বড়দিনের তাৎপর্য

যিশু যে প্রেমের বাণী, মানবতার বাণী উচ্চারণ করেছিলেন তা আজো মানুষের চলার পথের দিশারী হয়ে কাজ করছে। ক্ষমাই ছিল যিশুর মূল প্রেমের বাণী।

প্রকাশ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

এস ডি সুব্রত
খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন বা হ্যাপি ক্রিসমাস ডে। বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বব্যাপী যে দিনটাকে সবচেয়ে বেশি মানুষ উদযাপন করে সেটি হচ্ছে বড় দিন। যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন। ফিলিস্তিনের বেথেলহেমে এই দিনে এক জরাজীর্ণ গোয়ালঘরে জন্ম নিয়েছিলেন এক মহামানব যার নাম যিশু খ্রিষ্ট। তখন থেকেই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি কে বড়দিন হিসেবে পালন করে আসছে। দেড় হাজার বছরের অধিক কাল ধরে পালিত হয়ে আসছে বড় দিন। ব্যাপক আড়ম্বরের মাধ্যমে দেশে দেশে এ দিনটি পালিত হয়। সান্তা ক্লজের আবির্ভাব, ক্রিসমাস ট্রি, আলোকসজ্জা, উপহার, কেক, ঘোরাঘুরি, মজার খাবার, গির্জায় প্রার্থনা এবং প্রিয়জনের সান্নিধ্যে কাটানো হয় দিনটি পরম আনন্দে। এটা খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ইতিহাস অনুযায়ী রোমান সাম্রাজ্যের সময় ৩৬৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বড়দিনের উৎসব পালন করা হয়। পোপ জুলিয়াস প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিন উৎসব পালন করার ঘোষণা দেন। সেই থেকে দেশে দেশে এই দিনটি পালন হয়ে আসছে। তবে এর আগে বড়দিনের উৎসব তেমন জাঁকজমকপূর্ণ ছিল না এবং তা ইউরোপের বাইরে ছড়ায়নি। মূলত মধ্যযুগের পরে একেবারে আধুনিক সময়ে বড়দিনের উৎসব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। বলতে গেলে অনেকটা ঔপনিবেশিকতার হাত ধরে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে তা সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। ডিসেম্বর মাসের পঁচিশ তারিখ যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে বড়দিন পালন করা হয়। তবে এদিনটি যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন কিনা তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মতে এই তারিখের ঠিক নয় মাস আগে মা মেরীর গর্ভে এক আলোক জ্যোতির মতো প্রবেশ করেন যিশু। সে হিসাবে ২৫ ডিসেম্বর তারিখটি যিশু খ্রিষ্টের জন্মদিন ধরা হয়। খ্রিষ্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিষ্টের জন্ম হয় অলৌকিকভাবে। খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের মতে যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীতে মানুষ রূপে জন্ম নেন পৃথিবীর পাপাচার হতে মানুষকে মুক্তি দিতে। মানুষের মাঝে ভ্রাতুত্বের বন্ধন দৃঢ় করতে। বড়দিন এখন খ্রিষ্টান ধর্ম ছাড়িয়ে সব ধর্ম বর্ণের মানুষের কাছে আবেদন সৃষ্টি করেছে। অন্য তথ্যমতে এটি ঐতিহাসিক রোমান উৎসব। পবিত্র বাইবেলে যিশুর জন্মদিন সম্পর্কে পরিষ্কার কিছু উলেস্নখ নেই। এর ইতিহাস জানতে যেতে হবে যিশু খ্রিষ্টের জন্মের আগে মানব সভ্যতার গোড়ার দিকে। রোম সাম্রাজ্যে ইউরোপের সবচেয়ে বড় উৎসব ছিল তাদের কৃষি দেবতা এবং শনি গ্রহের সম্মানে এক বিশেষ উৎসব। এই উৎসব শীতের মাঝামাঝি সময়ে ২৫ ডিসেম্বর এর দিকে পালিত হতো। তখন রোম সাম্রাজ্যে সবকিছু বন্ধ থাকত কয়েক দিন। ধনী-গরিব ছোট-বড় সবাই ভেদাভেদ ভুলে যেত। সে সময় অবশ্য যিশুর অনুসারীরা এ উৎসবকে বিধর্মী উৎসব বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল। তখন ২৫ মাচ কে মহান দিন হিসেবে ঠিক করা হতো। যে দিন স্বর্গ ও মর্তের স্রষ্টা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর তার মহাদূত গ্যাব্রিয়েল কে কুমারী মেরীর কাছে পাঠিয়ে এই সংবাদ দেন যে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় ও অলৌকিক ক্ষমতায় কুমারী মেরী গর্ভবতী হবেন এবং ঈশ্বরের পুত্রকে গর্ভে ধারণ করবেন। তার নাম রাখা হবে যিশু। কুমারী মেরী গর্ভবতী হওয়ার নয় মাস হিসাবে ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন। ৩৩৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রোমান বর্ষপঞ্জিতে ২৫ ডিসেম্বরকে বড়দিন হিসেবে উৎযাপনের নির্দেশনা দেয়া হয় বলে জানা যায়। রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিষ্ট ধর্ম রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করলে দিনে দিনে বড়দিন প্রাণ পেতে শুরু করে। দিন ও তারিখের মতভেদ থাকলেও যিশু খ্রিষ্টের মাহাত্ম্য স্বমহিমায় উজ্জ্বল। যিশু যে প্রেমের বাণী, মানবতার বাণী উচ্চারণ করেছিলেন তা আজো মানুষের চলার পথের দিশারী হয়ে কাজ করছে। ক্ষমাই ছিল যিশুর মূল প্রেমের বাণী। মৃতু্যর পূর্ব মুহূর্তেও যিশু বলেছিলেন- পিতা ওরা জানে না ওরা কি করছে, ওরা অবুঝ ও অজ্ঞান। তুমি ওদের ক্ষমা করে দাও। যিশু বলেছিলেন- তোমার প্রতিবেশীর জন্য তাই কামনা কর, যা তুমি নিজের জন্য চাও। তিনি বলতেন, সবাইকে ক্ষমা কর। তিনি বলতেন, যতক্ষণ সবাইকে তুমি ক্ষমা করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি স্বর্গে প্রবেশ করবে না। ঈশ্বর তাকেই ক্ষমা করেন, সবাইকে ক্ষমা করে। জন্মদিন মানে আগের ভুলগুলো শুধরে জীবনকে নতুনভাবে সাজানো। যিশুর জন্মদিন যেন প্রত্যেক খ্রিষ্টানের জন্মদিন। এদিন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা নিজের এবং সবার মুক্তি কামনা করে। এস ডি সুব্রত :কবি ও প্রাবন্ধিক