ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের অর্থনীতি

পদক্ষেপ অব্যাহত রাখতে হবে

প্রকাশ | ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
অর্থনীতিসহ নানা দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন দৃশ্যমান। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, যখন করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত, তখনো বাংলাদেশ কিছুটা অর্থনৈতি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছিল। উলেস্নখ্য, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, করোনা মহামারির একাধিক ঢেউ বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়ে গেলেও সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রম্নত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ। লক্ষণীয়, আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থা বলছে, সংক্রমণের হার কমে আসায় এবং সরকারের অনুকূল নীতি সহায়তা অব্যাহত থাকায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। তথ্য মতে, আইএমএফের বাংলাদেশ মিশনের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকায় তাদের সফরে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনায় এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। আমরা বলতে চাই, যখন সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের কারণে দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর মতো ইতিবাচক বিষয়টি জানা যাচ্ছে, তখন তা অত্যন্ত সুখকর। কেননা, করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বা অগ্রগতির বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ফলে অগ্রগতির ধারা বজায় রাখতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। উলেস্নখ্য, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। তবে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। আইএমএফ বলছে, খাদ্যবহির্ভূত পণ্য, বিশেষ করে জ্বালানির দাম বাড়ায় অর্থবছর শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সরকারের হিসাবের চেয়ে কিছুটা বেশি হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে মহামারির কারণে ব্যয় বাড়ায় এ অর্থবছর সরকারের বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে জিডিপির ৬.১ শতাংশ। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল এবং ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাড়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি এ অর্থবছর আরও বাড়বে বলেই আইএমএফ মনে করছে। আমরা বলতে চাই, যখন অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত হবে মূল্যস্ফীতির দিকে নজর রাখা এবং প্রয়োজনে বাজারে মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা- এমনটি যখন আইএমএফের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, তখন এটা আমলে নিতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের পরিস্থিতি মোতাবেক কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটাও আশার বিষয় যে, মহামারির মধ্যে গত দুই বছরে সরকারের ধার বেড়ে গেলেও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি এবং দেশে টিকাদান পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ঋণের বোঝা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে খুব বেশি ঝুঁকি দেখছে না আইএমএফ। বাংলাদেশের অর্থনীতি এই গতিপথ ধরে রাখতে পারলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে আইএমএফের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে। আমরা মনে করি, আইএমএফের পর্যবেক্ষণ যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে করণীয় নির্ধারণপূর্বক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এটাও এড়ানো যাবে না যে, সার্বিক বিবেচনায় সামনের দিনগুলোতে বেশ কিছু অনিশ্চয়তা ও ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানিয়েছে আইএমএফ। আর সেজন্য রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদনমুখী বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের নীতি কাঠামো সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, করোনা পরিস্থিতিকে মোকাবিলার পাশাপাশি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অগ্রযাত্রার বিষয়টি সহজ নয়। ফলে যখন সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপে প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রম্নত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ তখন তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বলা দরকার, সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধারাবাহিক এবং জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আশাবাদের বিষয়টিও এর আগেও জানা গিয়েছিল। এছাড়া ২০৩৩ সালের মধ্যে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে বাংলাদেশ- যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) তাদের এক প্রতিবেদনেও এমন পূর্বাভাস দিয়েছিল। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা এবং করোনা পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।