পাঠক মত

বৈষম্য দূর করতে হবে

প্রকাশ | ১৯ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বৈষম্য একটি সামাজিক ব্যাধি। আমাদের সমাজের প্রত্যেক পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে এই ব্যাধি এমনকি পরিবারের মধ্যেও ছড়িয়ে গেছে। আর এই কারণেই প্রতিনিয়ত অনেকেই অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। আত্মহত্যার পথও বেছে নেয় অনেকে। যারা এসবের মোকাবিলা করে বেঁচে থাকে তাদেরও রীতিমত যুদ্ধ করতে হয়। বৈষম্য এর ইংরেজি প্রতিশব্দ উরংপৎরসরহধঃরড়হ। বৈষম্য বলতে আমরা বুঝি নির্দিষ্ট গুণসম্পন্ন লোকেরা নির্দিষ্ট গুণহীন বা কম গুণসম্পন্ন লোকদের নিচু করে দেখা কিংবা কথার মাধ্যমে খাটো করা বা অপমান করা অথবা যথাযথ কর্মদক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কর্মের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করাকেই বৈষম্য বলে। আমাদের চারপাশে বৈষম্য নেই এমন জায়গা খুব কম আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবৈষম্য দূর করলেও আমাদের দেশে নেলসন ম্যান্ডেলা নেই বলেই বর্ণবৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। একজন কালো চামড়াওয়ালা লোক দ্বারা, সাদা চামড়াওয়ালা মানুষ কিংবা সাদা চামড়াওয়ালা মানুষ দ্বারা কালো চামড়াওয়ালা মানুষ প্রতিনিয়ত হেয় প্রতিপন্ন হয়। যেটাকে আমরা সবসময় কৃষ্ণাঙ্গ, শেতাঙ্গ বলে সম্বোধন করি। আমরা যদি তৃতীয় লিঙ্গের দিকে তাকাই তারাও এই একই বৈষম্যের শিকার। অথচ তাদের শারীরিক গঠনে তাদের কোনো হাত নেই স্বয়ং আলস্নাহ প্রদত্ত। কিন্তু আমরা তাদের অন্য চোখে দেখি। তারা তাদের সামাজিক অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। শারীরিক গঠন নিয়ে কথা বললে মোটা, পাতলা, লম্বা, বেঁটে সবাই এর অন্তর্ভুক্ত। তারাও এই বৈষম্যের বাইরে নয়। আমাদের দেশে প্রত্যেক মানুষের মর্যাদা রয়েছে, মতামতের মূল্য রয়েছে। অথচ অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার অনেকে। তুলনামূলক কম সম্পদশালী লোকদের বৈষম্যের দ্বারা অনেক পিছিয়ে রাখা হয়। তাদের দেওয়া হয় না যথাযথ সম্মান দেওয়া হয় না তাদের মতামতের মূল্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মানুষ গড়ার কারখানা আর শিক্ষক হচ্ছেন কারিগর। কিন্তু সেখানেও ছড়িয়ে গেছে এটি। সর্বোপরি লিঙ্গবৈষম্য সমাজে পুরুষ কর্তৃক নারী বা নারী কর্তৃক পুরুষ বৈষম্য বিদ্যমান। প্রত্যেক মানুষ তার নিজ নিজ স্থানে যোগ্য, দক্ষ, প্রতিভাবান। পোশাক বৈষম্যেও পিছিয়ে নেই আমরা। কে কোন পোশাক পরিহিত কেন পরেছে। অপছন্দের পোশাকওয়ালা লোককে খাটো করাকেই আমরা স্মার্টনেস ধরে নিয়েছি। শহর আর গ্রাম বলেও আমরা প্রতিনিয়ত বৈষম্য সৃষ্টি করেই যাচ্ছি। গ্রামের মানুষ তুলনামূলক কম দক্ষ, যোগ্য, আনস্মার্ট এসব গ্রামের মানুষের কানে সবসময় শুনতে হয়। অথচ গ্রামেও অনেক দক্ষ, যোগ্য গুণসম্পন্ন লোক আছে। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ সমাজের, পরিবারের কাছে বোঝা হয়ে যায়। কারণ তারা যথাযথ কজের সুযোগ পায় না। ফলে বাধ্য হয় অনৈতিক কাজ করতে। রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার ক্ষেত্রে যদি উচ্চপদের লোকের বেশি সুযোগ ভোগ করে এটাও নিম্ন লোকদের জন্য বৈষম্য। দেশের সুবিধা সবার পাওয়ার অধিকার রয়েছে এবং সুষমভাবে। আইনের বারান্দায়ও বৈষম্যের মতো ব্যাধি ছড়ানো। মানুষের আস্থা হারিয়ে যাওয়ার জন্য এখানের বৈষম্য অনেকটাই কাজে লাগে। 'আইন সবার জন্য সমান, আমরা সবাই সমান,' এই নীতিবাক্যগুলো যেন বৈষম্যের শিকল খুলে বের হতে পারছে না, আর এজন্য দায়ী আমরাই। এ ধরনের বৈষম্যের কারণে প্রায়ই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা শুনতে পাই। কিছুদিন আগেও একটি ছেলে শারীরিক গঠনগত বৈষম্যের শিকার হয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়, গঠনগত শরীর গঠন করতে। কিন্তু এই চাওয়াই কাল হলো তার জীবনে। না ফেরার দেশে চলে গেল। এমন হাজারো বৈষম্যের শিকার হয়ে অনেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে, লক্ষ্যচু্যত হয়, প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়, অপমানিত হয়, হীনম্মন্যতায় ভোগে, পথ হারায়, এমনকি আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজ করে তবুও আমরা ক্ষান্ত না। যথাযোগ্য মানুষও কর্মহীন দিন কাটায় এই বৈষম্যের কারণে। যুবকদের কর্মস্পৃহা আর উদ্যম শেষ হয় এই কারণে। মেয়েরা স্বাবলম্বী হতে পারে না লিঙ্গবৈষম্যের কারণে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে নিম্নবিত্তরা সমাজের প্রতি শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলে। বিশ্লেষকদের মতে আইনের ক্ষেত্রে বৈষম্যের গন্ডি থেকে বের হতে পারলে সাধারণ মানুষ আস্থা পাবে। এই বৈষম্যের গন্ডি থেকে অবশ্যই বের হতে হবে। আর এজন্য দরকার মানসিক পরিবর্তন। বিশ্লেষকদের মতে প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি বৈষম্য দূর করতে হলে অবশ্যই সমান চোখে দেখা বিষয়টি কার্যকর করতে হবে। মতামতের ক্ষেত্রেও যদি সমান প্রাধান্য দেওয়া হয় তাহলে বৈষম্য অনেক কমে যাবে। সর্বোপরি আমাদের মানসিকতা পরিবর্তন করে কম গুণসম্পন্ন লোকদের সমাজের অংশ হিসেবে বিবেচনা করি তাহলেই বৈষম্য লাঘব করা সম্ভব হবে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ থেকে বের হতে হলে সবাইকেই একত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করার মানসিকতা দরকার। যাকে হেয় করা হবে তার প্রতিবাদ করার মানসিকতা, তার পাশের লোকদের প্রতিবাদী মনোভাব, হেয়কারীকে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা এসব নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে আমরা সবাই মানুষ এটাই সব থেকে বড় পরিচয়। বৈষম্য মুক্ত দেশ হোক। মো. ইমরান শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া