পাঠক মত
বেকারত্ব দূর করতে ভূমিকা রাখতে পারে ইপিজেড
প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
কাজী মো. হাসান শিক্ষার্থী কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল সংক্ষেপে ইপিজেড। বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও অন্যান্য বিশ্বমানের পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে দেশীয় পণ্য বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করে যাচ্ছে ইপিজেডগুলো। ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম ইপিজেডের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে দেশে ইপিজেডের সংখ্যা ৮টি। চট্টগ্রাম, ঢাকা, কুমিলস্না, মংলা, উত্তরা, ঈশ্বরদী, কর্ণফুলী ও আদমজী।
বেপজার তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট ৮টি ইপিজেডের মধ্যে বাংলাদেশসহ ৩৮টি দেশের ৪৫৯টি অধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ৭০ শতাংশ শিল্প প্রতিষ্ঠান বিদেশি বিনিয়োগ দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের দেশের ইপিজেডগুলোতে যথাযথ বিনিয়োগের পরিবেশ থাকার কারণে দিন দিন বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
দেশের ৮টি ইপিজেড আমাদের জিডিপিতে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। সংকটময় করোনা মহামারি কারণে যখন বিশ্ব বাজারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সংকটে পড়ে তখন বাংলাদেশের ইপিজেডগুলো যথাযথ ও টেকসই পণ্য উৎপাদন করে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি বহুলাংশে পূরণ করতে পেরেছে। বেজপার তথ্যমতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দেশের ৮টি ইপিজেড থেকে আয় আসে ৬০৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে আয় আসে ৪৯৪৪ মার্কিন ডলার। করোনা মহামারি মধ্যেই ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ইপিজেডগুলো থেকে আয় আসে ৬.৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাতীয় রপ্তানিতে ইপিজেডের অবদান প্রায় ২০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ২০২২-২০২৩ সালে ইপিজেডগুলোর রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার ২০-২৫ বৃদ্ধি পাবে। সবচেয়ে বেশি আয় আসে চট্টগ্রাম ইপিজেড থেকে। করোনা মহামারির কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ছিল, বর্তমানে সেগুলো আবারও পুনরায় উৎপাদন কার্যক্রম চালু করেছে। করোনা মহামারির ফলে বৈশ্বিক মন্দা কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে চলেছে। ইপিজেডে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আবারও সুষ্ঠুভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের ইপিজেডগুলো শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ হওয়ায় শ্রমিকরা নির্বিঘ্নে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২০ সালে ৮টি ইপিজেডে প্রায় ৪৬১৪৬০ জন স্থানীয় এবং ২২১৪ জন বিদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। দেশের ইপিজেডগুলোতে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে। ১৫১৫১২ জন পুরুষ এবং ২৯৪১৭০ বা ৬৭ শতাংশ নারী কর্মচারী। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল। বেকারত্ব আর অদক্ষ মানবশক্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর বাংলাদেশের শ্রম বাজারে ২০ থেকে ২২ লাখ তরুণ শ্রম বাজারে প্রবেশ করেন। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা চাকরিপ্রার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা তাদের চাহিদামতো কাজ পাচ্ছেন না। বাংলাদেশের এই বিশাল বেকারত্বের ইতি টানতে হলে সরকারকে তৈরি করতে হবে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। সে ক্ষেত্রে ইপিজেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের উপর জোর দিয়ে সরকার এ বিশাল বেকারত্বকে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারে। বেপজার তথ্য অনুযায়ী, ইপিজেডে বেশির ভাগ বিনিয়োগ আসে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, তাইওয়ান, জাপান, ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, ইতালি, কানাডা, সিঙ্গাপুর, ডেনমার্ক, ইন্দোনেশিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশগুলো থেকে। ইপিজেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করে স্থানীয় এবং বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকর্ষণ বাড়াতে হবে। ইপিজেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যেমন বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ করে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব সেই সঙ্গে ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আকর্ষণ বাড়াতে পারলে লাখ লাখ তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে দেশেই। বাংলাদেশে বিদেশিরা বিনিয়োগ করতে এসে বিভিন্ন জটিলতায় পড়তে হয় দুর্নীতি, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের জটিলতা, দীর্ঘসময় ক্ষেপণ ইত্যাদি। এ সব সমস্যার সহজ সমাধান হতে পারে ইপিজেড। ইপিজেড সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালিত হওয়ার ফলে এতে বিনিয়োগকারীরা সহজ শর্তে বিনিয়োগ এবং পণ্য উৎপাদন করতে পারবে কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। করোনার মধ্যেও সাড়ে তিন কোটি ডলার বা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার নতুন বিনিয়োগ এসেছে ইপিজেডে। পিজেডগুলোতে বিনিয়োগ জটিলতা কম থাকায় উদ্যোক্তাদের প্রথম পছন্দ ইপিজেড তবে দেশের ৮টি ইপিজেডে পর্যাপ্ত জমি বা জায়গা না থাকার কারণে অনেক বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে পারছে না। অনেক কোম্পানির বিনিয়োগ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জমি স্বল্পতার কারণে বিনিয়োগ করতে পারছে না। ইপিজেডে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের চাহিদা মেটাতে ইপিজেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরি। উন্নতমানের টেকনোলজি নির্ভর অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। একটি দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধি করতে বৈদেশিক বিনিয়োগের বিকল্প নেই, সেই সঙ্গে নিজ দেশের বেকারত্ব, দরিদ্রতা দূর করতে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করা জরুরি। টেকসই অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে সরকারকে এই বিষয়ের উপর জোর দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে ইপিজেড সম্প্রসারণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই মহামারিকালে বহু মানুষ চাকরি হারানোর ফলে বেকারত্ব যখন একটা বড় উদ্বেগ হয়ে দেখা দিয়েছিল, তখনই আটটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সুবাদে ৩২ হাজার নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে বেপজা। বাংলাদেশে টেকসই ইপিজেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করলে দেশি-বিদেশি কোম্পানিগুলো বিনিয়োগ করার ফলে পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সেই সঙ্গে দেশের বিশাল বেকারত্বকে মানবশক্তিতে রূপান্তরিত করতে ভূমিকা রাখবে ইপিজেড।