স্বাস্থ্যঝুঁকি

যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি

প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দেশের মানুষের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত না হলে তা সন্দেহাতীতভাবেই উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। আর এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই স্বাস্থ্যঝঁুকির বিষয়টিকে সামনে রেখে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহাযর্ বলেই আমরা মনে করি। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল যে, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবতের্নর কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে পরিবেশ বঁাচাও আন্দোলন (পবা)। এ ছাড়া জীবনযাত্রার ধরনের সঙ্গে স্বাস্থ্যের সম্পকর্ থাকায় বাজেট বরাদ্দে বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পরিকল্পনা গ্রহণের দাবিও জানিয়েছে। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাজধানীর কলাবাগানে পবা কাযার্লয়ে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এই দাবি জানানো হয়। প্রসঙ্গত এটা বলা দরকার, সম্প্রতি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের হিসেবে বলা হয়েছে, ২৫০টি রোগ ও বিভিন্ন ধরনের জখমে ২০১৬ সালে বাংলাদেশে আট লাখ ৪৭ হাজার ৮৯০ জনের মৃত্যু হয়। প্রতিবছর এই সংখ্যা বাড়ছে। যা ২০৪০ সালে বেড়ে ১১ লাখ ২৩ হাজার ৪৫০ জন হবে। অথার্ৎ মৃত্যু বাড়বে ৩২ শতাংশ। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তজাির্তক জানার্ল ল্যানচেটে বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে এক লাখ ৭৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় স্ট্রোকে, এক লাখ ছয় হাজার হাটর্ অ্যাটাকে এবং ২৮ হাজার ব্যক্তি উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে বলা হয়েছে, ১৯৯০-২০১৩ সাল পযন্তর্ বিভিন্ন রোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। আর ১৫-৪৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান দুটি কারণের একটি হৃদরোগ। আমরা বলতে চাই যে, যখন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে বতমাের্ন যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয় এর ৬৭ শতাংশই মারা যায় অসংক্রামক রোগে, তখন এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে যত দ্রæত সম্ভব কাযর্কর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। ফলে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবতের্নর কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় বিশেষ বরাদ্দের যে দাবির বিষয়টি সামনে আসছে তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নেয়া দরকার বলেই আমরা মনে করি। এমন বিষয়ও উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশে ১২ লাখ ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী রয়েছে। প্রতিবছর দুই লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং দেড় লাখ মানুষ মারা যায়। এ ক্ষেত্রে বলা দরকার কিছুদিন আগেই জানা গিয়েছিল, ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী থাকলেও প্রয়োজনীয় ক্যান্সার সেন্টার নেই এবং অন্যান্য সংকটের পাশাপাশি অনকোলজিস্ট ও বিশেষজ্ঞ নাসর্ই নেই! প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে চাই, জাপানের জানার্ল অব ক্লিনিক্যাল অনকোলজির তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে এক কোটি ২৭ লাখ মানুষের দেহে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি ঘটে চলেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় যা নিওপ্লাসিয়া নামে পরিচিত। এ অবস্থা চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকবে দুই কোটি ১৪ লাখ মানুষ! সে ক্ষেত্রে এই ভয়াবহতাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, দেশের মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকির ক্ষেত্রে সাবির্ক বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আইন ও নীতিমালা পযাের্লাচনা-সংক্রান্ত এক প্রকাশনা অনুসারে বাংলাদেশে প্রায় ৯টি নীতিমালা এবং ১৭টি আইন রয়েছে। কিন্তু এসব আইন প্রয়োগের যথেষ্ট গুরুত্ব না পাওয়ায় জনস্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন বিষয়ও উঠে এসেছে। ফলে এর পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রস্তবনাগুলো দেয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে সেগুলোও বিচার-বিশ্লেষণ করে উদ্যোগী হতে হবে। স্বাস্থ্যঝঁুঁকি মোকাবিলায় যত দ্রæত সম্ভব সংশ্লিষ্টরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করুক এমনটি কাম্য।