ভয়ংকর প্রতারণা

রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
প্রতারণা হচ্ছে স্বচ্ছ পথে অগ্রসর না হয়ে অসদুপায় অবলম্বন করে বাঁকা পথে কোনো কিছু অর্জনের চেষ্টা। বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা এমন যে, মানুষ খুব সহজেই একে অপরের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে। প্রতারণার মাত্রা এখন এতটাই প্রবল যে, এটা বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য। এর ফলে মানুষ যেমন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়েছে, একইভাবে ব্যক্তি পরিবার ও সমাজে ভাঙন দেখা দিয়েছে। দিনে দিনে বৈষম্য ও অস্থিরতা বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, শাহীরুল ইসলাম সিকদার এইচএসসি পাসের পর একটি পরিবহণে বাসের কনডাক্টর হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৩ পর্যন্ত এই চাকরি করেন। পরবর্তী সময়ে 'সিকিউরিটি গার্ড' সরবরাহ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এভাবে চাকরির নামে হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। সেই অফিস বন্ধ করে শুরু করেন ফ্ল্যাট ও জমির ব্যবসা। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিলেও ফ্ল্যাট কিংবা জমি বুঝিয়ে দেননি। কেউ টাকা ফেরত চাইলে দিতেন হুমকি। নিজেকে কখনো সরকারি ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আবার মানবাধিকার সংস্থার চেয়ারম্যান পরিচয় দিতেন। প্রতারণা করতে নামিদামি ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে তা বাঁধিয়ে রাখতেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে প্রতারণা করে শাহীরুল ৫০ কোটি টাকার মতো মালিক হলেও তার সম্পদের পরিমাণ আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর রামপুরার বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করের্ যাব। রাজধানীতে শাহীরুলের একাধিক ফ্ল্যাট ও জমিসহ দৃশ্যমান প্রায় ৫০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। এছাড়া তার কথিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গার্ড সার্ভিসেস লিমিটেড, হোমল্যান্ড ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, মানবাধিকার সংস্থা, শাহীরুল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, হোমল্যান্ড হাউজিং, হোমল্যান্ড বেভারেজ অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মাদারল্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিমিটেড, শাহীরুল ইসলাম বাংলাদেশ আউট সোর্সিং অ্যান্ড পাওয়ার সাপস্নাইয়ার্স এসোসিয়েশন। যতই দিনই যাচ্ছে নানা ধরনের প্রতারণার বিষয়টি ততই সামনে আসছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে। মনে রাখতে হবে, শাহীরুল ইসলাম সিকদার সমাজে একজন নয়, অনেক। এরা নানা ধরনের মুখোশ পরে কেউ আড়ালে আবডালে আবার কেউ প্রকাশ্যে প্রতারণা করছে। মানুষকে শোষণ নির্যাতন করে নানা ধরনের প্রতারণার মাধ্যমে এরা অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে ক্ষমতার নগ্ন দাপট দেখাচ্ছে। দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে এরা তরতর করে উপরে উঠে যাচ্ছে। আবার পতনও হচ্ছে সেভাবে। দেশের প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এরা লালিত ও বিকশিত হয়। এরা ধরা পড়লেও এদের আশ্রয় প্রশ্রয় দাতারা থেকে যায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে। অবাক ব্যাপার, কেউ অফিস খুলে চাকরি দেওয়ার নামে, কেউ বিদেশে পাঠানোর নামে, কেউ অনলাইনে পণ্য কেনার নামে, কেউ বা হায় হায় কোম্পানি খুলে কোটি কোটি টাকা মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অবলীলায়। এদের প্রতিহত করতে হবে যে কোনো উপায়ে। না হলে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হবে। দ্রম্নত সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। এই প্রতারণার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।