নিবার্চন ৩০ ডিসেম্বর

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সুষ্ঠু ও শান্তিপূণর্ হোক
গণতন্ত্র ও দেশের উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে হলে অংশগ্রহণমূলক নিবার্চনের কোনো বিকল্প থাকা উচিত নয়। দেশের উল্লেখযোগ্য সব রাজনৈতিক দল ও জোট আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনে অংশ নিচ্ছে এমন খবর জানা গেছে যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। উল্লেখ করা দরকার, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন জোটের দাবির পর ভোট এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের তফসিল পুননির্ধার্রণ করেছে নিবার্চন কমিশন। এ প্রসঙ্গে প্রধান নিবার্চন কমিশনার তফসিল পুননির্ধার্রণের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন। তথ্য মতে, ২৮ নভেম্বর পযর্ন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে। তফসিল ঘোষণার চার দিনের মাথায় সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তজাির্তক সম্মেলন কেন্দ্রে নিবার্চন কমিশনের ইভিএম প্রদশনীের্ত সিইসির এ ঘোষণা আসে। বলা দরকার, ঐক্যফ্রন্ট নিবার্চন পেছানোর দাবিতে কমিশনে যে চিঠি দিয়েছিল, সে বিষয়ে সোমবার সকালে বৈঠক করে নিবার্চনের দিনক্ষণ পেছানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উল্লেখ্য, নিবার্চন নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে মতানৈক্যের মধ্যেই গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে নিবার্চনের তফসিল ঘোষণা করেছিলেন সিইসি নুরুল হুদা। সেখানে ২৩ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ ধরে ১৯ নভেম্বর পযর্ন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল, ২২ নভেম্বর বাছাই এবং ২৯ নভেম্বর পযর্ন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সুযোগ রাখা হয়। তারপর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সমমনা দলগুলো মনোনয়নের প্রস্তুতি শুরু করলেও সাত দফা দাবি জানিয়ে আসা বিএনপি ও তাদের জোট শরিকরা স্পষ্ট ঘোষণা না দেয়ায় দশম সংসদের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা জাগছিল অনেকের মনেই। কিন্তু রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীষর্ নেতা কামাল হোসেন ও মুখপাত্র বিএনপি মহাসচিব মিজার্ ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোটের এক সংবাদ সম্মেলন থেকে আসন্ন সংসদ নিবার্চনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিলে সেই সংশয় কাটে। পরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলও ভোটে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে নিবার্চন এক মাস পিছিয়ে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। আর জাতীয় পাটির্র মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছিলেন, ইসির জন্য যে দিনটি কমফোটের্বল হয় সেদিনই নিবার্চন হবে। এ ছাড়া বিএনপির সাবেক নেতা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট তফসিলের পরপরই নিবার্চন সাত দিন পেছানোর দাবি জানিয়েছিল। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রাজনৈতিক জোটগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিবার্চন কমিশন (ইসি) ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিলে তাতে তাদের আপত্তি থাকবে না। আমরা উল্লেখ করতে চাই, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন এক মাস পেছানোর যে দাবি, তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নিবার্চন কমিশনার বলেছেন, ভোট আর পেছানোর সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে সামনে এসেছে যে, প্রথমত, জাতীয় পযাের্য় এত বড় একটি নিবার্চনের পর ২৯ জানুয়ারিই সংসদ বসতে হবে। ফলে এটি বড় মাপের সময় নয়। কারণ নিবার্চনের পর ফলাফল আসবে, এরপর গেজেট করতে হবে। ৩০০ আসনের গেজেট করার জন্য সময় লাগে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ব ইজতেমা হবে জানুয়ারির ১১ তারিখে। এ সময় সারাদেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনতে হয়। আমরা বলতে চাই, এখন নিবার্চন কমিশনের কতর্ব্য হওয়া দরকার, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন উপহার দেয়া। আর যখন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নিবার্চন অনুষ্ঠিত হবে এমন সম্ভাবনার বিষয়টি সামনে এসেছেÑ তখন তাতে নিবার্চনের সৌন্দযর্ বৃদ্ধি পাবে এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার জন্যও এটা জরুরি। সবোর্পরি আমরা বলতে চাই, আসন্ন নিবার্চন যাতে সবর্জনে গ্রহণযোগ্যতা অজর্ন করতে পারে সে ব্যাপারেও রাজনৈতিক দলগুলোর কতর্ব্য হওয়া দরকার নিবার্চন কমিশনকে সবোর্তভাবে সহযোগিতা করা। অন্যদিকে ইসিরও কতর্ব্য হওয়া দরকার, নিবার্চনে সব দলের সমান সুবিধা নিশ্চিত করা। নিবার্চনে যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির কথা বলা হয়ে থাকে, নিবার্চন কমিশন তাদের ক্ষমতার সবটুকু প্রয়োগের মধ্যদিয়ে তা নিশ্চিত করবে এমনটি কাম্য। জনগণ যাতে উৎসবমুখর পরিবেশ, সম্পূণর্ ভীতিহীন ও শঙ্কামুক্তভাবে তাদের পছন্দের প্রাথীের্ক বেছে নিতে পারে সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখা দরকার, ভোটাধিকার জনগণের মৌলিক এবং সাংবিধানিক অধিকার। নিবার্চন এলেই জনগণের মধ্যে ভীতি তৈরি হবে, এটা কাম্য নয়। সব দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন অনুষ্ঠিত এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।