প্রান্তিক পযাের্য় পুষ্টির ঘাটতি

প্রকাশ | ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

কাযর্কর উদ্যোগ নিতে হবে
দেশের ১৬ কোটি মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটানো কিংবা এর যোগান দেয়া অনেক কঠিন কাজ। নানা কারণে সুষম খাদ্য গ্রহণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। অভাব দারিদ্র্যের কারণেও এই চাহিদা বাধাগ্রস্ত হয়। কারণ মানুষের আথির্ক সঙ্গতি না থাকলে তারা কীভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার খাবে। ফলে দেশের এক শ্রেণির মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। বিশেষ করে দেশের প্রান্তিক পযাের্য় পুষ্টির ঘাটতি তীব্র। এক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মা ও শিশুরা সরকারের নিউট্রিশন (পুষ্টি) সাভিের্সর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও কিশোর-কিশোরীরা এ সেবা থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হচ্ছে। এ ছাড়া গভর্বতী নারী এবং শূন্য থেকে পঁাচ বছর বয়সী শিশুদের ওজন পরিমাপের জন্য যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে অধেের্করও কম। সম্প্রতি বাংলাদেশের দুগর্ম এলাকায় পুষ্টিসেবার বতর্মান অবস্থা ও চাহিদা সম্পকের্ গবেষণালব্ধ ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাটি চালানো হয়েছে দেশের চরাঞ্চল, উপক‚লীয় এলাকা, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলগুলোতে। বিশেষ করে যে এলাকাগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা অন্যান্য এলাকার তুলনায় নাজুক। গবেষণায় দেখা যায়, দেশের চর ও দ্বীপ এলাকায় নারী শিশুরা আয়রন ও ক্যালসিয়াম সম্পূণর্রূপে গ্রহণ করছে। আবার পাহাড় ও উপক‚লীয় এলাকায় কৃমির ওষুধ ও সম্পূরক আয়রনের ব্যবহার বেশি করছে কিশোরীরা। তবে সমন্বিত পুষ্টির ব্যবহার কোথাও হচ্ছে না। ফলে এসব অঞ্চলে পুষ্টির ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমরা দীঘির্দন থেকে লক্ষ্য করে আসছি, দেশের সব জনগুরুতপূণর্ বিষয়গুলো সবই নগরকেন্দ্রিক। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নাগরিক চাহিদা পূরণ করাই সরকারের প্রধান কাজ। অথচ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত ও নানা বঞ্চনার শিকার। এসব দিকে রাষ্ট্র তথা সরকারের নজর দেয়া উচিত। এই গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে সরকার যদি কাযর্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে এ ক্ষেত্রে সফলতা আসতে বাধ্য এমনটাই মনে করেন গবেষণা সংশ্লিষ্টরা। দেশের প্রান্তিকপযাের্য় পুষ্টির ঘাটতি দূর করতে হবে। এ অবস্থার জন্য অসচেতনতার পাশাপাশি ঠিকমতো সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেঁৗছানোর ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়। তবে আশার কথা প্রান্তিক এলাকাগুলোতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাপক কমর্কাÐ পরিচালনা করছে। এ ক্ষেত্রে একটু গুরুত্বপূণর্ দিক হলো সেখানে নারীকমীের্দর অনেক প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, অপুষ্টি নিয়ে বেড়ে ওঠা শিশু কিংবা কিশোর-কিশোরীর মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এক সময়ে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় হতাশা ও বিষাদের, যা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। বতর্মান সরকার শিশু-কিশোরদের জন্য নানা ধরনের কল্যাণমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সরকার প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অধিক মনোযোগী হওয়া উচিত। আমাদের মতো ছোট্ট একটি দেশে এত অধিক সংখ্যক লোকের বসবাস কেবল ঝুঁকিপূণর্ই নয়, আগামীতে তা যে কোনো বড় ধরনের বিপযের্য়রও কারণ হতে পারে। তাই সময় থাকতে আমাদের সাবধান হতে হবে। আর এ জন্য ব্যক্তির সচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। অধিক জনসংখ্যাকে মানব সম্পদে পরিণত করা যেহেতু আমাদের জন্য কঠিন ও সময় সাপেক্ষ তাই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আনাই আমাদের জন্য সুখকর। কারণ জনসংখ্যা বাড়তে থাকলে দেশের প্রান্তিকপযাের্য় পুষ্টির ঘাটতি তীব্র হবেই। সুতরাং সরকারের কাযর্কর উদ্যোগই পারে এই ঘাটতি পূরণ করতে।