স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

এই অর্জন গৌরবের

প্রকাশ | ২৭ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেল বাংলাদেশ। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশকে উত্তরণের সুপারিশ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। পরিষদের ৭৬তম বৈঠকের ৪০তম পেস্ননারি সভায় বুধবার (২৪ নভেম্বর) এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। উলেস্নখ্য, গত ২৬ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভায় দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ বা গ্র্যাজুয়েশনের মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের সুপারিশ লাভ করেছিল। সিডিপি একই সঙ্গে বাংলাদেশকে ২০২১ থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরব্যাপী প্রস্তুতিকালীন সময় প্রদানের সুপারিশ করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ ইতিমধ্যে সিডিপির সুপারিশ অনুমোদন করেছে। আশা করা হচ্ছে, পাঁচ বছর প্রস্তুতিকাল শেষে বাংলাদেশের উত্তরণ ২০২৬ সালে কার্যকর হবে। একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত উত্তরণের তিনটি মানদন্ড পূরণের মাধ্যমে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের এই অর্জন বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। প্রস্তুতিকালীন এই সময়ে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ্ত সব সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। ১৯৭৫ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে থাকা বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে সব শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘের নিয়মানুযায়ী, কোনো দেশ পরপর দুটি ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনায় উত্তরণের মানদন্ড পূরণে সক্ষম হলে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। সিডিপি তিনটি সূচকের ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করে অনেক এগিয়ে গেছে। উন্নয়নশীল দেশ থেকে একটি দেশের মাথাপিছু আয় হতে হয় কমপক্ষে ১২৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের ২০২০ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ১৮২৭ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে উন্নয়নশীল দেশ থেকে ৬৬ পয়েন্টের প্রয়োজন; বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৭৫.৩। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে কোনো দেশের পয়েন্ট ৩৬-এর বেশি হলে সেই দেশকে এলডিসিভুক্ত রাখা হয়, ৩২-এ আসার পর উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন হয়। সেখানে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২৫ দশমিক ২। সিডিপির প্রবিধান অনুযায়ী, উত্তরণের সুপারিশ পাওয়ার পর একটি দেশ তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত প্রস্তুতিকালীন সময় ভোগ করতে পারে। পাঁচ বছরের প্রস্তুতিকাল শেষে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ ঘটবে। এটা সত্য আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন মাইলফলক অর্জন করল দেশ। এর মধ্যদিয়ে উন্নয়নের নতুন অভিযাত্রা শুরু হলো। এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের জন্য যা এক অনন্য অর্জন। এ অর্জন অবশ্যই আমাদের আশাবাদী করে। করোনাকালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের অনুমোদন আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। আরও বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম হবে। উত্তরণের সব পর্যায়েই কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। এগুলোর মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে। যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপি সুবিধা থাকবে না। বাংলাদেশকে এ জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এলডিসি না থাকলে অন্যান্য দেশের রপ্তানিতে বাংলাদেশের এখনকার মতো শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। এলডিসি হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশ শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধাসহ অন্য যেসব অগ্রাধিকার পায়, তা যদি না থাকে তা হলে চ্যালেঞ্জ আরও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদের বৈদেশিক ঋণ কমে যাবে। ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্বের আন্তর্জাতিক আইন-কানুনের অব্যাহতি থাকবে না। কৃষিতে ভর্তুকি সুবিধা সীমিত করতে হবে। এ জন্য বিমসটেক, বিবিআইএনের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগের সুবিধা কীভাবে কার্যকরভাবে নেওয়া যায়, তার জন্য আমাদের ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। কেন না শুল্কমুক্ত সুবিধা না থাকলে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাবে, সে কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে।