আসছে নিবার্চনী তফসিল

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

একাদশ সংসদ নিবার্চন দৃষ্টান্ত হোক
চলতি মাসের ৮ তারিখে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণা করবে নিবার্চন কমিশন। নিবার্চন কমিশনার শাহাদত হোসেন চৌধুরী গত রোববার কমিশনের এক বৈঠক শেষে এ তথ্য জানিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে। ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নিবার্চনের জন্য সাংবিধানিক বাধ্যকতা থাকায় এবং দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথা অনুযায়ী প্রধান নিবার্চন কমিশনার বেতার ও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন। এ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন বাঙালির জাতীয় জীবনের খুব কাছেই। অন্যদিকে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন পক্ষের দাবি এবং ক‚টনীতিকদের পরামশর্ আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন আমরাও চাই। দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে কোনোরকম সহিংসতা ছাড়াই জাতীয় সংসদ নিবার্চন অনুষ্ঠিত হোক, সঙ্গত কারণে এমন প্রত্যাশা দিন দিন বেড়েই চলেছে জনমনে। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা পযের্বক্ষণ সাপেক্ষে বিশ্লেষকরা বারবার বলে আসছেন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন অনুষ্ঠান অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের একটি বিষয়। তবে রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিবার্চনকেন্দ্রিক ঐকমত্যে পেঁৗছায় এবং নিবার্চনকালীন ইসির ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করা যায়, তাহলে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা থাকে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে এলে গ্রহণযোগ্য নিবার্চনের ক্ষেত্রে দেশে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে পারে বৈকি। নিবার্চনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিনতর বিষয় হলো, সব দলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। এ জন্য ইসির কতর্ব্য হওয়া দরকার সম্পূণর্ স্বাধীনভাবে কমর্পরিকল্পনা নিধার্রণ এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন। আমরা লক্ষ করেছি, নিবার্চন-সংক্রান্ত নানান ব্যাপারে ইসির মধ্যেও এক ধরনের মতবিরোধ রয়েছে, যা নানান সময়ে উঠে এসেছে গণমাধ্যমে। প্রত্যাশা থাকবে, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চনের স্বাথের্ ইসির অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের অবসান ঘটবে। ভবিষ্যতে বাঙালি জাতি যেন কোনো ধরনের রাজনৈতিক সংকটে পতিত না হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। দেশে বতর্মানে জোরেশোরে নিবার্চনী হাওয়া বইছে, যা অস্বীকারের সুযোগ নেই। আমরা অতীতে দেখেছি, নিবার্চনের সময় নানাবিধ অপরাধ বেড়ে যায়। চলে জনগণকে জিম্মি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা। সুতরাং নিবার্চনকালীন যে কোনো সংকট থেকে উত্তরণে জনগণ প্রত্যাশা করে, ইসির শক্তিশালী ভ‚মিকা। ইসির তথ্যে জানা গেছে, ৮ তারিখে তফসিল ঘোষণা এবং আগামী ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হতে পারে। এবারের সংসদ নিবার্চন অন্য যে কোনো সংসদ নিবার্চনের চেয়ে আলাদা। এবার প্রথমবারের মতো বতর্মান সরকারের অধীন নিবার্চনকালীন সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন-সংক্রান্ত আদালতের নিদের্শনা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের নিবার্চনকেন্দ্রিক সংলাপও চলমান। বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আবার তথ্যপ্রযুক্তির উৎকষর্তার সদ্ব্যবহার করতে সীমিত আসনে ইভিএমে ভোটগ্রহণের বিধিমালা চ‚ড়ান্ত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের ব্যাপকতাও বেশি। ফলে দেশবাসীর প্রত্যাশা এবং আস্থার পারদও ইসির প্রতি ঊধ্বর্মুখী। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও সবর্জনগ্রাহ্য নিবার্চন উপহার দেবে নিবার্চন কমিশন, যা বাঙালির জাতীয় জীবনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেÑ দেশবাসীর প্রত্যাশা এমনটি। সবোর্পরি বলতে চাই, বাংলাদেশের নিবার্চন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। অথচ দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থান এখনো বিপরীতমুখী। ফলে নিবার্চন ঘিরে দেশের সাধারণ মানুষের উৎকণ্ঠাও স্বাভাবিক। অতীতে রাজনৈতিক সহিংস ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের মনে উৎকণ্ঠা এবং ভীতির সঞ্চার হওয়া অযৌক্তিক নয়। প্রত্যাশা থাকবে, দেশে দ্রæত নিবার্চনকেন্দ্রিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হবে। নিবার্চন ঘিরে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে উঠবে, যা প্রত্যাশিত হতে পারে না। সাধারণ মানুষের আতঙ্ক দূর করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও অত্যন্ত জরুরি। অবাধ, সুষ্ঠু ও সবর্জনগ্রাহ্য নিবার্চনের পূবর্শতর্ হলো, সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা; তফসিল ঘোষণার পাশাপাশি যা করতে হবে সরকার এবং ইসিকে।