আধুনিকতার ছেঁায়ায় হারিয়ে যাচ্ছে সৌজন্যবোধ

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
মানুষকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে বসবাস করার জন্য দলবল প্রচেষ্টার প্রয়োজন। সে দলবদ্ধতায় প্রত্যেকের নিজস্ব অবস্থান থেকে প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় আলোকিত একটি সমাজ। সমাজে ধনী-গরিব, সাদা-কালো, হিন্দু-মুসলমান, প্রবীণ-নবীনদের পাশাপাশি আরও অনেকেই বসবাস করেন। সুশৃঙ্খলভাবে বসবাসের জন্য অবশ্যই প্রত্যেকের নিজস্ব অবস্থান থেকে প্রত্যেককে সাহায্য-সহযোগিতা করা প্রয়োজন। সহযোগিতা ছাড়া কোনো শ্রেণিই একক প্রচেষ্টায় সুষ্ঠুভাবে গঠিত হতে পারে না। পূবের্ সম্মিলিত প্রচেষ্টার অনেক চিত্র ফোটে ওঠলেও বতর্মানে তার চিত্র অনেকটা বিপরীত ধরনের। এই বিপরীত চিত্রের পিছনে সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রাখে পরশ্রীকাতরকা, শিক্ষা, শ্রিষ্টাচার, ভদ্রতা ও সৌজন্যবোধের মতো শব্দগুলো। বতর্মান সময়ে সরকারে গভীর প্রচেষ্টার মাধ্যমে মানুষ তাদের নিজেস্ব অবস্থান থেকে বের হয়ে শিক্ষার আলো দেখতে সক্ষম হচ্ছে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে যোগদান করছে নামকরা কোনো প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে তারা শিক্ষিত হয়ে বড় বড় ডিগ্রি নিলেও সিংহভাগ ব্যক্তির বিবেক অশিক্ষার অন্ধকার আলোয় নষ্ট করছে চলমান সমাজ। তারা এমন শিক্ষাই অজর্ন করছে যেখানে বৃদ্ধ বাবা-মাকে যেতে হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। অসহায়ের মতো কাটাতে হচ্ছে তাদের অনিচ্ছাকৃত দৈনন্দিন জীবন। অন্যদিকে পরিবার ছাড়াও আমাদের সমাজে এমন চিত্র প্রতিনিয়তই দেখা যায়। প্রবীণ ব্যক্তিদের সম্মান করার একটি প্রথা পূবের্ চালু থাকলেও বতর্মানে আধুনিকতার ছেঁায়ায় তা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। আমি যখন স্কুলে পড়তাম তখন বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যেতাম। বাধ্য হয়ে সাইকেল নিয়ে স্কুলে যেতে হতো। স্কুলে যাওয়ার পথে কোনো স্যারকে সামনে দেখলেই দুই হাতে শক্ত করে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে সাইকেল থামিয়ে তাড়াহুড়া করে নেমে সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে পুনরায় সাইকেলে ওঠে চলে যেতাম। শুধু আমি নয় স্যারদের সম্মান দেখাতে গিয়ে সাইকেল থেকে দ্রæত নামতে গিয়ে অনেকে ব্যথাও পেত। কিন্তু বতর্মানে শিক্ষক-ছাত্র বন্ধু সম্পকের্র দোহাই দিয়ে বেয়াদবির চরম পযাের্য় অবস্থান করছে। তাদের সামনে নানান ধরনের আপত্তিকর গল্প করার পাশাপাশি অনেকে টানছে সিগারেট। শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার মতো সংবাদও গণমাধ্যমে বহুবার প্রকাশিত হয়েছে। শুধু শিক্ষক নয় সমাজের প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে নবীনদের আচরণে তাদের মূল্যহীনতার চিত্রই দেখা যায়। বতর্মান সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে রাখা হয় সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের। যার পিছনে অথর্ বিশেষ ভ‚মিকা রাখে। নবীনরা মঞ্চের উপরে অবস্থান করলেও বৃদ্ধরা তাদের নিজের চেয়ারগুলোতে অবস্থান করে। এর ফলে পুরোপুরি স্পষ্ট বুঝা যায় তারা কোনো ব্যক্তিকে নয়, মূল্যায়ন করছে ব্যক্তির অথের্ক। অন্যদিকে পূবের্ গ্রামের মধ্যে কোনো বিচার-সালিশ হলে বিচারক হিসেবে নিধার্রণ করা হতো গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তিদের। তার কারণ হচ্ছে মানুষ মনে করত প্রবীণদের অভিজ্ঞতার ফলে তারা সঠিক সিন্ধান নিতে সক্ষম হবে। কিন্তু বতর্মানে তার চিত্র সম্পূণর্ বিপরীত। প্রবীণদের জায়গা দখল করে নিয়েছে গ্রামের কিছু কথিত রাজনীতিবীদ ও মাস্তান ছেলেরা। যাদের মূল উদ্দেশ্য থাকে বিচারের নাম করে দুই পক্ষ থেকে কিছু অথর্ হাতিয়ে নেয়া। এমন চিত্র প্রতিনিয়ত আমাদের সমাজে ভাসমান বলে নতুন প্রজন্মেরাও তাদের কাছে একই রকম শিক্ষা গ্রহণ করছে। যুবকরা যে দিকে পথ দেখাবে নবীনরা সে দিকেই অগ্রসর হবে। সমাজ সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার নিদের্শনা যদি প্রবীণদের কাছ থেকে নেয়া যায় তবে আরও সুন্দর মানবিকবান্ধব সমাজ গঠনে তাদের পরামশর্ অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ ভ‚মিকা রাখবে। সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য প্রবীণদেও সচেতন হতে হবে। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি রয়েছে যারা তাদের অহংকারে কারণে নবীন ব্যক্তিদের কোনো স্থানে কোনো সুযোগ করে দিতে চায় না। কমর্ থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই নবীনদের অগ্রাধিকার কম থাকে; তাই বলে মন্দ ব্যবহার ও অসুস্থ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ করে তা বুঝানোর চাইতে স্নেহ করে তাকে তার অবস্থান বুঝিয়ে দেয়া প্রত্যেকটি প্রবীণ ব্যক্তির অন্যতম দায়িত্ব। নিজের সম্মান নিজেকেই অজর্ন করতে হবে; সে দিক বিবেচনায় নবীনদের যথাযোগ্য মূল্যায়ন ও অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের প্রাপ্যপটুকু অজর্ন করা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। একটি সমাজে বসবাস করতে সবার সম্মিলিত প্রয়াস ওই সমাজকে অনেক দ্রæত সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আর দেশের প্রতিটি সমাজ যদি তাদের নিজেস্ব অবস্থান থেকে এগিয়ে যায় তবে সে সূত্র ধরে দেশও তার নিদির্ষ্ট গন্তব্যে এগিয়ে যাবে। শুধু প্রবীণরা সমাজের বা দেশের নেতৃত্ব দিয়ে সফল হতে পারবে এমন নয়। নবীন বা তরুণদেরও সুষ্ঠু নেত্বের গুণাবলি থাকতে পারে। তাই প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনদের নেতৃত্বের সুযোগ করে দেয়া প্রতিটি ব্যক্তির কতর্ব্য। শামীম শিকদার কাপাসিয়া, গাজীপুর