষম হবো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার কমর্পরিকল্পনায় তারুণ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি তরুণদের জন্য নিজের বাকি জীবন উৎসগর্ করেছেন। এদের কােেছ প্রধানমন্ত্রীর অনেক প্রত্যাশা। কারণ এই তারুণ্যই তাকে ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আনতে বিরাট ভ‚মিকা পালন করেছে; আগামীতেও পালন করবে বলে আশা করা যাচ্ছে। নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষিত বেকার সমাজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের সাটিির্ফকেটের মেয়াদ যদি ৪-৫ বছর বাড়ানোর অনুরোধ করে, তবে এটি কি বড় অযৌক্তিক আবদার হয়ে যাবে? রবিউল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়