বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পেল বাংলাদেশ। অথচ এই বাংলাদেশের অগ্রগতির লাগাম টেনে ধরে রেখেছিল পশ্চিম পাকিস্তান। বিভিন্নভাবে তারা পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষকে শোষণ করেছে। ৫০ বছর পর সেই পাকিস্তান কেমন আছে? তারা কি আমাদের চেয়ে এগিয়েছে নাকি পিছিয়ে গেছে? সংগত কারণেই এই প্রশ্ন সামনে চলে আসে। অর্থনীতিসহ প্রায় সব ধরনের সূচক অনুযায়ী পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে ইমরান খানের ক্ষমতা গ্রহণের পর। অনেকেই ভেবেছিলেন বাংলাদেশ টিকতে পারবে না। সেই বাংলাদেশ পারমাণবিক বোমা ছাড়া আর্থসামাজিক সব সূচকে আজ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। গত নভেম্বর শেষে পাকিস্তানের রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশের রিজার্ভ গত আগস্টেই ছাড়িয়ে যায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। পাকিস্তানের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি রিজার্ভ এখন বাংলাদেশের। ইসলামাবাদে এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছিলেন, 'পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) যখন আলাদা হয়েছিল, আমাদের অনেকে বলেছিলেন, 'পূর্ব পাকিস্তান আমাদের জন্য বড়মাপের বোঝা হিসেবে ছিল। নিজের কানেই আমি এসব শুনেছি। সেই পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) আজ সব কিছুতেই এগিয়ে গেছে। তাদের দূরদর্শী চিন্তার জন্যই এটা হয়েছে।' এছাড়া পাকিস্তানের একটি টিভি টক শো'তে দেশটির নৃবিজ্ঞানী জাইঘাম খান নিজ দেশের সরকারের উদ্দেশে বলেছিলেন, 'পাকিস্তানের উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে, বাংলাদেশের দিকে তাকান। সুইডেন নয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেল অনুসরণ করুন'। এটা সত্য, জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচক, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুধা প্রতিরোধ, সুশাসন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ ইত্যাদি খাতে পাকিস্তান পিছিয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ উজ্জ্বল। পাকিস্তান এই সূচকে ১৭ ধাপ পিছিয়ে রয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নেও বাংলদেশ এগিয়ে রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব পাকিস্তানের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্ব ২০ দশমিক ৩ ভাগ। আর পাকিস্তানে প্রতিনিধিত্ব ২০ ভাগ। বিশ্ব ক্ষুধা প্রতিরোধ সূচকে (জিএইচআই) পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ক্ষুধা সূচকে ১১৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৮তম। আর পাকিস্তানের অবস্থান ১০২। বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছর। আর পাকিস্তানের মানুষের গড় আয়ু ৬৮ দশমিক ১ বছর। বিজয়ের ৫০ বছরে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ সব সূচকে এগিয়ে রয়েছে। জিডিপির আকার অনুয়ায়ী বৃহত্তর অর্থনৈতিক দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আশাব্যঞ্জক। আর পাকিস্তান এক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে তিন ধাপ পিছিয়ে রয়েছে। মূলত সফল নেতৃত্বের জন্যই পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের জন্যই আমরা এগিয়ে চলেছি। অন্যদিকে, পাকিস্তানে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না। সেখানে সামরিক বাহিনীর প্রভাব অনেক বেশি। সে কারণে বিদেশি বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হওয়া, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়া, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া ইত্যাদি কারণে পাকিস্তান বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ভূয়সীপ্রশংসা এবং পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের একজন সাবেক উপদেষ্টা বলেছেন, দেশটির অর্থনৈতিক খাতে এই হতাশাজনক অবস্থা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের সহায়তা চাইতে হতে পারে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানে আত্মমূল্যায়নের সময় এসেছে। বাংলাদেশ নিয়ে আমরা আশাবাদী। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে সার্বিক উন্নয়নকে আরো বেগবান করতে।