বিদেশি ভ্যাকসিনের সংকট

কাযর্কর পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিপুল জনগোষ্ঠীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। এমতাবস্থায় যদি বিভিন্ন ধরনের ব্যাধি দ্রæত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার বিষয় সামনে আসে তবে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিদেশি ভ্যাকসিনের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ায় এবং এ সংশ্লিষ্ট বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের আমদানি বন্ধ থাকায় হেপাটাইটিস, চিকেনপক্স ও সাভির্ক্যাল ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা দরকার, এই সংকটের ফলে এ সংক্রান্ত ব্যাধিগুলো দ্রæত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। আমরা মনে করি, আশঙ্কার বিষয়টি আমলে নিয়ে যত দ্রæত সম্ভব সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। তথ্য মতে, একাধিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের চিকিৎসক, ভ্যাকসিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও টিকাকেন্দ্রে এসে প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন না পাওয়া ভুক্তভোগীরাও এই সংকটের বিষয়টি জানিয়েছেন। আমলে নেয়া দরকার, দেশের বাজারে ১৯টি ভ্যাকসিন বাজারজাতকারী আন্তজাির্তক কোম্পানি গøাস্কোস্মিথক্লাইন (জিএসকে) ব্যবসা বন্ধ করে চলে যাওয়া, অন্যান্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে না পারা এবং স্থানীয়ভাব উৎপাদন ঘাটতিরকরণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এমনটি জানা যাচ্ছে। যদিও ওষুধ প্রশাসন কতৃর্পক্ষ দাবি করছে, ভ্যাকসিনের কোনো সংকট তৈরি হয়নি। আমরা মনে করি, সাবির্ক পরিস্থিতি পযের্বক্ষণ করতে হবে এবং সংকট থাকলে তা নিরসনে দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার, বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে জিএসকের ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় ওই কোম্পানির তৈরি শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের জন্য এনজেরিক্স নামে দুটি, হেপাটাইটিস-এ প্রতিরোধে হেভারিক্স, চিকেনপক্সের জন্য ভারিলোরিক্স, মাম্ফ-মিজলেস ও রুবেলা ভাইরাস প্রতিরোধে প্রিওরিক্স (এমএমএমআর) সাভির্ক্যাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সারভারিক্স ও ডায়রিয়ার জন্য রোটারিক্স ভ্যাকসিন না থাকায় ফিরে যাচ্ছে অনেকে। পাশাপাশি টিটেনাসের জন্য ইনফানরিক্স, বুস্টরিক্স, মেনিনজো-কোক্কালের জন্য এসিডাবিøও ভ্যাক্স, হেপাটাইটিস-এ এর জন্য অ্যামব্রিক্স, হেপাটারিক্স, হেপাটাইটিস-বি এর জন্য ফেন্ডরিক্স, ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য ফ্লুয়ারিক্স ও ফ্লুলাভাল ছাড়াও ইনফানরিক্স আইভিপি, কিনরিক্স, মেনহিবরেক্স, মেনিটোরিক্স, পেডিয়াট্রিক্সসহ ১৯টি ভ্যাকসিনের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া নিউমোনিয়া প্রতিরোধে সনোফির তৈরি নিউমো-২৩, ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য ট্রিমাভ্যাক্স-১০ ভায়াল, জলাতঙ্কের চিকিৎসায় ফ্যাভিরাব সোল ও টিটেনাসের জন্য টেটাভ্যাক্স ০.৫ এমএল বাজারে নাই। জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধে হেলথ কেয়ায় লিমিটেডের আমদানিকৃত গাডাির্সল, নিউমোনিয়ার জন্য নিউমোভ্যাক্স-২৩ সরবরাহ নাই বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। আমরা বলতে চাই যে, ভ্যাকসিনের এরূপ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রæত ব্যবস্থা না নিলে তার ফল ইতিবাচক হবে না ফলে বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রæত উদ্যোগী হতে হবে। লক্ষণীয় যে, বিশ্ববাজারে ভ্যাকসিনের সরবরাহ কম থাকায় চাইলেও আমদানি করতে পারা যাচ্ছে না এমন বিষয় যেমন সামনে এসেছে তেমনি, স্থানীয় ভ্যাকসিনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, আমদানিকৃত ভ্যাকসিন আন্তজাির্তকভাবে মান নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু কঁাচামাল সংগ্রহ করে স্থানীয়ভাবে বোতলজাত করলে যথাযথ মাননিয়ন্ত্রণ অনেকটাই সম্ভব হয় না। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওষুধ বিদেশে রপ্তানি করার সময় সে দেশের বায়ো-ইকিউভ্যালেন্স করা হয়। যেটা দেশে বাজারজাত করার ক্ষেত্রে করা হয় না। ফলে সরকার চাইলে স্থানীয়ভাবে আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত আইন করে তা বাস্তবায়ন করতে পারে এমনটিও আলোচনায় এসেছেÑ যা বিবেচনায় নেয়া দরকার। সাবির্কভাবে বলতে চাই, পরিস্থিতি পযের্বক্ষণ সাপেক্ষে বিদেশি ভ্যাকসিনের সংকটের বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।