যোগ্য প্রাথীের্ক মনোনয়ন

রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে উন্নত করবে

প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চন বাঙালি জাতির দ্বারপ্রান্তে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই নিবার্চনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে দেশব্যাপী ব্যাপক গণসংযোগ শুধু হয়েছে। রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রাথীর্রা দেশজুড়ে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। তবে ত্যাগী এবং পরীক্ষিত নেতারা মনোনয়ন পাবেনÑ প্রতিটি জাতীয় নিবার্চনের মতো এবারও এমন প্রত্যাশা করছেন রাজনৈতিক দলের নেতাকমীর্রা। পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের কেন্দ্রীয় কমান্ডের সঙ্গে সাবর্ক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে অনেকেই অনেকভাবে তদবির চালিয়ে থাকেন, বিষয়টি নিবার্চন এলেই আলোচনায় উঠে আসে। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, মনোনয়নপত্র বিতরণের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যোগ্য প্রাথীর্ বাছাইয়ের কাযর্ক্রম শুরু হয়েছে। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো অনেক জরিপ এবং যাচাই-বাছাই করে জাতীয় নিবার্চনে প্রাথীর্ মনোনয়ন দিয়ে থাকে। একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনেও দলগুলো যোগ্য প্রাথীের্ক দলীয় মনোনয়ন দেবেÑ এমন প্রত্যাশা সঙ্গত কারণেই বাড়ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজনৈতিক দলগুলো যাতে নিবার্চনে সৎ, যোগ্য, দক্ষ প্রাথীর্ মনোনয়ন দেয় এবং ভোটাররা যাতে প্রাথীর্ সম্পকের্ জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দিতে পারেন, সে লক্ষ্যে বাংলাদেশের নিবার্চন সংস্কৃতিতে হলফনামার প্রচলন হয়। যোগ্য প্রাথীর্ আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে সবোর্পরি রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার লক্ষ্যে নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। তবে দেখা গেছে, দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিবার্চনে জিততেই হবেÑ এরূপ মানসিকতা কাজ করে বলে প্রাথীর্ মনোনয়নে অনেক সময় ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পান। বলাইবাহুল্য, সারা দেশে রাজনীতি-নিরপেক্ষ শিক্ষিত ও সচেতন যে জনগোষ্ঠী আছে, তাদের একটা অংশ জেনে-বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। আবার দেশের অধের্ক নারী ভোটারের বেশিরভাগই ঘরে থাকেন, যাদের অধিকাংশ পারিবারিক পরামশের্র ভিত্তিতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। তারা প্রত্যাশা করেন, যারা দেশের সেবায় নিয়োজিত হবেন, আইন প্রণয়ন করবেন, তাদের হতে হবে সৎ ও যোগ্য। প্রাথীর্ নিবার্চনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। স্থানীয় ভোটাররাও সব পযাের্য়র জনপ্রতিনিধির কাছে স্থানীয় উন্নয়ন কমর্কাÐ প্রত্যাশা করেন। জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজনের কারণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য সবার অগ্রাধিকার থাকে স্থানীয় উন্নয়ন কমর্কাÐে। অনেকেই মনে করেন, সৎ, যোগ্য ও সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য সাধারণ প্রাথীর্রা নিবার্চনী মাঠ থেকে ক্রমেই বিদায় নিচ্ছেন। কেননা, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের সঙ্গে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছেন না। নিবার্চন কমিশন নিবার্চনী ব্যয় নিধার্রণ করে দিলেও নিবার্চনের ব্যয় তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশিই হয়ে থাকে। ফলে ধনাঢ্য ব্যক্তি ছাড়া নিবার্চনে অংশ নেয়ও যে সম্ভব নয় এটাই বাস্তবতা। তবে এটাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, সরকারের অধীনে যেমন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন হতে পারে; তেমনিভাবে, রাজনৈতিক দলগুলো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকেই নিবার্চনে প্রাথীর্ হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারে। রাজনৈতিক দলের কমীর্-সমথর্করা দল কতৃর্ক মনোনীত ব্যক্তিকেই সাধারণত ভোট দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে যোগ্য প্রাথীর্ আন্দোলন কিংবা রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করার বিষয়টি তাদের কাছে ততটা বিবেচ্য নয়। সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক দলগুলোকেই এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া কতর্ব্য হয়ে দঁাড়ায়। আমরা বলতে চাই, এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করতে, জনগণের স্বাথের্ আইন প্রণয়নে যিনি সাবর্ক্ষণিক সজাগ থাকবেন এবং রাজনৈতিকভাবে হবেন ত্যাগী, সৎ, দক্ষ এবং শিক্ষিত; এমন ব্যক্তিই হতে পারেন যোগ্য প্রাথীর্। রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত অযোগ্য প্রাথীর্ নিবাির্চত হয়ে যেতে পারেন এবং এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ জনগণÑ রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞ নেতাদের এ ব্যাপারে সচেতন ও সতকর্ থাকা বাঞ্ছনীয়। সৎ ও যোগ্য প্রাথীর্ নিবার্চনে এলে তারা দ্ব›দ্ব-সংঘাত এড়িয়ে চলবেন, ফলে সহিংসতামুক্ত নিবার্চনের যে প্রত্যাশা সেটাও পূরণ হবে, এমন ভাবনা অমূলক নয়। সৎ ও যোগ্য প্রাথীর্ নিবার্চনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করলে; নিবার্চনে যিনি বিজয়ী হবেন তিনি পরাজিত প্রাথীের্দর নিয়ে একসঙ্গে এলাকাবাসীর উন্নয়ন ও অগ্রগমনে কাজ করবেন; যিনি পরাজিত হবেন, তিনি ফলাফল মেনে নিয়ে জয়ী প্রাথীের্ক কাজে সহায়তা করবেনÑ দেশের সাধারণ জনগণের চিরন্তন প্রত্যাশা এমনটি। রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার জাগরণ ঘটলে দেশবাসীর এ প্রত্যাশা পূরণ হওয়াও অসম্ভব নয়। রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞ নেতারা এ ব্যাপারে কাযর্কর উদ্যোগ নেবেনÑ দেশবাসী এমনটি প্রত্যাশা করে।