মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে যানজটে

সঠিক পদক্ষেপ নিন

প্রকাশ | ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
দিন দিন রাজধানীতে যানজটের মাত্রা বেড়েই চলেছে। সকাল থেকে শুরু করে মধ্যরাত পর্যন্ত যানজট চিত্র এখন প্রতিদিনের। এ পরিস্থিতি থেকে যেন নগরবাসীর মুক্তি নেই। রাজধানী ঢাকার নাগরিকদের সবচেয়ে বড় বিড়ম্বনা ও বিরক্তির কারণ যানজট। একদিকে উন্নয়নের কাজ চলছে, অন্যদিকে রাস্তায় চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন। এই দুয়ে মিলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি বাদ দিয়ে বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে ঢাকার যানজটে। এ ক্ষতি দেশের জাতীয় বাজেটের প্রায় ২০ শতাংশের সমান। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে বছরে জিডিপির সরাসরি ক্ষতি হচ্ছে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে মাথাপিছু আয়ের ক্ষতি হচ্ছে মাইনাস ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই সঙ্গে ঢাকার ওভার প্রবৃদ্ধির কারণে ক্ষতি হয় জিডিপির ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) বার্ষিক গবেষণা সম্মেলনে এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের যে মানুষ শহরে বাস করে তার অধিকাংশ ঢাকায়। বাংলাদেশের উন্নয়নের অধিকাংশ ঢাকাকেন্দ্রিক। করোনার কারণে সবকিছু বন্ধ থাকায় যানজট ছিল না। তবে আস্তে আস্তে সবকিছু খুলে দেওয়ায় আগের মতো যানজটের শহর হয়েছে ঢাকা। এ ছাড়া যানজটের কারণে যানবাহনের গতিও থাকে কম। এর প্রভাব পড়ে পাড়া-মহলস্নার সড়কগুলোতেও। সাধারণত সকালে অফিস টাইম এবং বিকাল থেকে যানজট দেখা দেয় বেশি। এদিকে গণপরিবহণ চলাচলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্দেশনাও মানছে না অধিকাংশ পরিবহণ। প্রধান সড়কগুলো ছাড়াও অলি-গলিতেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তবে সড়কে গণপরিবহণের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ব্যক্তিগত গাড়ির কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। মহাখালী হয়ে বনানী, গুলশান ও উত্তরাগামী সড়কের যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েছে সবচেয়ে বেশি। এই সড়কের চেয়ারম্যানবাড়ী এলাকায় ইউটার্ন চালু করার পর থেকে প্রতিদিনই এখানে যানবাহনের জট লাগছে। একই অবস্থা মহাখালী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত। সেই সঙ্গে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলোতেও যানবাহনের চাপ রয়েছে। অফিস শেষে বাড়ি ফেরার পথে ভোগান্তিতে পড়ে বহু মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক যাত্রী বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন। বেশি সমস্যায় পড়েন বয়স্ক ব্যক্তি, নারী, শিশু ও রোগীরা। তাদের এ সমস্যা দেখার যেন কেউ নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, রাস্তাগুলোতে একদিকে গাড়ির যানজট, অন্যদিকে এ স্থবির পরিস্থিতিতে যানবাহন চালকরাও ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা না মানায় অবস্থা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। আর নিয়ম মেনে না চলার কারণে সৃষ্ট যানজট মোকাবিলায় হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। অনেকেই বলেন, শৃঙ্খলা না মানা রাজধানীতে যানজটের একটি বড় কারণ। বাস-মিনিবাসগুলোয় যেখানে-সেখানে দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করা হচ্ছে। রাস্তা দখল করেও বসানো হয়েছে অস্থায়ী দোকান। এ ছাড়া প্রাইভেট কার, ট্রাক, ভ্যান ইত্যাদি রাস্তার ওপরই পার্কিং করে রাখা হয়। আমরা মনে করি, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে না এলে কোনোভাবেই যানজট নিরসন করা যাবে না। তা ছাড়া বেশির ভাগ চালকই অস্থির প্রকৃতির। তারা সড়কের শৃঙ্খলা মানতে চায় না। কীভাবে দ্রম্নত গন্তব্যে পৌঁছাবে সে চেষ্টাই তাদের ভেতর থাকে; থাকে ওভারটেকিংয়ের মানসিকতা। সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমাতে হবে, বাড়াতে হবে গণপরিবহণের সংখ্যা। যে সব সড়ক অপ্রশস্ত, সে সব কীভাবে কম সময়ে প্রশস্ত করা যায়, ভাবতে হবে তাও। যদি পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করা না হয় তা হলে জাতীয় উন্নয়নে এর প্রভাব পড়বে। সুতরাং কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করাই সমীচীন।