পানির মান পরীক্ষায় কমিটি

আদালতের আদেশ বাস্তবায়িত হোক

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
পানির অপর নাম জীবন। পানি ব্যতিরেকে মানুষের জীবন যে অচল তা হলফ করেই বলা যায়। প্রতিদিন ঘরকন্নার কাজসহ জীবন ধারণের জন্য পানি অপরিহাযর্ হলেও বাস্তবতা হলো, সুপেয় পানির অভাব দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা এমনও দাবি করেন যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হলে তা পানি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করেই সৃষ্টি হবে। জীবন ধারণের জন্য পানি যখন এমন অপরিহাযর্ একটি বিষয়, তখন রাজধানী ঢাকায় পানি নিয়ে মাঝে মধ্যে যে হাহাকার তৈরি হয় তা সংশ্লিষ্টদের বিবেচনায় নেয়াও অত্যন্ত জরুরি বলেই আমরা মনে করি। রাজধানী ঢাকায় সরকারের সেবা সংস্থার সরবরাহকৃত পানি যে বেশিরভাগই পানের অযোগ্য তা কম বেশি সবাই জ্ঞাত। ঢাকাবাসী এ বিষয়ে ঊধ্বর্তন কতৃর্পক্ষকে বারবার জানানোর পরও পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটেনি। এমনটি সভা-সমাবেশ বিক্ষোভ কমর্সূচি পালন করেও সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙানো যায়নি। সম্প্রতি জানা গেছে, পাইপের মাধ্যমে বাসাবাড়িতে সরবরাহ করা ওয়াসার পানির মান পরীক্ষায় ৫ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোটর্। এ কমিটিকে আগামী দুই মাসের মধ্যে ঢাকা ওয়াসার পানির মান পরীক্ষা করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। রাজধানীসহ দেশবাসীর জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় একটি রিটের শুনানি শেষে আদালতের দেয়া রুলসহ আদেশ প্রদান নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ঢাকাসহ সারা দেশে সরবরাহকৃত ওয়াসার পানি অনিরাপদ, পানিতে ব্যাকটেরিয়াসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। এ বিষয়টি বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ওয়াসার পানি-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। আর ১৪ অক্টোবর এসব প্রতিবেদন সংযুক্ত করে আদালতে একটি রিট করেন সুপ্রিম কোটের্র আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। হাইকোটর্ সেই রিটের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার রুলসহ এই আদেশ দিলেন। বিশেষজ্ঞ কমিটিতে স্থানীয় সরকার প্রশাসন, বুয়েটের ব্যুরো অব রিসাচর্ টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেশন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফামাির্স ও বায়োলজিক্যাল সায়েন্স বিভাগ ও আইসিডিডিআরবি’র প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আদালত তার রুলেÑ ওয়াসার নিরাপদ পানি সরবরাহে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের ব্যথর্তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং নিরাপদ পানি সরবরাহে দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ কেন দেয়া হবে না, জানতে চেয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রশাসন, স্বাস্থ্য সচিব, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের প্রধান প্রকৌশলী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাবও দিতে বলা হয়েছে। লক্ষণীয় যে, রাজধানীতে ক্রমেই জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে। সারা দেশের কমর্জীবী মানুষ সব সময়ই ঢাকামুখী। এ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীতে পানির চাহিদা বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারের সেবা সংস্থাগুলোর সরবরাহ করা পানি যদি দূষিত হয়, পানের অযোগ্য হয়, সঙ্গত কারণেই তা অত্যন্ত আশঙ্কার একটি বিষয়। এর আগেও জারের পানি পরীক্ষার করে ক্ষতিকর মলের অস্তিত্ব পেয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এসব বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর পানির প্রকৃত চিত্র সহজেই অনুধাবন করা যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দূষিত পানি পানের কারণে রাজধানীবাসী পেটের পীড়া, চমের্রাগসহ নানান জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বলাইবাহুল্য, পানিবাহিত রোগের হারও বাড়ছে দেশে। এ ছাড়া রাজধানীর কোনো কোনো স্থানে সরবরাহ করা পানি সাধারণ ধোয়া মোছার কাজেও ব্যবহারের অনুপযোগী, এমন সংবাদও এসেছে গণমাধ্যমে। আর বিষয়টি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনেও যখন উঠে এসেছে, তখন পানির ভয়াবহতা নিয়ে উদ্বেগ-আশঙ্কা অমূলক নয়। একটি দেশে জীবন রক্ষাকারী পানি নিয়ে এমন পরিস্থিতি কাম্য হতে পারে না। সবোর্পরি বলতে চাই, রাজধানীসহ সারা দেশে সরকারের সেবা সংস্থাগুলো পানি সরবরাহ কাজে নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময়ে তাদের উদাসীনতার বিষয়টি সামনে এসেছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে সরবরাহ লাইন মেরামত, নতুন পাম্প বসানো, পানি বিশুদ্ধকরণ ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কমর্কাÐ পরিচালিত হলেও জনগণের দোরগোড়ায় সুপেয় পানি পেঁৗছছে না। এ অবস্থার পরিবতর্ন জরুরি। জনগণের অথের্ পরিচালিত উন্নয়ন কমর্কাÐের সুফল জনগণ না পেলে তার চেয়ে পরিতাপের আর কি হতে পারে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আদালতের নিদের্শনার যথাযথভাবে বাস্তবায়ন ঘটুক, জনগণ নিরাপদ ও সুপেয় পানি ব্যবহারের সুযোগ পাকÑ এটিই আমাদের প্রত্যাশা।