সংলাপ

নিবার্চন নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হোক

প্রকাশ | ০৯ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন নিয়ে সব ধরনের বিভ্রান্তি দূর, রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন এবং অংশগ্রহণমূলক নিবার্চনের স্বাথের্ চলমান সংলাপ ইতিবাচক হিসেবে দেখাই সমীচীন। ‘সংলাপ হবে না’ এমন সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ দীঘির্দন অনঢ় থাকার পরও দলটি সংলাপে অংশ নিয়েছে এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ‘অনানুষ্ঠানিক আলোচনার’ অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপের পর কোনো পক্ষই সংলাপ নিয়ে হতাশার কথা বলেনি। বিশ্লেষকরা এ বিষয়টিকেও ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। উভয় রাজনৈতিক দল একমত হয়ে আবেদন করলে নিবার্চনের তারিখ কয়েকদিন পেছানো যেতে পারে, প্রধান নিবার্চন কমিশনারের এমন বক্তব্যও আশাব্যঞ্জক। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, নিবার্চন নিয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। আর উভয়পক্ষ থেকে যখন এমন ইতিবাচক মন্তব্য পাওয়া যাচ্ছে, তখন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন অনুষ্ঠান নিয়ে সব ধরনের অনিশ্চয়তার অবসানই কাম্য। দেশের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায়, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও সবর্জনগ্রাহ্য নিবার্চনের কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়Ñ এমনটি বারবার বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। বিদেশি রাষ্ট্র ও ক‚টনীতিকরাও সরকারকে পরামশর্ দিয়েছেন, নিবার্চন এমন হোক যাতে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় এবং ভোটগ্রহণও অনুষ্ঠিত হোক উৎসবমুখর, অবাধ ও শঙ্কাহীন পরিবেশে। ভোটাধিকার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। এ অধিকার তখনই নিশ্চিত করা সম্ভব, যখন নিবার্চনের বিষয়ে সব ধরনের বিভ্রান্তি দূর হবে এবং অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। নিবার্চনে সব দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এমনিতেই চ্যালেঞ্জের। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতায় না পেঁৗছালে নিবার্চন কমিশনের একার পক্ষে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়া অমূলক নয়। সঙ্গত কারণে, নিবার্চনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের জটিলতা নিরসন হওয়া জরুরি। সংসদ না ভেঙে দলীয় সরকারের অধীনেই এবারের নিবার্চন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তা এখনো স্পষ্ট। আমরা মনে করি, এভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নিবার্চন উপহার দিতে পারলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন নিঃসন্দেহে। তবে সরকারের এই অঙ্গীকারের প্রতি আস্থাশীল থেকে বিএনপি নিবার্চনে অংশ নেবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবিতে দলটির রোডমাচর্ কমর্সূচি আছে। ফলে নিবার্চন নিয়ে রাজনীতির আকাশে এখনো গুমোট অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিদ্যমান এ বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুধাবন করা জরুরি যে, আগামী নিবার্চনটি শেষ পযর্ন্ত কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে বা সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে তা দেশের জন্য কতটুকু কল্যাণ বয়ে আনবে। সংবিধান সমুন্নত রেখেই নিবার্চন হওয়া বাঞ্ছনীয়। আবার এটাও অস্বীকারের উপায় নেই যে, যতই সংবিধানের কথা বলা হোক, শেষ পযর্ন্ত যদি একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অনিয়ম ঘটে কিংবা একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত হয় তাহলে দেশের রাজনৈতিক সংকট আরো গভীরতর হবে নাÑ তার নিশ্চয়তা কি? সুতরাং সময় থাকতেই উভয় রাজনৈতিক দলকে দেশ ও জনগণের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় রেখেই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সবোর্পরি প্রত্যাশা থাকবে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সংসদ নিবার্চনের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূণর্ বিষয়ে সমঝোতায় পেঁৗছাবে। গণভবনে গিয়ে শুধু আলাপ-আলোচনা চালালে হবে না, ঐকমত্যে পেঁৗছাতে হবে। আমরা জানি, উভয় রাজনৈতিক দলে বিজ্ঞ নেতা রয়েছেন; ফলে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার মধ্যদিয়ে বিজ্ঞ নেতারা নিবার্চনী উৎকণ্ঠার অবসান ঘটাবে বলেই আমরা প্রত্যাশা করি। সদিচ্ছা থাকলে আলোচনার মাধ্যমে যে কোনো জটিল বিষয়েও ঐকমত্যে পেঁৗছানো অসম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এ জন্য উভয়পক্ষকেই কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসা জরুরি। মনে রাখা দরকার, নিজেদের স্বাথের্ রাজনৈতিক দলগুলো অনঢ় থাকলে শেষ পযর্ন্ত জনগণই হেরে যাবে। ফলে প্রত্যাশা থাকবে, রাজনৈতিক দলগুলো ‘জনকল্যাণে রাজনীতি’ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই দেশ ও জনগণের স্বাথের্ রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা এবং আসন্ন নিবার্চনের বিষয়ে জাতিকে একটি সঠিক দিকনিদের্শনা উপহার দেবে।