বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ভ্যারিয়েন্ট 'ওমিক্রন' সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে

নতুনধারা
  ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

করোনার সংক্রমণ বিশ্বকে কতটা বিপর্যস্ত করেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশেও ভীতিপ্রদ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এর প্রভাবে প্রায় প্রত্যেকটি খাতে নেতিবাচক পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে, মানুষের জীবনযাপনের স্বাভাবিকতাও বিঘ্নিত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে নতুন আতঙ্ক 'ওমিক্রনের' নাম আলোচনায় এসেছে। হঠাৎই নতুন ভ্যারিয়েন্ট 'ওমিক্রন' বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। দেখা দিয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। এ ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই।

তথ্য মতে, করোনার ভয়ংকর নতুন ভ্যারিয়েন্ট 'ওমিক্রনের' সংক্রমণ ঠেকাতে এরই মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ সর্বোচ্চ সতর্ক হয়ে উঠেছে। অনেক দেশ এ ভ্যারিয়েন্টের উৎপত্তিস্থল দক্ষিণ আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ করেছে। কোনো কোনো দেশে সেখান থেকে আসা নাগরিকদের ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে এরই মধ্যে একটি দেশ বিদেশিদের জন্য সীমান্তও বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েকটি দেশে নতুন করে মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিমান ও স্থল বন্দরসহ দেশের সব এন্ট্রি পয়েন্টে আরটিপিসিআর টেস্ট ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন জোরদার করেছে।

এমন অবস্থায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি কতটুকু সেই বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। জানা গেছে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে দেশের সব প্রবেশপথে রোববার সতর্কবার্তা দেওয়া হলেও 'অ্যাকশন পস্ন্যান' দেওয়া হয়নি। এছাড়া জনসমাগম সীমিত করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জোরালো তাগিদ দিলেও তা কবে নাগাদ কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে তারা নিজেরাই সংশয়ে রয়েছেন বলেও খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে। কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ রোধে বিগত সময়ও তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও তার অধিকাংশ সময়মতো বাস্তবায়ন করা হয়নি। কিছু পদক্ষেপ আংশিক গ্রহণ করা হয়েছে।

আমরা মনে করি, 'ওমিক্রন' ভ্যারিয়েন্টেকে আমলে নিয়ে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এয়ারপোর্ট, সীমান্তসহ প্রয়োজনীয় সতর্কতা জোরদার করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বিগত সময়ের মতো এবার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট ঠেকাতে বিলম্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে করোনা পরিস্থিতি আগের চেয়েও ভয়াবহ রূপ নেবে। যা সামাল দেওয়া দেশের নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তারা। ফলে সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়গুলোকে এড়ানোর সুযোগ নেই। উলেস্নখ্য, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগাম সতর্কতার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রস্তুতিতে ধীরগতির কথা জানিয়েছেন। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা অস্বীকার করেছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।

লক্ষণীয়, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই মাহবুব বলেছেন, দেশে যাতে এই ভাইরাসটি ঢুকতে না পারে সেজন্য এখনই দ্রম্নততার সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইতোমধ্যে আফ্রিকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করা খুবই ভালো উদ্যোগ বলেছেন তিনি। তবে কানেক্টিং ফ্লাইটের মাধ্যমে যারা আসবে তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার বিষয়টিও উলেস্নখ করেন। ইউরোপে যেহেতু এই ভ্যারিয়েন্টটি ছড়িয়ে পড়েছে সেদিকেও সতর্কভাবে খেয়াল রাখার বিষয়টি তুলে ধরেন। এছাড়া রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, টিকাকে খুব সহজেই পাশকাটাতে সক্ষম এই ভ্যারিয়েন্টটি। সাধারণত টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা একবারের বেশি আক্রান্ত হয় না; কিন্তু এই ভ্যারিয়েন্টটি বারবার আক্রান্ত করতে সক্ষম। সঙ্গত কারণেই আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা জারি রাখার বিকল্প নেই।

সর্বোপরি বলতে চাই, নতুন ভ্যারিয়েন্টকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সেই বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশের সব পোর্ট অব এন্ট্রিতে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, বিমানবন্দর, সীমান্তসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা জারি করতে হবে। পাশাপাশি- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, অকারণে ঘোরাফেরা না করা, মাস্ক পরাসহ প্রয়োজনীয় সচেতনতাও জরুরি। করোনা সংক্রমণ ও মৃতু্য বেড়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কাকে বিবেচনায় রেখে করোনা মোকাবিলায় সর্বাত্মক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে