বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন

কিশোর ফুটবলারদের অভিনন্দন

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এবার বিদেশের মাটিতে সাফ অনূধ্বর্-১৫ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ লড়াইয়ে শিরোপা জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করল বাংলাদেশ কিশোর ফুটবল দল। শনিবার নেপালের আনফা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে টুনাের্মন্টের ফাইনাল খেলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুদার্ন্ত এক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশের দামাল কিশোররা। নিধাির্রত সময়ে ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় খেলাটি টাইব্রেকারে গড়ায়। স্বাভাবিকভাবে তখন দায়িত্ব এসে পড়ে গোলরক্ষকের কঁাধে। ভারতের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলা গোলরক্ষক মেহেদী হাসান ফাইনালের টাইব্রেকারে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিনটি শট ঠেকিয়ে দেশকে উঠিয়ে দিলেন অনন্য এক উচ্চতায়। টাইব্রেকারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩-২ গোলের ব্যবধানে জয়ের মধ্য দিয়ে বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অজর্ন করল। এ জয়ে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক ফুটবলের সাফল্যের মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত হলো। দেশকে এমন একটি অভাবনীয় ও দুদার্ন্ত জয় উপহার দেয়ার নায়ক মেহেদী হাসানসহ বাংলাদেশ কিশোর ফুটবল দল এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন। সাফ অনূধ্বর্-১৫ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নেপালের আনফা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে বাংলাদেশ-পাকিস্তান লড়াই চলাকালে ২৫ মিনিটেই আত্মঘাতী গোলে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ দল। কনার্র থেকে উড়ে আসা বলে হেড দিয়ে বল নিজেদের জালে জড়িয়ে দেন পাকিস্তানের ডিফেন্ডার হাসিব আহমেদ খান। এরপর ৫৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল পেয়ে যায় পাকিস্তান। নিধাির্রত সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। বাংলাদেশ দলের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শনিবারের একাদশে ছিলেন না। তবে নিধাির্রত সময়ে খেলা ১-১ সমতায় থাকায় কোচ আনোয়ার পারভেজ বদলি হিসেবে মিতুল মারমার পরিবতের্ মেহেদীকে মাঠে নামান। আর টাইব্রেকারের প্রথম, দ্বিতীয় ও শেষ শটটি ঠেকিয়ে বাংলাদেশকে ৩-২ গোলে জয় উপহার দেন এই কিশোর। স্পটকিক থেকে বাংলাদেশের তিনটি গোল করেন হৃদয়, রাজা আনসারি ও রুস্তম। নিধাির্রত সময়ে দলের সবাই তাদের নৈপুণ্য প্রদশের্ন কাপর্ণ্য করেননি বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালে সাফ ফুটবলে অনূধ্বর্-১৬ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। খেলাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের মাটিতে আর প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। বাস্তবতা হলো, পরের আসরে শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। এমনকি ২০১৭ সালে নেপালের কাছে ৪-২ গোলে হেরে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত হয়নি বাংলাদেশের। ২০১৭ সালে ভুটানকে ৮-০ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল লাল-সবুজের কিশোররা। আর এ বছর সেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করল বাংলাদেশের কিশোররা। টুনাের্মন্টের বতর্মান চ্যাম্পিয়ন ভারতকে সেমিফাইনালেই বিদায় করে দেয় বাংলার দুরন্ত কিশোররা। আর এবারের আসরে ফাইনালসহ চার ম্যাচে অপরাজিত বাংলাদেশ দল। প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ৯-০ গোলে, দ্বিতীয় ম্যাচে নেপালকে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এবারের সাফ ফুটবলে সব খেলায় বাংলাদেশ গোল করেছে ১৩টি, খেয়েছে ৩টি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পেছনে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন করে গতির সঞ্চার করেছে কিশোর-কিশোরী ফুটবল দল। টিমভিত্তিক এ খেলায় দলের প্রতিটি খেলোয়াড়ই তাদের সেরা খেলা উপহার দিয়ে চলেছে বলেই বাংলাদেশ জয় পাচ্ছে। কিশোর-কিশোরী এভাবে তাদের ফুটবল নৈপুণ্য প্রদশর্ন করতে থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বড় জয় পাবে বলেও বিশ্লেষকরা তাদের আশাবাদের কথা জানিয়েছেন। আমরাও মনে করি, ফুটবলে সাফল্যের এ ধারা অব্যাহত রাখতে কাযর্কর উদ্যোগ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। দেশের জন্য যারা সুনাম বয়ে আনছে, দেশকে তুলে ধরছে অনন্য উচ্চতায়Ñ তাদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে কাযর্কর পদক্ষেপ নিতে হবে। বেশি বেশি ঘরোয়া ফুটবলের আয়োজন করা, উন্নত প্রশিক্ষণ দেয়া এবং বিপুল জনসংখ্যার এই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও তুলে আনতে হবে মেধাবী ও পরিশ্রমী খেলোয়াড়দের। সাম্প্রতিক এই জয়ের নায়ক মেহেদী হাসান যশোরের বাসিন্দা; এতে স্পষ্ট হয়, দেশের অভ্যন্তরে অনেক রতœ লুকিয়ে আছে। তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সুদৃঢ়ভাবে ফুটবলে আরও এগিয়ে যাবে- এটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে।