নিবার্চনে যাচ্ছে বিএনপি জোট

এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী

প্রকাশ | ১২ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এগিয়ে আসছে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন। নিবার্চন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ভোটগ্রহণ। এ হিসেবে বাঙালি জাতির খুব কাছেই চলে এসেছে জাতীয় এই নিবার্চনটি। নিবার্চনকে ঘিরে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম হয়ে উঠেছে। পাড়া-মহল্লায় আলোচনাও শুরু হয়েছে, কে হচ্ছেন কোন দলের প্রাথীর্। তবে এবারের নিবার্চন সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে, অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা, দেশব্যাপী যখন এমন আলোচনা তুঙ্গে; তখনই জানা গেল, ঐক্যফ্রন্ট নিবার্চনে অংশ নিচ্ছে। শনিবার বিএনপির সবোর্চ্চ নীতিনিধার্রণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পৃথক বৈঠকে নিবার্চনে অংশ নেয়ার গুরুত্বপূণর্ এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। সাত দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি তা অত্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তথ্য অনুযায়ী, ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি সংবিধানসম্মত নয় জানিয়ে সরকার তা না মানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। আর আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নিবার্চনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির সবোর্চ্চ ফোরাম। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের প্রক্রিয়া নিয়ে দেশে এখনো রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়নি। সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও, ‘সমঝোতা’ নিয়ে দলগুলো নিজেদের অবস্থানেই অনড় বলা যায়। অথচ নিদির্ষ্ট সময়ের মধ্যেই নিবার্চন অনুষ্ঠানের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হয়েছে বলে স্পষ্ট জানিয়েছে নিবার্চন কমিশন। তবে সব রাজনৈতিক দল চাইলে নিবার্চন কিছুদিন পেছানো যেতে পারে, জাতির উদ্দেশে দেয়া তফসিল ঘোষণার ভাষণে এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সিইসি। জানা গেছে, নিবার্চনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়া বিএনপি আজ নিবার্চনের তফসিল ঘোষণার দাবি জানিয়ে নিবার্চন কমিশনে স্মারকলিপি দেবে। তবে শেষ পযর্ন্ত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্ট নিবার্চনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত স্বস্তির। পাশাপাশি বিএনপির এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে অংশগ্রহণমূলক নিবার্চন নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তারও অবসান ঘটল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিকভাবে বিরোধপূণর্ অবস্থানে থাকলেও দশম জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ না নেয়া বিএনপির বড় একটি রাজনৈতিক ভুল ছিল। আরেকটি ভুল, দশম সংসদ নিবার্চনের পর সরকারের পতন আন্দোলনের নামে সারাদেশে নৈরাজ্য ও সহিংস অবস্থার সৃষ্টি করা। এ দুটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে সাধারণ মানুষের কাছে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই কমে গেছে। পাশাপাশি দেশের ব্যাপক উন্নয়নমূলক কমর্কাÐের কারণে রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ জনতার খুব কাছেই অবস্থান করছে, এমন আলোচনাও শোনা যায়। সুতরাং একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ না নিলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে- এমন আশঙ্কার কথাও বিশ্লেষকরা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন। সঙ্গত কারণে নিবার্চনে অংশ নিতে বিএনপির ঘোষণা সময়োপযোগী এবং তারা যে আর ভুল করতে চায় না, সেটাও প্রতীয়মান। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা পযের্বক্ষণে অংশগ্রহণগ্রহণমূলক নিবার্চনের বিকল্প নেই বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া দেশের জনগণ, বিদেশি ক‚টনীতিক, দাতা রাষ্ট্রসমূহ, আন্তজাির্তক সংস্থা ও জাতিসংঘÑ সবার প্রত্যাশা অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নিবার্চন অনুষ্ঠানের। নিবার্চনে সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিতকরণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হলেও নিবার্চন কমিশন সে ব্যবস্থা করবেÑ এমনটি বারবার বলে আসছে। আমরাও মনে করি, ইসি তাদের নিবার্চনকালীন ক্ষমতার প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবর্জনগ্রাহ্য নিবার্চন উপহার দিতে সক্ষম হবে। সবোর্পরি বলতে চাই, নিবার্চনে অংশ নেয়াই শেষ কথা নয়। সুষ্ঠুভাবে, সহিংসতামুক্ত ও ভীতিহীন পরিবেশে নিবার্চন অনুষ্ঠানের ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব খুব বেশি। রাজনৈতিক দলগুলো নিবার্চনী আচরণবিধি মেনে এবং নিবার্চন কমিশনকে সবোর্তভাবে সহযোগিতা করলে নিবার্চনের ক্ষেত্রে একাদশ সংসদ নিবার্চন একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এটা যেমন গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার জন্য ভীষণ জরুরি, তেমনিভাবে নিবার্চনে বিএনপির অংশগ্রহণও গণতন্ত্রের জন্য শুভপ্রদ। তবে, দেশ ও সমাজকে অস্থিতিশীল ও সংঘাতময় করে তুলতে পারেÑ এমন যে কোনো বিষয়ে দায়িত্বশীল ও সতকর্ থাকতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিবার্চনে স্থিতিশীল পরিবেশও নিশ্চিত করতে হবে তাদের।